একটি গ্লাসে অর্ধেক পানি থাকলে আপনি এটিকে কিভাবে দেখেন? অর্ধেক খালি নাকি অর্ধেক ভর্তি? যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা বলছে, আশাবাদী ব্যক্তিরা হতাশাবাদীদের চেয়ে অনেক বেশি দিন বাঁচেন।
এই তত্ত্ব মতে, আশাবাদীরা হয়তো নিজেদের আবেগকে অনেক সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন যা তাদেরকে মানসিক চাপের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দূরে রাখে।
মার্কিন গবেষকরা বলছেন যে, হতাশাবাদী ব্যক্তিরা যদি নিজেদের এমন ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে পারেন যেখানে সব ধরণের সমস্যা দূর হয়ে যাবে, এমন দৃষ্টিভঙ্গিও তাদের জন্য উপকারী হতে পারে।
মানুষ কিভাবে আশাবাদী হয় এবং হতাশা বাদীরা জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক থাকতে কি কি করতে পারেন সে বিষয়ে কিছু উপায় সম্পর্কে জানবো আমরা।
“নেতিবাচকতা নিয়ে পিছিয়ে থাকবেন না”
বলা হয় যে, “নদীর অপর পাশের ঘাস সব সময় একটু বেশি-ই সবুজ দেখায়”। কিন্তু এ ধারণা পর্তুগালের লিসবনে থাকা তানিয়া গুয়ার্দাকে তেমন প্রভাবিত করতে পারেনি।
“সবারই সমস্যা থাক। আমার জীবন যেমন, সেভাবেই একে উপভোগ করার চেষ্টা করি আমি। আমার যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট আমি। ভালো স্বাস্থ্য, পরিবার, একজন ভালোবাসার জীবন সাথী আর আমার পছন্দের একটি চাকরী।”
উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা কাটাতে তানিয়া নিজেকে ব্যস্ত রাখেন এর পেছনের সমস্যা খুঁজে বের করা নিয়ে, এবং সেগুলো সমাধান করার পর তিনি কেমন অনুভব করবেন তা নিয়ে ভাবতে পছন্দ করেন তিনি।
তিনি অন্যদের নেতিবাচকতাকে তেমন পাত্তা দেন না। তিনি বলেন, “আমি কখনোই নেতিবাচক ব্যক্তিগত মন্তব্য নিয়ে বেশি ক্ষণ ভাবি না। এগুলোকে আমার পর্যন্ত আসতে দেই না।”
“হাস্যরস বোধ”
কলোরাডোর ভিকি সিসকা, বেশ কিছু মানসিক চাপময় খারাপ সময় পার করেছেন তিনি। কিন্তু তারপরও তিনি আশাবাদী।
“গান আমার আত্মাকে তৃপ্ত করে, হাস্যরস বোধ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নতুন ধারণা দেয় এবং আমার অনেক ভালো বন্ধু আছে যারা আমাকে ভালোবাসে এবং খেয়াল রাখে,” তিনি বলেন।
হাস্যরস বোধ হার্টফোর্ডশায়ারের পিপা কেনেডিকেও ইতিবাচক থাকতে সাহায্য করেছিলো।
তিনি নিয়মিত বিবিসির টিভি সিরিজ ‘ড্যাডস আর্মি টু হেল্প হার গেট থ্রু এ ব্যাড ব্রেক-আপ’ নিয়মিত দেখতেন।
“আমার মনে হয়, আমাদের যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা- এবং অনেক চকলেট- অনেক বেশি সাহায্য করে,” তিনি বলেন।
“নিজের প্রশংসা করুন”
লিভারপুলের সুসানা চ্যাপম্যান বলেন, ছোট থেকে ছোটতর বিষয়ে নিজের প্রশংসা করেন তিনি।
“আমি নিজের মধ্যে থাকা আবর্জনা বের করে দেই। আমার মনে হয় নিজের জন্য এটা খুবই সঠিক এবং সহায়ক,” তিনি নিজেই নিজেকে বলেন।
“খারাপ কিছু নিয়ে চিন্তা করার পরিবর্তে দরকার হলে সারা রাত জেগে ইউটিউব দেখি আমি। আমার মনে হয় যে, অন্তত হাসির কিছু ভিডিও দেখে সময় পার করেছি আমি। আর হাসি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।”
“কষ্টের সময়ও হাসুন”
ডাচ সংস্কৃতিতে একটি প্রবাদ রয়েছে। আর তা হলো: “গেন গ্রোটার ফারমাক ডান লিডফারমাক” অর্থাৎ, “দুর্ভোগের চেয়ে বড় বিনোদন আর কিছু নেই,” এমনটা বলছিলেন নেদারল্যান্ডসের ব্রেডার বাসিন্দা অ্যাড ডি লিউ।
কিন্তু তার মতে তার বাবা তাকে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপস শিখিয়েছেন। আর তা হলো, নিজের দুর্ভাগ্য নিয়ে হাসো। অ্যাড এটি মেনে চলেন এবং বলেন যে, তার জীবন ‘একটি বড় ধরণের আনন্দোৎসব’।
“অনেকগুলো শখ তৈরি করুন”
স্ট্যাফোর্ডশায়ারের কিডসগ্রোভের বাসিন্দা সু ওকলে ডান বলেন, তিনি সব সময় ইতিবাচক আর সুস্বাস্থ্যবান কারণ তিনি তাই করেন “যা তার আত্মায় সুর তৈরি করে।”
তিনি বলেন যে তার সব ইতিবাচকতা আসে তার অনেক ধরণের শখ আর নির্মল বায়ু থেকে।
“এটা আমার জন্য কাজ করে,” সু বলেন। তিনি সব সময়ই “ভয় উদ্রেককারী গল্প এড়িয়ে চলেন যা সূর্য এবং অ্যালকোহল নিয়ে তৈরি হয়।”
“ব্যায়াম করুন এবং সুস্থ থাকুন”
বন্ধুত্ব আর হাসির মতোই উপকারী আরেকটি বিষয় রয়েছে ইতিবাচক থাকার। আর তা হল শারীরিক ব্যায়াম।
রবিন ব্ল্যাক নিয়মিত যোগ ব্যায়াম এবং ধ্যান চর্চা করেন। তিনি শারীরিকভাবে সবল ও সুস্থ থাকার পরামর্শ দেন।
“কৃতজ্ঞ হোন, তালিকা তৈরি করুন এবং সেগুলো পালন করুন, যা করতে আপনার ভালো লাগে সেগুলোই করুন,” তিনি বলেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা