মানসিক সুস্থতার জন্য ফেসবুক ছেড়ে দেয়া ভালো। তবে এতে করে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী কম জানার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ও স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকের গবেষণায় এই তথ্য উঠেছে।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট করা কয়েকজন ব্যক্তির ওপর গবেষণা চালিয়ে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন ওই গবেষক দল। এই গবেষণা করতে গিয়ে তারা চার সপ্তাহ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ রাখার জন্য গবেষণা চালানো ব্যক্তিদের ১০২ ডলার দিয়েছিলেন গবেষকরা।
ফেসবুক ব্যবহার না করা ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তারা ফেসবুকবিহীন থাকাবস্থায় আনন্দিত ছিলেন, অনলাইনে কম অ্যাক্টিভ ছিলেন এবং তাদের অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া সাইট কম ব্যবহার করেছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, একমাস ফেসবুকের বাইরে থাকার পর ওই ব্যক্তিদের রাজনৈতিকভাবে মেরুকরণ কম হয়েছে কিন্তু তারা প্রকৃত খবর সম্পর্কে কম জ্ঞাত ছিলেন।
ওই ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভ থাকার কারণে তারা দিনে একঘণ্টার মতো ফ্রি টাইম পেয়েছেন। গবেষণা শেষ হয়ে যাওয়ার পর অধিকাংশ ব্যক্তিই তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রিঅ্যাক্টিভ করেন। যদিও তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কম দেয়া অব্যাহত রাখেন।
ওই গবেষক দলের একজন নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক হান্ট অ্যালকট বলেন, ফেসবুক তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের জীবনে সাধারণভাবে একটি ইতিবাচক দিক। এছাড়া চার সপ্তাহ ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ রাখার জন্য তারা ১০০ ডলার করে চান।
অ্যালকট বলেন, অর্থের এই সংখ্যাটাই বলে দেয় তাদের কাছে এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, আমরা গবেষণা শেষে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম আরও চার সপ্তাহ ফেসবুক ডিঅ্যাক্টিভ রাখার জন্য তারা কত টাকা নেবেন? জবাবে অর্থের পরিমাণ ১০০ ডলারের চেয়ে খুব বেশি হেরফের হয়নি।
অ্যালকট আরও বলেন, যদি ফেসবুক হেরোইন হতো, তাহলে এই পরিমাণটা অনেক কম হতো। কিন্তু ফেসবুকের ক্ষেত্রে বিষয়টা এমন নয়।
গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন, ফেসবুকের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনও কিছু প্রমাণ করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। তারা বলছেন, মানুষজন কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সে ব্যাপারে সচেতন করতেই তাদের এই গবেষণার উদ্দেশ্য।
বরং গবেষণায় দেখা গেছে, বিনোদনের উৎস ও কমিউনিটিতে অ্যাক্টিভ থাকা এবং সামাজিকীকরণের মতো বিভিন্ন দিক বিবেচনায় ‘ফেসবুক ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ সুবিধাদায়ক।’
ফেসবুকের একজন মুখপাত্র বলেন, এই টপিকের ওপর এর আগেও বহু গবেষণা হয়েছে কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারের সুবিধার ব্যাপারে এই গবেষণার ফলাফল ‘উৎসাহব্যঞ্জক।’
তিনি বলেন, আমাদের টিম এসব ইস্যু নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। মানুষজন যাতে তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং অর্থবহ কথোপকথন ও সংযোগের মাধ্যমে প্রোডাক্ট আপডেট করতে পারে, সেজন্য আমরা ফেসবুকে নতুন কিছু টুল চালু করেছি।
তবে অ্যালকট বলছেন, এই গবেষণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ ফেসবুককে ঘিরে এটাই সবচেড়ে বড় অবিন্যস্ত গবেষণা।
তিনি বলেন, এর আগের গবেষণাগুলোয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে- কতক্ষণ ফেসবুক ব্যবহার করলে আপনি কতটা বিষণ্নতায় ভুগবেন? এমন কো-রিলেশন খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে।
এমন গবেষণার মাধ্যমে দেখা যায়, যারা ফেসবুক ব্যবহার করেন তারা অনেক বেশি বিষণ্ন কিন্তু কো-রিলেশনের সমস্যা হচ্ছে এটা কোনও কার্যকারণসম্বন্ধ সৃষ্টি করে না। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারিনি যে, ফেসবুক তাদের বিষণ্নগ্রস্ত করছে নাকি বিষণ্নগ্রস্ত ব্যক্তিরা ফেসবুক ব্যবহার করছে।
ফেসবুক ছেড়ে দেয়া নিয়ে এমন সময় এই গবেষণার ফলাফল সামনে এলো যখন সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিটি রেকর্ড ৬৯০ কোটি ডলার মুনাফা ও উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপে ব্যবহারকারী বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে।
ফেসবুকের সবশেষ আয়ের প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ফেসবুকের অ্যাকাউন্টধারীদের অর্থমূল্য ছিল ১১১.৯৭ ডলার।
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও ব্যবহারকারীদের ডাটা নিয়ে কেলেঙ্কারির পরও এত বিপুল পরিমাণ লাভ হয়েছে ফেসবুকের। ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করা ফেসবুকের বিশ্বজুড়ে মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৩০ কোটি।