যে ১০ প্রকার চা আপনার দুশ্চিন্তা দূর করবে

অনেকেই আমাদের চা খেতে নিষেধ করে থাকেন। অনেক সময় আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় অতিরিক্ত চা খাওয়া ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। কিন্তু আপনি জানেন কি? কিছু কিছু চা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী। হ্যাঁ, এমন দশ প্রকার চা আছে যা আপনাকে দুশ্চিন্ত থেকে মুক্তি দিতে পারে।

১. প্যাশনফ্লাওয়ার বা ঝুমকোলতা চা

ঝুমকোলতা ফুল এর ইংরেজী নাম প্যাশনফ্লাওয়ার। ভেষজ জাতীয় এই ফুল থেকে চা উৎপাদন হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্যাশনফ্লাওয়ার ঘুমের উন্নতি করতে পারে এবং মানুষকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিতে পারে।প্যাশনফ্লাওয়ার কিছুটা তেতো হতে পারে। তাই চাইলে অন্যান্য চায়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

২. পিপারমিন্ট চা

পিপারমিন্ট বা ফ্রেশ মিন্ট যে শুধুমাত্র মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কাজে লাগে তা কিন্তু নয়, এই ভেষজটি আমাদের সৌন্দর্যবৃদ্ধি করতেও সমানভাবে উপকারী। প্রাচীনকাল থেকে পিপারমিন্ট ওষধি হিসেবে তো বটেই, রূপচর্চার কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে।

এই পাতাটি থেকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে তেল বার করা হয় এবং সেটিই পিপারমিন্ট অয়েল নামে পরিচিত। বর্তমানে পিপারমিন্ট থেকে চা উৎপাদিত হয়। গবেষণা বলছে, পেপারমিন্ট চায়ের গন্ধ বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।

৩. ক্যামোমাইল চা

ক্যামোমাইল এক প্রকার ফুল যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। শত শত বছর ধরে এই ক্যামোমাইল ভেষজ উদ্ভিদ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত এই ক্যামোমাইল ফুলের চা তৈরি করে পান করা হয়। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা থেকে শুরু করে স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে ক্যামোমাইলের চা।

ক্যামোমাইল দীর্ঘকাল ধরে একটি প্রশান্তিদায়ক চা হিসাবে বিবেচিত হয়। উদ্বেগজনিত সমস্যা থাকলে ক্যামোমাইল চা নিয়মিত পান করার পরামর্শ গবেষকদের।

৪. ড্যান্ডেলিয়ন রুট চা

ড্যান্ডেলিয়ন ইউরোপীয় অঞ্চলের শীতকালীন ফুল। এর পাতা থেকে চা উৎপাদন হয়। ড্যান্ডেলিয়ন রুট চা প্রায়শই একটি শান্ত চা হিসাবে বিবেচিত হয় না, তবে আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে চাপে থাকেন তবে ড্যান্ডেলিয়ন চা আপনার যা প্রয়োজন তা হতে পারে। এটি লিভারকে পরিষ্কার করতে এবং পিত্ত উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই যদি আপনার স্ট্রেস আপনার হজম বা আপনার জীবনের সাথে তালগোল পাকিয়ে থাকে তবে ড্যান্ডেলিয়ন চা হতে আপনার প্রতিকার।

৫. আয়ুর্বেদিক ডিটক্স চা

ডিটক্স চা হলো ফলমূলের মিশ্রণে তৈরী এক প্রকার পানীয়। পূর্ণ এক বোতল বা জগভর্তি পানিতে একাধিক মৌসুমি ফলের কয়েকটি টুকরো ফেলে দিন। পুদিনা পাতাও দেয়া যেতে পারে। ফলের মিশ্রণ আর পানি ভর্তি পাত্রটি এবার ফ্রিজে রেখে দিন। সারারাত থাকলে ফলের ফ্লেভারটা পানিতে মিশে যাবে। তারপর পানিটা ছেঁকে পান করতে পারেন, ফলসমেত খেলেও কোনও সমস্যা নেই৷

এই পানিটা গরম করে চা হিসেবে পান করতে পারেন। এটি শরীরকে বিষমুক্ত করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এনে দেয় মানসিক প্রশান্তি।

৬. ল্যাভেন্ডার চা

ল্যাভেন্ডার একটি বর্ষজীবী গুল্ম। এদের ফুলে বেশ গন্ধ থাকে যার কারণে মশা দূরে থাকে। এর ফুল শুকিয়ে চা খাওয়া যায়। এই চা বিষণ্ণতা কমায়।

ল্যাভেন্ডার স্ট্রেস হ্রাস এবং শান্ততার সাথে যুক্ত করা হয়েছে। ইস্ট্রোজেনিক (নারী হরমোন) জনিত বৈশিষ্ট্য বা অন্যা কোনো হরমোনের সমস্যা থাকলে ল্যাভেন্ডার থেকে দূরে থাকার পরমর্শ বিশেষজ্ঞদের।

৭. লেবু বাম চা (মেলিসা চা)

লেমন বাম বা পুদিনা পরিবারের একটি উদ্ভিদ। লেমন বামে লেবুর মতো সুগন্ধ থাকে। এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম মেলিসা অফিসিনালিস। ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ গাছটি সাধারণত ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকায় পাওয়া যায়। এর পাতার রঙ হলুদ বা গাঢ় সবুজ হয়। পাতা হাতে ঘষলে তীব্র এবং গাঢ় গন্ধ পাওয়া যায়। একে বাম পুদিনা, ব্লু বাম, গার্ডেন বাম এবং সুইট বামও বলা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি বিভিন্ন উপায়ে স্ট্রেস কমাতে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে।

এটি পেটের সমস্যা যেমন রিফ্লাক্স, গ্যাস্ট্রাইটিস, বমি বমি ভাব কমায়। এটি মাইগ্রেন এবং মাসিক ব্যথার জন্য উপকারী। ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং তারুণ্য ধরে রাখে। এছাড়াও এটি রক্তে শর্করা এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। হার্ট এবং রক্ত ​​​​সঞ্চালনকে বৃদ্ধি করে। এটি আলঝেইমার, মৃগীরোগ, স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং মনোযোগের ঘাটতির মতো সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করে।

৮. অশ্বগন্ধা চা

অশ্বগন্ধা একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এই গাছের পাতা সেদ্ধ করলে ঘোড়ার মূত্রের মতো গন্ধ বেরোয় বলে একে অশ্বগন্ধা বলা হয়ে থাকে। এই পাতার বৈজ্ঞানিক নাম ‘উইথানিয়া সোমনিফেরা (এল) ডুনাল’। আয়ুর্বেদে একে বলা হয় বলদা ও বাজিকরি। সাধারণত আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রে ঔষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। অশ্বগন্ধার মূল, পাতা, ফুল, ফল, ছাল, ডাল সবই ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে অশ্বগন্ধা চা ভীষণ কার্যকর।

মানসিক ও শারীরিক দুর্বলতা, যেমন মাথা ঝিমঝিম করে ওঠা, সংজ্ঞাহীনতা, অবসাদ প্রভৃতি দূর করে অশ্বগন্ধা। মনোযোগ বাড়ায়। ক্লান্তি দূর করে সঞ্জীবনী শক্তি পুনরুদ্ধার করে।

৯. দুধ থিসল চা

দুধ থিসল ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের একটি উদ্ভিদ। এটি আরেকটি বিষমুক্ত ভেষজ যা শরীরকে টক্সিন থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করতে পারে। দুধের থিসল শরীরের চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। কমায় মানসিক চাপও।

১০. সবুজ চা

সবুজ চা বা গ্রিন টি-র রয়েয়ে আরো অনেক গুণ। সবুজ চা পান যেমন ত্বকের ভেতর থেকে সুরক্ষা দেবে, তেমনি রোদে পোড়া ত্বক স্বাভাবিক করতেও মাখা যেতে পারে সবুজ চা। এতে যেমন ত্বকের রোদ-পোড়া ভাব দূর হবে, তেমনি ত্বকও থাকবে সতেজ। শরীর সতেজ করার পাশাপাশি মনকেও সতেজ করতে সুবজ চা বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারে।

তথ্যসূত্র : সাইকোলজি টুডে অবলম্বনে শাহনূর শাহীন

মূল নিবন্ধ পড়তে ক্লিক করুন  :

/এসএস/মনেরখবর

Previous articleশিশুমনের পূর্ণ বিকাশে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা
Next articleউদ্বেগ দূর করতে গিয়ে আরো বেড়ে গেলে করণীয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here