তামাক মুক্ত পৃথিবী ও আমাদের তরুণ সমাজ

মাদকদ্রব্যের মধ্যে যতগুলো উপাদান বা বস্তু আছে তারমধ্যে তামাক কিছুটা ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রম শুধু তার কেমিক্যাল গঠন বা অন্য কোন কারণে নয়। এটি মূলত অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও সংস্কৃতির একটা অংশ মাত্র।

অনেক আগে থেকেই এদেশের মানুষ তামাকের বিভিন্ন রকমের ব্যবহারে অভ্যস্ত। গ্রামে, শহরে এর প্রভাব, জনপ্রিয়তা, মার্কেটিং কোন দিক থেকেই কম নেই। এটি এমন একটি মাদক যা প্রকাশ্যে সবাই গ্রহণ করে কিন্তু লজ্জিত হয় না বরং আরো গর্ব করে সবার সামনে তামাক জাতীয় মাদকদ্রব্য সেবন অনেকটা বাহাদুরির পর্যায়ে চলে গেছে।

অনেকে আবার আগবাড়িয়ে একে মাদকদ্রব্য মানতেই নারাজ! এ নিয়ে বিজ্ঞান মহল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানেও চলে বিস্তর বিতর্ক এবং যুক্তি পাল্টা যুক্তির ঢেউ। তামাক যে একপ্রকার মাদক বা তার চেয়েও খারাপ কিছু এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের সমাজে বহুকাল আগে থেকেই এটি সহজলভ্য এবং সুপরিচিত।

  • তরুণরা একটু বড় হলেই এই তামাকের বানানো সিগারেট বা বিড়ি মুখে নিতে উগ্রদিব থাকে। নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন আর নতুন কিছুর স্বাদ নিয়ে তারা বুঝতে চায় এবং বুঝাতে চায় এরা আজ বড় হয়েছে। বাবা চাচা মামাদের দেখে আসছে কিভাবে উনারে এসব সেবন করছেন!

এরকম সামাজিক সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠা তরুণ সমাজকে এসব ক্ষতিকম দ্রব্য থেকে দূরে রাখা বা তাদেরকে এসবের ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যত ক্ষতির ভয় দেখিয়ে বিরত রাখা অনেকটা অসম্ভব মনে হয় তবে যারা সচেতন অভিভাবক কিংবা যাদের ফ্যামিলি পরিবেশ সুন্দর, পরিবারে নীতি নৈতিকতার চর্চা আছে তাদের জন্য ব্যপারটা খুব সহজ। এবং এসব পরিবারের ছেলে মেয়েরা এসব বাজে বস্তুর নেশায় খুব একটা পরে না আবার পরলেও তাদেরকে তুলে আনা সম্ভব হয়। কিন্তু অভিবাবক সচেতন না হলে কিংবা তিনি যদি নিজেই ধূমপায়ী বা মাদকসেবী হন তাহলে তার নিজের সন্তানকে এসব থেকে দূরে রাখার নৈতিক শক্তি ও মনোবল হারাবেন। তাই এসব মাদক বা তামাকজাত পন্য আমাদের অভিভাকদের বর্জন করতে হবে।

সিগারেট থেকে শুরু করে অন্যান্য তামাক পণ্যের ব্যবহার যেন তরুণদের গ্রাস করতে না পারে সেজন্য আমাদের সবাইকে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে তামাক পন্যের কর বৃদ্ধি, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যুগোপযোগী করন, পাঠ্যসূচিতে তামাক ও মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সমূহের বিস্তারিত বিরবণ সহ নিবন্ধন যুক্ত করা এবং তামাক কোম্পানি গুলোর প্রক্রিয়াজাত,বাজারজাত সহ সকল ক্ষেত্রে আইনের কঠোর প্রয়োগ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

তাই রাষ্ট্রীয়,সামাজিক,পারিবারিক ও ব্যক্তিগতভাবে সবার উচিত আমাদের তরুণদের স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিকদিক বিবেচনা করে মাদক তামাকের ভয়াবহ ভবিষ্যত মহামারি থেকে বাচানোর জন্য চেষ্টা করে যাওয়া এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা।

ডা.রিফাত আল মাজিদ
সদস্য, ডরপ ইয়ুথ ফোরাম
কো-অর্ডিনেটর, র‍্যামফিট কনসাল্টেশন এন্ড সাইকিয়াট্রি সেন্টার, মগবাজার, ঢাকা
জনস্বাস্থ্য বিভাগ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ

এই বিভাগের অন্যান্য খবর পড়ুতে ক্লিক করুন

Previous articleনিজেকে উপস্থাপন করতে পারি না, বুক ধড়ফড় করে
Next articleমায়ের স্পর্শ : শিশুর জন্য কার্যকর থেরাপি

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here