আমি স্বপ্ন বিলাসী মানুষ: মিল্টন খন্দকার

[int-intro] হতে চেয়েছিলেন অভিনেতা কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় হয়েছেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ। অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা তিনি। একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারসহ অনেক পুরষ্কার ও সম্মাননা। তিনি মিল্টন খন্দকার। মনেরখবর পাঠকের মুখোমুখি হয়ে এবার তিনি জানাচ্ছেন তাঁর মনের কথা, ভালোলাগার কথা, সঙ্গীত নিয়ে ভাবনার কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মদ মামুন। [/int-intro]
[int-qs]সংগীত ও মনের মধ্যে সম্পর্ক কোথায়?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]সংগীতের সাথে মনের সম্পর্কটা এমনই যে, মন ভালো থাকলেও গান শুনতে মন চায় আবার মন খারাপ থাকলেও গান শুনতে মন চায়। একটা ভাঙ্গা হৃদয়ের বড় একটা ঔষধ হলো সংগীত। এক দৃষ্টিতে সংগীতকে আমরা মনের অসুখ সারানোর পথ্য বলতে পারি। মন ও সংগীতকে আলাদা দুটো ভাগ করা মুশকিল।[/int-ans]
[int-qs]প্রকৃতির সুর আর মানুষের সুরের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]পার্থক্য নেই। বরং বলা যায় যে প্রকৃতি থেকেই সংগীত আহরণ করা হয়। ঝর্ণা থেকে পানি পড়ার যে শব্দ, নদীর চ্ছল চ্ছল যে শব্দ এই শব্দগুলোকেই তো আমরা সংগীতের মাঝে তুলে নিয়ে আসি এবং নিজেদের মতো করে যে যার ছাঁচে ফেলার চেষ্টা করি।[/int-ans]
[int-qs]এজন্যই কি রাগ সংগীতগুলো ভিন্ন ভিন্ন সময়ে শোনার উপযোগী করে তৈরি?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]ভিন্ন ভিন্ন সময়েই যে শুনতে হবে তেমনটি হয়তো না। তবে শাস্ত্রীয় সংগীতের পণ্ডিতগণ একেকটা সময়ের জন্য একেকটা রাগ তৈরি করেছেন। ভৈরবী যেমন সকালে শুনতে ভালো লাগে, শিবরঞ্জনী যেমন দুপুরে শুনতে ভালো লাগে তেমনি ইমন কল্যাণ সন্ধ্যায় শুনতে ভালো লাগে। আবার তার মানে এই নয় যে রাগগুলো অন্য সময়ে শোনা যাবে না, কিন্তু ঐযে প্রকৃতির যে ব্যাপারটা বললাম সেটাই আসলে সর্বক্ষেত্রে। ভোরের বেলার যে স্নিগ্ধতা সেটা তো আর অন্য সময়ে পাওয়া যাবে না। তাই পণ্ডিতগণও ভোরের স্নিগ্ধতা নিয়ের ভোরের রাগ তৈরি করেন।[/int-ans]
[int-quote]বিশ্বায়নের ঢেউটা সম্প্রতি আমাদের গায়ে আছড়ে পড়েছে, যার কারণে সবাইকেই কমবেশি ভিজতেই হচ্ছে। এই কারণে আমরা সামান্য দিশেহারা অথবা আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারছিনা যে কি হবে। তবে আমার বিশ্বাস সময়ের সাথে সাথে আস্তে ধীরে আমরা আবার উঠে দাঁড়াবো। এখন একটু মন্দা ভাব চলছে বলা যায়। অনেকে অনেকে গান লিখছে সুর করছে তবে শ্রোতা ভাগ হয়ে গেছে। ইন্টারনেট অথবা টিভির রিমোটে মাধ্যমে সারা পৃথিবী দেখতে পাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছে কোথায় কি হচ্ছে। যেখানে সমুদ্র থাকে সেখানে পুকুরে কেউ গোসল করতে চায় না। তারপর যখন মানুষ তৃষ্ণার্ত হয় তখন বুঝতে পারে যে তাকে সেই মিঠে পানির পুকুরেই ফেরত যেতে হবে।[/int-quote]
[int-qs]অর্থাৎ প্রকৃতি ও সুর একে অপরের সাথে একেবারে মেলানো?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]শুধু প্রকৃতি বা সুরই নয়। আমার মনে হয় প্রকৃতি সুর সংগীত এবং মন এর তিনটিই একে অপরের সাথে যুক্ত।।[/int-ans]
[int-qs]অঞ্চল বা জাতিসত্তা ভিত্তিতে সংগীতের কিছু স্বতন্ত্র ধারা রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা সংগীতের স্বতন্ত্র ধারা কোনগুলোকে আমরা বলতে পারি?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]আমাদের বাংলা গানের সবচাইতে গর্বের বিষয় হলো আমাদের লোকসঙ্গীত। আমরা যতোই আলোচনা করি, যতোই ফিউশন করি বা যতোই গবেষণা করি শেষ পর্যন্ত আমরা দেখবো যে আমাদের এ অঞ্চলে সবচাইতে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে যে সঙ্গীত সেটা হলো আমাদের লোকসঙ্গীত। [/int-ans]
[int-qs]বিশ্বায়নের যুগে যখন মানুষের মুঠোফোনের মধ্যে সারা বিশ্বের সঙ্গীত তখন সেটি আমাদের লোকসঙ্গীতকে প্রভাবিত করছে কি?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]হ্যাঁ, কিছু প্রভাব তো পড়ছেই। সারা বিশ্বের সংস্কৃতির যেকোনো অংশ আমরা এক ক্লিকে দেখে নিতে পারছি। যেহেতু সংস্কৃতি সঙ্গীত হলো ভালোলাগার ব্যাপার তাই এর মধ্যে অনেকের অনেক অঞ্চলের গান ভালো লাগছে বা উপভোগ করছে। কিন্তু তারপরেও দিনশেষে মানুষ তাঁর শেকড়ের কাছেই ফিরে আসতে চায়। বিশ্বায়নের হাওয়া আমাদের সাময়িক কিছু দিকভ্রান্ত করছে হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে তবে আমি মনে করি সেটা সাময়িক। নিজের ভাষা নিজের সংস্কৃতি মানুষ যতটুকু অন্তর দিয়ে অনুভব করতে পারে অন্য কিছুতে অতটা পারে না।।[/int-ans]
[int-qs]এখন আমাদের লোকসঙ্গীতে বিদেশী বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারের আধিক্য অথবা সুরের ভিন্নতা আনার চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। এটা বিশ্বায়নের সাথে ঠিক কতটা সঙ্গতিপূর্ণ?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]এতে দুটো সমস্যা হচ্ছে। প্রথমত যারা লোকসঙ্গীতকে বিভিন্ন ফিউশন দিতে চাচ্ছে তারা মৌলিক সৃষ্টির জায়গা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং এর কারণে তারা নিজেরা নতুন কিছু তৈরি করতে পারছে না। আর দ্বিতীয়ত বলবো, এভাবে ফিউশন করে বা এক্সপেরিমেন্ট করে সাময়িক হয়তো একটু উন্মাদনা তৈরি হচ্ছে তবে সেটা খুবই ক্ষণস্থায়ী।[/int-ans]
[int-qs]এভাবে লোকসঙ্গীতের পরিবর্তন আমাদের মূল লোকসঙ্গীতের ধারাকে হুমকির মুখে ফেলছে না কি?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]আমাদের লোকসঙ্গীত অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এর ব্যাপ্তি অনেক বড়। আমাদের লোকসঙ্গীত এতোই শক্তিশালী যে আজ হয়তো কেউ একটু পরিবর্তন করে বা একটু অন্যভাবে বা একটু পশ্চিমা ধারায় গাওয়ার চেষ্টা করলো তবে কাল ঠিকই আরেকজন এসে মূল গানটিই গাইবে। এসব পরিবর্তনের চেষ্টা আমাদের শক্তিশালী লোকসঙ্গীতে কোন প্রভাবই ফেলবে না বলে আমি মনে করি। তার চাইতে এগুলোকে আমরা ক্ষণিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলতে পারি।[/int-ans]
[int-qs]বিশ্বায়নের যুগে সবাই চাচ্ছে তার নিজস্ব সংস্কৃতিকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিতে। এখানে আমাদের অবস্থান কি?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]বাংলাদেশে একেবারের দরিদ্রতা দেশের মধ্যে পড়ে। আমাদের সাধ আছে অনেক কিন্তু সাধ্য নেই। তবে আমি আশাবাদী, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং আজ না হোক কাল একদিন আমরা আমাদের সংস্কৃতি সারা বিশ্ব ছড়াতে পারবোই। সাংস্কৃতিক দিক থেকে আমাদের শক্তি অনেক বেশি।[/int-ans]
[int-qs]আপনার দেখা বাংলা সঙ্গীতের সেকাল ও একাল কেমন?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”] বিশ্বায়নের ঢেউটা সম্প্রতি আমাদের গায়ে আছড়ে পড়েছে, যার কারণে সবাইকেই কমবেশি ভিজতেই হচ্ছে। এই কারণে আমরা সামান্য দিশেহারা অথবা আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারছিনা যে কি হবে। তবে আমার বিশ্বাস সময়ের সাথে সাথে আস্তে ধীরে আমরা আবার উঠে দাঁড়াবো। এখন একটু মন্দা ভাব চলছে বলা যায়। অনেকে অনেকে গান লিখছে সুর করছে তবে শ্রোতা ভাগ হয়ে গেছে। ইন্টারনেট অথবা টিভির রিমোটে মাধ্যমে সারা পৃথিবী দেখতে পাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছে কোথায় কি হচ্ছে। যেখানে সমুদ্র থাকে সেখানে পুকুরে কেউ গোসল করতে চায় না। তারপর যখন মানুষ তৃষ্ণার্ত হয় তখন বুঝতে পারে যে তাকে সেই মিঠে পানির পুকুরেই ফেরত যেতে হবে।[/int-ans]
 
[int-qs]মন ভালো থাকা না থাকা কি গানে প্রভাব ফেলে?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]মন ভালো না থাকলে আমি গান করতে পারি না। গানের জন্য আমার দুটি জিনিষ প্রয়োজন হয়, মন ভালো থাকা এবং ভালো ঘুম হওয়া। এই দুটির কোন একটিতে সমস্যা হলে আমার গান হয় না। তাছাড়া ভাবের একটা সম্পর্ক তো রয়েছেই।[/int-ans]
[int-qs]মন ভালো করতে কি করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]মন মনের অজান্তেই কি কি যেন চায়। ঠিক সেই সেই চাওয়া যদি পূরণ করতে পারি তাহলেই আমার মন ভালো হয়ে যায়।[/int-ans]
[int-qs]রাগ হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]খুব রাগ হয়। আমার কেন জানি হঠাৎ হঠাৎ ভীষণ রাগ হয়ে যায়।[/int-ans]
[int-qs]রাগ নিয়ন্ত্রণ করেন কীভাবে?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]এখন নিজে নিজেই চেষ্টা করছি রাগ কমানোর, চেষ্টা করছি রাগ নিয়ন্ত্রণের। সবসময় নিজের মনে ভাবার চেষ্টা করি যে আমি রাগবো না অথবা মানুষকে কটু কথা বলবো না। বলা চলে নিজেই নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা।[/int-ans]
[int-qs]এতে সাফল্য কতটুকু এসেছে?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]মন কথা শোনে, মনকে মনের মতো কথা শোনাতে হয়। অনেকে মনকে কথা শোনাতে পারে না, যা মনে আসে তাই করে বসে যার ফলে সমস্যা হয়।[/int-ans]
[int-qs]অনেকে বলে বা অনেক গানে শুনি যে মনের উপর নাকি কারো নিয়ন্ত্রণ নেই?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]যখন কেউ মনকে যুক্তি দিয়ে এবং সুন্দর দিয়ে বাঁধতে পারে তখনই তার মনে নিয়ন্ত্রণ আসে। এবং জীবনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে মনকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরী।[/int-ans]
[int-qs]স্বপ্ন দেখেন?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]প্রচণ্ড স্বপ্ন দেখি আমি। বলা যায় আমি স্বপ্ন বিলাসী মানুষ।[/int-ans]
[int-qs]স্বপ্নগুলো কেমন?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]স্বপ্ন দেখি মানুষ আমাকে সম্মান করবে শ্রদ্ধা করবে। যে সম্মান থাকবে বিনয়ের সম্মান, ভালোবাসার সম্মান।[/int-ans]
[int-qs]একজন গীতিকার অথবা সুরকার না হলে কি হতেন?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]ইচ্ছে ছিলো অভিনেতা হওয়ার। এসেছিলামও অভিনেতা হতেই কিন্তু কীভাবে কীভাবে যেন গানে চলে আসলাম। তারপর ভাবলাম সৃষ্টিকর্তা আমাকে এটা দিচ্ছেন এটাকে আমার কদর করা উচিত। এখনও ইচ্ছে আছে অভিনয়ের সাথে থাকার, যেহেতু আমাকে দিয়ে অভিনয়টা হলো না তাই ঠিক করেছি নিজে সিনেমা বানাবো।[/int-ans]
[int-qs]স্মৃতি কাতরতা আছে?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]তা তো আছেই।[/int-ans]
[int-qs]স্মৃতিগুলো কেমন?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]ছোটবেলার স্মৃতি, কৈশোরের স্মৃতি, সুন্দর মুহূর্তের স্মৃতি এসব।[/int-ans]
[int-qs]আরেকটি জীবন পেলে কি করবেন?[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]এটা আমিও মাঝে মাঝে ভাবি যে আরেকটি জীবন পেলে কি করবো। মনে হয় এই জীবনে যে ভুলগুলো ছিলো সেগুলো শোধরানোর চেষ্টা করবো। জীবনে অনেক ভুল করেছি আমি। আরেকটি জিনিষ চাইবো, আরেকটি জীবন পেলে যাতে আমি আমার এই মা বাবার ঘরেই জীবনটি পাই।[/int-ans]
[int-qs]সবশেষে পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]এই যে আমার আমার করে আমরা মারামারি হানাহানি করছি এগুলোর কোন দরকার নেই। আমরা যতোই আমার আমার করি ক্ষণিকের দুনিয়ায় কিছুই আসলে আমার নয়। তাই চাই সবাই একটা সুন্দর সুস্থ সমাজ ও জীবন তৈরি করুক। আমার মনে হয় এটা খুব কঠিন কিছু নয়, একটু ত্যাগ করতে জানতে পারলেই এটা করা সম্ভব। আর গানের মানুষ হিসেবে বলতে চাই, আপনারা যারা গান শোনেন তারা সবসময় ভালো গানের সাথে থাকবেন, আমাদের গানকে আমরা যাতে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিতে পারি তা নিয়ে সবার প্রচেষ্টা থাকুক।[/int-ans]
[int-qs]ধন্যবাদ আপনাকে মনের খবর পাঠকদের সময় দেয়ার জন্য।[/int-qs]
[int-ans name=”মিল্টন খন্দকার”]ধন্যবাদ মনের খবরকেও।[/int-ans]

Previous articleলন্ডনে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলায় খেলাধুলা প্রকল্পের আওতায় ফুটবল টুর্ণামেন্ট
Next articleএডিডি'র উদ্যোগে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here