গত শনিবার ২৮ তারিখে রাজধানীর “এবিসি আর্লি লার্নিং ডে কেয়ার সেন্টার”-এ অনুষ্ঠিত হলো একটি সময়োপযোগী কর্মশালা—“হেলদি প্যারেন্টিং অ্যান্ড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট” শীর্ষক সচেতনতামূলক আয়োজন। কর্মশালাটি পরিচালনা করেন মনোবিজ্ঞানী ও “সোনারতরী” প্রতিষ্ঠাতা ফারজানা ফাতেমা (রুমী)।
শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে মনোবিজ্ঞানী ফারজানা ফাতেমা (রুমী) কর্মশালার শুরুতেই অংশগ্রহণকারী অভিভাবকদের প্রশ্ন করেন—“আজ থেকে ১৫ বছর পর আপনি আপনার সন্তানকে কোথায় দেখতে চান?” এই প্রশ্নের মাধ্যমে বাবা-মায়েদের সন্তান গঠনের পরিকল্পনায় নিজ নিজ ভূমিকাকে আত্মসমালোচনার আলোকে দেখতে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, “অভিভাবকত্ব শুধুমাত্র লালন-পালনের নাম নয়, এটি একটি সুসংগঠিত প্রক্রিয়া—যার মাধ্যমে শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং জ্ঞানগত বিকাশ নিশ্চিত করা যায়।”
কর্মশালায় ফারজানা ফাতেমা (রুমী) চার ধরনের প্যারেন্টিং স্টাইল নিয়ে আলোচনা করেন—Authoritarian, Authoritative, Permissive ও Uninvolved। এর মধ্যে Authoritative প্যারেন্টিং-কে তিনি আদর্শ অভিভাবকত্ব হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই পদ্ধতিতে বাবা-মা সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সম্মাননীয় সম্পর্ক গড়ে তোলেন, যা শিশুর আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্ব গঠনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তবে তিনি সতর্ক করেন, অভিভাবকদের কর্মব্যস্ততার কারণে সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগের জায়গা যেন সংকুচিত না হয়ে পড়ে। টক্সিক প্যারেন্টিং, শাস্তি, পজিটিভ রিইনফোর্সমেন্ট ও নেগেটিভ রিইনফোর্সমেন্ট নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন এবং এসবের প্রভাব শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কেমন হয়, তা ব্যাখ্যা করেন।
শিশুর বয়স অনুযায়ী শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়েও তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেন। অংশগ্রহণকারী অভিভাবকদের জন্য ভিডিও প্রদর্শন ও খেলাধুলাভিত্তিক বাস্তব অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে কর্মশালাকে আরও ইন্টারঅ্যাকটিভ করে তোলা হয়।
প্রশ্নোত্তর পর্বে আলোচনায় অংশ নেন এবিসি আর্লি লার্নিং ডে কেয়ার সেন্টারের ডিরেক্টর ও প্রাক-শৈশব বিকাশ বিশেষজ্ঞ সোনিয়া ফারজানা আকরাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. ইরেশ সারোয়ার। সার্বিক সহায়তায় ছিলেন ফারজানা রুপা, জাকিয়া ইয়াসমিন লিনা এবং দিশা আনোয়ারা। কর্মশালার শেষভাগে ফারজানা ফাতেমা (রুমী) বলেন, “Blood is thicker than water—রক্তের সম্পর্কই জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই অনুভূতি নিয়ে যদি পরিবার গড়া যায়, তবে প্রতিটি বাবা-মা-ই সন্তানের জন্য রোল মডেল হয়ে উঠতে পারেন।”
উপস্থিত অভিভাবকদের সরব অংশগ্রহণ এবং প্রাণবন্ত আলোচনার মাধ্যমে কর্মশালাটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এই কর্মশালাটি আধুনিক অভিভাবকত্বের চ্যালেঞ্জ এবং বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা পরিবেশন করেছে। ফারজানা ফাতেমা রুমীর উপস্থাপনা ছিল কার্যকর, আবেগপ্রবণ এবং তথ্যবহুল। বিশেষ করে ফারজানা ফাতেমা (রুমী)’র বক্তব্যের শেষ প্রান্তে “Blood is thicker than water” প্রবাদ ব্যবহার করে পরিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়া উপস্থিত অভিভাবকদের মাঝে গভীর প্রভাব ফেলে।
অংশগ্রহণকারীদের সরব উপস্থিতি এবং মতামত প্রমাণ করে, এমন কর্মশালার প্রয়োজনীয়তা এখন সময়ের দাবি। ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদী প্যারেন্টিং কোর্স বা ফলোআপ সেশন আয়োজন করলে অভিভাবকরা আরও বেশি উপকৃত হবেন বলে মত দিয়েছেন অনেকেই।
আরও পড়ুন-