খাবার আর মন, দুইয়ের সম্পর্ক পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। যেমন ধরুন, মন ভাল করতে কখনও কখনও এক প্লেট বিরিয়ানিই যথেষ্ট। তাই এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক কীভাবে নির্ধারিত হয়, তা আরও বিশদে জেনে নেওয়া যাক।
মুড পরিচালিত হয় ব্রেনের মাধ্যমে, মস্তিষ্কের মধ্যেকার নিউরোট্রান্সমিটারস দ্বারা। আর এই নিউরোট্রান্সমিটারস কতটা ভারসাম্য রেখে কাজ করবে, তা নির্ভর করে আমরা কী খাচ্ছি, তা হজম হচ্ছে কি না, তার উপরে।
মুড ইজ় ডিসাইডেড বাই নিউরোট্রান্সমিটারস। আর নিউরোট্রান্সমিটার লেভেল নির্ভর করছে আমরা কী খাচ্ছি তার উপরে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সাধারণ ভাবে বলা যায়, ভিটামিন, মিনারেল-সমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীর ভাল থাকবে। কিন্তু নির্দিষ্ট করে বলা যায় না যে, অমুক জিনিসটা খেলে মুড ভাল হয়ে যাবে। আমরা জানি খাবার মনের উপরে নিঃসন্দেহে প্রভাব ফেলে, কিন্তু ছোলা খেলে মন ভাল হবে নাকি আমন্ড খেলে, ওই পর্যায়ের মাইক্রোনলেজ আমাদের এখনও নেই। তাই সাধারণ ভাবে যেটা মনে করা হয়, তা হল স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াটা খুব জরুরি। ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদির মধ্যে থাকা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস শরীর ও মনের জন্য খুবই দরকারি।
মনখারাপ হলে অনেকেই বিঞ্জ ইটিং বা কমফর্ট ইটিং করেন। আবার কেউ কেউ আছেন, এ রকম পরিস্থিতিতে একসঙ্গে অনেক কিছু খেয়ে নেন। তার পর বুঝতে পারেন খাওয়া উচিত হয়নি। তখন হয়তো গলায় আঙুল দিয়ে বমি করলেন, যাকে বুলিমিয়া বলা হয়। এটি একটি ইটিং ডিজ়অর্ডার এবং শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। মনখারাপের কারণে প্রতিনিয়ত বেশি খাওয়ার ফলে ওবেসিটির সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এ সব ক্ষেত্রে এক্সারসাইজ় বাদ পড়ে রোজকার রুটিন থেকে। আর চেহারা খারাপ হলে মনের উপরেও তার প্রভাব পড়ে। পছন্দের খাবার খেলে স্বাভাবিক ভাবেই মন ভাল হয়ে যায়। মনের মধ্যে একটা তৃপ্তিবোধও কাজ করে।
কাজে মনঃসংযোগ বাড়ানোর জন্য বা ঘুম তাড়ানোর জন্য অনেক সময়ে আমরা চা-কফি খাই। এর মধ্যে স্টিমিউল্যান্ট থাকায় বেশি সজাগ হয়ে যাই। ফলে কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ে। তবে এর খারাপ দিকও রয়েছে। যাদের অনিদ্রার সমস্যা রয়েছে, তারা যদি বেশি বার এবং বেশি রাতে চা-কফি পান করেন, তা হলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। ক্যাফেইন রয়েছে এমন পানীয় অধিক মাত্রায় পান করার ফলে বেশি উদ্দীপিত হয়ে গেলে, মনের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। মিষ্টি স্বাদের ফল, যেমন আম-লিচু খেলেও তৃপ্তি হয়। তাই মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করলে দোকান থেকে কেনা মিষ্টি বা কেক-পেস্ট্রির বদলে ফল দিয়ে মেটানো গেলে, তা অনেক বেশি উপকারী। কেক, পেস্ট্রি বা মিষ্টির মধ্যে তো তেমন কোনও পুষ্টিগুণ নেই। টেনশন কমানোর জন্য অনেকেই বিভিন্ন সময়ে মুখরোচক খাবার খেয়ে নেন। তাতে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া যায়। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, সেটা নিয়মিত ভাবে করা হলে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।
খাবার কখনও মন ভাল করতে পারে, আবার কখনও শরীরের ক্ষতিও করতে পারে। সেটা নির্ভর করে কী খাচ্ছি এবং কতটা খাচ্ছি তার উপরে। মনখারাপ হলে অল্প মুখোরোচক খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তা থেকে বেরোনোর জন্য শুধু খাওয়াকেই বেছে নেওয়া হলে, তা অবশ্যই ক্ষতিকারক।
মুড ও ব্রেন পরস্পর সম্পর্কিত। তাই ভিটামিন বি টুয়েলভ, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন, জ়িঙ্ক ইত্যাদি যা ব্রেনের জন্য ভাল, তা মন ভাল রাখতেও সাহায্য করবে। আয়রনের ঘাটতির কারণে অ্যানিমিয়া হয়। এর কারণে কিন্তু ডিপ্রেশনও হয়, ঝিমুনি আসে। তাই আয়রন-সমৃদ্ধ খাবার শরীরে বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্ক, মুড, স্মৃতিশক্তির জন্য প্রয়োজন। করোনার পরে অনেকের শরীর খুব দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাই তাঁদের সুস্থ করে তুলতে জ়িঙ্ক-সমৃদ্ধ ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। জ়িঙ্ক-যুক্ত খাবার অলসতা কাটায়, স্ট্রেস কমায়।
আবার প্রোবায়োটিক শরীরের গাঁট মজবুত রাখে, তাই অ্যাংজ়াইটি কমে। দই কিন্তু প্রোবায়োটিকে ভরপুর। তাই ফল, আনাজ, বাদাম, ডিম, ডাল, মাছ, মাংস… যে সব খাবারে জ়িঙ্ক, সেলেনিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি এগুলো বেশি পরিমাণে থাকে, তা ব্রেন ফাংশন ভাল রাখে, ফলে মন ভাল থাকে। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যে সব খাবারে বেশি, অর্থাৎ যা খেলে ওজন বাড়ে, সে সব খাবার বুঝে খাওয়া উচিত। চেহারা ভারী হয়ে গেলে ক্লান্তি আসে বেশি
তাই খাবার বেছে নিতে হবে এমন ভাবে, যা শরীর সুস্থ রাখবে। শরীর তরতাজা থাকলে মনও থাকবে ফুরফুরে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে