সম্পর্ক ভাঙায় হতাশায় ভুগছি কী করবো?

প্রশ্ন : যদিও আমি অনেকদিন আগে আপনাদের টেক্সট দিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম সমস্যা সমাধান হবে কিন্তু দিনদিন আমি আরও বেশী হতাশায় ভুগছি। তা-ই এক প্রকার বাধ্য হয়ে টেক্সট দেওয়া। আমার একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিলো, অলমোস্ট ৩ বছর। আমি এখন বর্তমানে অনার্স ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত। আগামী মাসে আমার ইয়ার ফাইনাল। যার সাথে সম্পর্ক ছিলো তার সাথে আমার কলেজ লাইফে পরিচয়। সে মূলত আমার শিক্ষকের বোন।

বলে রাখি আমি বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারী। সে মুসলিম। একপ্রকার সিরিয়াস ছিলাম। যদিও অনেক সমস্যা ছিলো আমাদের মধ্যে। গত বছর নভেম্বর ৫ তারিখ আমার একটা পাবলিক এক্সাম ছিলো, এডমিশন টেস্ট। নভেম্বর ৫ তারিখ ছিলো তার জন্মদিন। তাকে বাসা থেকে তেমন একটা বের হতে দেয় না। সে আমার লোকেশন থেকে মোটামুটি দূরেই থাকে। তবে সেইদিন সে আমার সাথে তার মেয়ে বেস্ট ফ্রেন্ড এর বাসায় দেখা করতে আসার কথা। সে আমাকে টাইম দিয়েছিলো সকাল ১০ টায় কোনো একটা রেস্টুরেন্টে।

কিন্তু সেইদিন আমার পরীক্ষা ছিলো সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা। সেইদিন পরিবহন ধর্মঘট ও ছিলো। আমি তাকে বলেছিলাম তুমি সোয়া ১১টায় ‘ক’ নামক একটি রেস্টুরেন্টে মিট করো। আমি যেমনে পারি লাগলে কুত্তার মতন দৌঁড়ে আসবো। কিন্তু সে তা মানে না। সে বলে সে আমাকে ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্তই তার সাথে দেখা করার সময় এরপর সে তার বেস্ট ফ্রেন্ডের বাসায় থাকবে বিকাল পর্যন্ত।

তো নভেম্বর ৪ তারিখ রাতে এই নিয়ে আমাদের প্রচুর তর্কবিতর্ক চলে একপ্রকার আমি তাকে প্রচুর বাজে ভাষায় গালাগালি করি। নভেম্বর ৫ তারিখ, আই মিন যে-ই সকালে মিট করা নিয়ে এতো কথাবার্তা সেই ভোর রাতেই আনুমানিক ৪ টায় ঝগড়া করে ব্লক মেরে দেই। সে আমাকে সিমে একটা টেক্সট দেয় যে তাকে আর কোনোদিন আমি পাবো না। সেইদিন সকালে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে তার জন্য কেনা কেক এবং গিফট দেওয়ার চেষ্টা করে বাট সে নেয় না। আমার ফ্রেন্ডের সাথে বাজে বিহেভ করে। তার ৪ দিন পর আমি তাকে আনবল্ক করে সরি লিখি, মাফ চাই বাট আমাকে ফিরিয়ে দেয় কিন্তু সেইদিন আমি তাকে ব্লক করি নাই। তার দুইদিন পর সে নিজের থেকেই রাত ২ টায় আমাকে মেসেজ দিয়ে সব ঠিকঠাক করে। বাট ছোটো-ছোটো বিষয়ে মনে হতো সে এক প্রকার বাধ্য হয়ে থাকছে, টুকটাক ঝগড়া হতো, কিন্তু জানুয়ারি ২৫ তারিখ সে আমাকে বলে আমাদের রিলেশনশিপ রিস্ক। এই বলে পারমানেন্ট ব্রেকাপ করে।

আমাদের কোভিডের কারনে প্রায় দেড় বছর দেখা হয়নি। ২০২০ আগস্ট লাস্ট মিট করি। এরপর একদিন মাকে নিয়ে তার বাসায় যাই এরপর আর তার সাথে আলাদাভাবে দেখা হয়নি। এইযে আগে আমার বাসার সমস্যা বলতো যে বের হতে পারতো না, এখন সে কীভাবে বের হয়? গতকাল সে ঈদে (ঈদুল ফিতর) তার বন্ধুদের সাথে মোহাম্মদপুর থেকে মিরপুর ১ যায়, তুরাগ নদী এরপর রবীন্দ্র সরোবর। আমার বাসা পান্থপথ। আমাকে সবসময় সে যেখানে বলতো সেখানেই যেতে রাজি থাকতাম।

  • আমি এইসব কিচ্ছু মানতে পারি না। আমার আগামী মাসে ফাইনাল। আমি সব বুঝি যে আমি ফেল করবো, আমি ফেল করলে আমাকে প্রমোশন দিবে না সেকেন্ড ইয়ারে তাও আমি ফোকাস করতে পারছি না। না আমি কাউকে বলতে পারতেসি না। কান্না করতে পারতেসি। আমার নিজেকে অসহায় লাগে। বাবা-মা ভালো প্রতিষ্ঠানে জব করেন, অনেক কষ্ট করেন বাট আমি কখনোই ভালো রেজাল্ট এনে দিতে পারিনাই। আমি সন্তান হিসেবে খুব বাজে পরিমাণে ব্যর্থ। প্রেমিক হিসেবেও ব্যর্থ।

ইভেন একটু আগেও বাবা বকছিলো যে, অনেকগুলো বই কিনেছি, একাডেমিক কিন্তু খুলেও দেখি না-ই। আমি বুঝি না পড়া। কঠিন। মন দিতে পারি না। মাথায় সবসময় ঘুরে তার কথাবার্তা। সে আমার সাথে পারিবারিক রেস্ট্রিকশন এর কথা বলতো এখন সব কোথায়? এদিকে বাসায় ও আমাকে বকে। মৃত্যু কী শ্রেয় নয়? আমি কী করতে পারি?

শব্দ তন্ময় (ছদ্মনাম)

উত্তর : ধন্যবাদ পাঠক আপনার প্রশ্নের জন্য। আপনার প্রশ্ন পড়ে বুঝতে পারছি আপনি খুব হতাশায় আছেন। কারণ, সামনে আপনার পরীক্ষা কিন্তু আপনি পড়াশোনাতে মন দিতে পারছেন না। তাছাড়া রিলেশন সম্পর্কিত সমস্যার কারনেও আপনি খুব দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছেন। প্রথমেই বলবো যেহেতু আপনার রিলেশনটা ৩ বছর ছিলো, মানে অনেকটা সময় এবং আপনি বলেছেন আপনি খুব সিরিয়াস ছিলেন যা আপনার বর্ণনা থেকেও স্পষ্ট বুঝা যায় ; তাই ব্রেকআপ হবার পরেও সেটার প্রভাব আপনাকে কিছুটা কষ্ট দিবে এটাই স্বাভাবিক।

আপনি আপনার বাবা-মায়ের জন্য ভালো রেজাল্ট এনে দিতে পারছেন না বলেও আপনার মধ্যে হীনমন্যতা কাজ করছে। আপনি কাউকে কিছু শেয়ার করতে পারছেন না, কান্নাও করতে পারছেন না; সবকিছু আপনার নিজের মধ্যে চেপে রেখে আপনি চরম অস্থিরতায় ভুগছেন।

  • এ মুহুর্তে আপনার পরিবারের কেউ বা খুব বিশ্বস্ত কোন বন্ধুর সাহায্য নিতে পারেন যার কাছে সবকিছু শেয়ার করে কিছুটা হালকা বোধ করতে পারেন। এছাড়া রিলাক্সেশন বা শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করে দেখতে পারেন। পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে মাইন্ডফুলনেস এক্সারসাইজ করতে পারেন।

পরীক্ষার রেজাল্ট কি হবে সেটা না ভেবে পড়া শুরু করার চেষ্টা করা,একসাথে দীর্ঘসময় জোর করে পড়ার চেষ্টা না করে বিরতি দিয়ে পড়া, সহজ ও পছন্দের বিষয়গুলো শুরুতে ধীরে ধীরে পড়া; পড়ার বিরতির মাঝের সময়টুকু একটু ডিপব্রেথ করা,ঠান্ডা পানি খাওয়া বা কয়েকমিনিট রুমে বা বারান্দায় হেঁটে আবার পড়তে বসার চেষ্টা করা এভাবে করে দেখতে পারেন।আশা করি উপকার পাবেন।

সবচেয়ে ভালো হয় কোন একজন অভিজ্ঞ সাইকোলজিস্টের সাথে সরাসরি কথা বলে চিকিৎসা নেয়া। কারণ, শুধু প্রম্নের মাধ্যমে অনেকসময় সবকিছু জানা সম্ভব হয় না।

পরামর্শ দিয়েছেন,
ডা. মাহজাবীন আরা শান্তা

মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে monerkhaboronline@gmail.com এ মেইল করতে পারেন অথবা মেসেজ করতে পারেন মনের খবর ফেসবুক পেজের ইনবক্সে এবং 01844618497 হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে। এছাড়া মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন সংগ্রহ করতে কল করুন : 01797296216 এই নাম্বারে।

/এসএস

Previous articleবয়স্কদের ওপর পারিবারিক সহিংসতার প্রভাব ও করণীয়
Next articleসিডনিতে প্রবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য সেমিনার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here