ডা. মো. আব্দল্লাহ ছায়ীদ
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
প্রমথ চৌধরী ‘সাহিত্যে খেলা’ নামের এক প্রবন্ধে বলেছিলেন, ‘মানুষের দেহমনের সকল প্রকার ক্রিয়ার মধ্যে ক্রীড়া শ্রেষ্ঠ, কেননা তা উদ্দেশ্যবিহীন। ওই প্রবন্ধে তিনি ‘উদ্দেশ্যবিহীন’ বলতে আনন্দদায়ক বোঝাতে চেয়েছেন। তার মতে, খেলা উদ্দেশ্যবিহীন এবং আনন্দদায়ক বলেই কলকাতার টাউন হলের দেশহিতকর বক্তৃতার চেয়ে গড়ের মাঠে ফুটবল খেলা দেখতে মানুষ বেশি যায়।
কবি গোলাম মোস্তফা লিখেছেন ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে’। আজকে যারা শিশু তাদের হাতেই থাকবে একদিন দেশকে পরিচালনা করা ও এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব। তাদেরকে তাল মিলিয়ে চলতে হবে আধুনিক যুগের সাথে, আধুনিক বিশ্বের সাথে, আধুনিক যুগের দর্শনসূমহের সাথে যেমন যুক্তিবাদ, মানবকেন্দ্রিক মতবাদ, ইহলৌকিক মতবাদ, নারীর প্রতি মর্যাদাবোধ, ব্যক্তি-স্বতন্ত্রবাদ ইত্যাদির সাথে।
এই প্রতিযোগিতামলক বিশ্বে তারাই ঠিকে থাকবে যারা সময়ের সাথে নিজেকে, নিজের চিন্তাকে পরিবর্তন করতে পারবে এজন্য শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধির সাথে সাথে সঠিক মানসিক বিকাশ প্রয়োজন। শিশুমনের সঠিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন আনন্দময় শৈশব।
হাদীস শরিফে বর্ণিত আছে ‘পিতা-মাতার ওপর সন্তানের অধিকার হলো তাকে লেখাপড়া শিক্ষা দেবে, সাঁতার শিক্ষা দেবে এবং তিরন্দাজি ও অসি চালনা শিক্ষা দেবে’।
শারীরিক শক্তি, মানসিক চিন্তা-চেতনা ও বুদ্ধিমত্তা বিকাশের অনেকগুলো মাধ্যমের অন্যতম মাধ্যম হলো খেলাধলা। খেলাধুলা সুস্থ শরীর গঠন, সঠিক ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও মানসিক বিকাশে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।
খেলাধুলার বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে যেমন ইনডোর গেইম, আউটডোর গেইম। মাঠের খেলাধলা শিশুদের শরীরে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়, আমাদের মন যেহেতু শরীরেরই অংশ তাই শরীরের যত্ন নেয়ার মাধ্যমে মনের যত্ন নেয়া হয়ে যায়।
পড়াশুনার পাশাপাশি রুটিনমাফিক খেলাধুলার অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। খেলাধুলার অভাব, খেলার মাঠের অভাবে শিশুরা প্রযুক্তির অযৌক্তিক ব্যবহার করে চরম মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে।
করোনা মহামারি সময়ে শিশুরা তুলনামূলকভাবে কোভিডে কম আক্রান্ত হয়েছে ঠিকই কিন্তু মোবাইল আসক্তি অনেক ক্ষেত্রে নেশাদ্রব্যের আসক্তির পর্যায়ে গিয়ে চিন্তা, আবেগ, আচরণে এমনভাবে অস্বাভাবিকতা এসেছে যে অনেককে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত হতে হয়েছে।
পড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা শিশুকে নানা পরিস্থিতি সামাল দিতে শেখায়, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়, পরাজয় মেনে নিতে শেখায়, উপস্থিত বুদ্ধি বাড়ায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে।
মনের পরিচর্যার অনেকগুলো পদ্ধতির একটি হলো খেলাধুলা। মনের সঠিক পরিচর্যা অপরাধপ্রবণতা কমায়, আবেগ ও যুক্তির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে বাস্তবতাকে মেনে নিতে সহায়তা করে। শিশুরা যদি খেলাধুলার সঠিক পরিবেশ না পায় তাহলে বিকল্প হিসেবে জায়গা করে নিবে।
অনলাইন গেমস, কার্টন, টিকটক ও লাইকির মতো প্রোগ্রামগুলোর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বেড়ে যাবে। যা শিশুদের ভাষা বিকাশ ও ব্যক্তিত্ব বিকাশে প্রভাব ফেলবে। যেটা শিশুর জন্য, পিতামাতার জন্য, দেশের জন্য কারো জন্য মঙ্গলজনক নয়।
পরিশেষে বলা যায়, শিশুদের সুস্থ মন ও সুস্থ ব্যক্তিত্বের জন্য প্রয়োজন খেলাধুলা এবং তা হতে হবে অভিভাবক বা শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ তত্ত্বাবধানে।
লেখক : ডা. মো. আব্দল্লাহ ছায়ীদ, [এমবিবিএস; এমডি (সাইকিয়াট্রি)]
সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ- নর্থ ইস্ট মেডিক্যাল কলেজ, সিলেট।
সূত্র : মাসিক মনের খবর ফেব্রুয়ারি ২২’ সংখ্যা
মাসিক মনের খবর প্রিন্ট ম্যাগাজিন সংগ্রহ করতে চাইলে কল করুন : 01797296216 এই নাম্বারে। অথবা মেসেজ করুন পেজের ইনবক্সে। লেখা পাঠাতে পারেন monerkhaboronline@gmail.com বা 01844618497 নাম্বারে।
/এসএস/মনেরখবর