শিশুর রাগ নিয়ন্ত্রণে মূল ভূমিকা পিতামাতাকেই পালন করতে হয়। আসুন জানা যাক, শিশুর রাগ নিয়ন্ত্রণে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
কোন কারণে শিশু রেগে গেলে পিতা মাতাকে এমন আচরণ করতে হবে যেন শিশুর রাগ প্রশমিত হয়। কখনোই এমন প্রতিক্রিয়া প্রদান করা যাবে না। যাতে শিশু আরও বেশী রেগে যায় বা আপনার আচরণ শিশুর উপর আপনার উদ্যেশ্যের বিপরীত প্রভাব ফেলে। তাই সব সময় খেয়াল রাখতে হবে, এমন অবস্থায় পিতামাতার আচরণ হতে হবে আগুনে জল ঢালবার মতো।
এটা সত্যি যে, আমরা কেউই সব সময় আদর্শ আচরণ করতে পারি না। কিন্তু আমাদের উদ্যেশ্য কখনোই এমন থাকে না যে আমরা আমাদের শিশুর নেতিবাচক আচরণকে পরিবর্তন করতে চাইবো না। তাই মনস্তত্ত্ববিদ গণের মতে, শিশুর সব আচরণকে সঠিকভাবে গাইড করতে হলে প্রথমত পিতামাতাকে ধৈর্য সহকারে সব কিছু পর্যবেক্ষণ এবং তারপর প্রচেষ্টা করতে হবে।
এক্ষেত্রে কখনোই শিশুর উপর উল্টো রেগে গেলে চলবে না। আমাদেরকে বুঝতে হবে কিভাবে আমরা নিজেদেরকে ধীর, স্থির এবং ধৈর্যশীল রাখতে পারি এবং শিশুদের রাগ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারি। শিশু যখন রেগে যাবে, তখন পিতামাতা যে কৌশল গুলোর মাধ্যমে শিশুর রাগ নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস করতে পারে সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হল।
মন দিয়ে শিশুর কথা শোনা
শিশুর রাগ প্রশমন করতে হলে শিশুর মনের কথা সঠিক ভাবে বোঝার প্রয়াস করা অত্যন্ত প্রয়োজন। অধিকাংশ সময় আমরা শিশুর কথা শোনার প্রয়াস না করে নিজের সিদ্ধান্ত শিশুর উপর চাপিয়ে দেই। আমরা এটা চাই যে তারা আমাদের কথা শুনুক যা একেবারেই উচিৎ নয়।
প্রত্যেক পিতামাতার তাদের শিশুর মনে এই বিশ্বাস সৃষ্টি করা উচিৎ যে তারা সব সময় শিশুর পাশে আছে। আর শিশুর মনে এই বিশ্বাস সৃষ্টির জন্য শিশুর মনের কথা সব সময় মনোযোগের সাথে শোনা এবং বোঝার প্রয়াস করা উচিৎ। এতে শিশুর মাঝে অযাচিত রাগের সৃষ্টি হবে না।
ধৈর্য ধারণ করা
শিশু যখন রেগে যাবে তখন তাকে এই ভরসা প্রদান করতে হবে যে সব কিছুই তাদের জন্য করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও তার জন্যই সব কিছু করা হবে। অনেক সময় আমাদের শুধুমাত্র ধৈর্য ধরে কিছু সময় স্থির থেকে তাদেরকে কিছুটা সময় প্রদান করলেই পরিস্থিতি আপনাআপনিই ঠিক হয়ে যায়।
শিশুদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন
শিশুদের সাথে শিশুদের মতো করে মিশতে চেষ্টা করুন। সব সময় পিতামাতা হয়ে অধিক পরিপক্ক আচরণ শিশুর সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করে। আর এই দূরত্ব শিশুর মনে পিতামাতার প্রতি বিরূপ ধারণার জন্ম দেয় এবং অধিকাংশ সময়ে এটি থেকেই ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে শিশু কারণে অকারণে রেগে যায়।
এক্ষেত্রে যদি শিশুর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা যায় তাহলে শিশু তার মনের কথা সহজে পিতামাতার কাছে খুলে বলতে পারে এবং রাগ করার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোর পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়।
অবশ্যই শিশুকে সঠিক এবং ভুলের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টির জ্ঞান প্রদান করতে হবে এবং অকারণে রেগে যাওয়া উচিৎ নয় কিংবা অতিরিক্ত রাগ করা ঠিক নয় সেটিও বোঝাতে হবে। কিন্তু সব কিছুর আগে এটি বিবেচনা করতে হবে যা তারা শিশু।
আপনার মতো সব কিছু বোঝার ক্ষমতা তাদের নেই। মানসিক পরিবর্তনের এই ধাপগুলো অত্যন্ত ধীরে ধীরে সম্পন্ন হয়। তাই শিশুর উপর অযথা ধৈর্যহারা না হয়ে গঠন মূলক আচরণের মাধ্যমে রাগের মতো আচরণগুলো নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা করুন।
লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/creative-development/202107/anger-in-the-moment
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা