আমাদের সবার মাঝেই কিছু কিছু আচরণের অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে। তাই বলে সবাইকেই মানসিক রোগী বলা যাবে না। ব্যক্তির আচরণে যখন লক্ষণীয় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়, বিশেষ করে আবেগ প্রকাশে পরিবর্তন আসে এবং সেটা দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড প্রভাব ফেলে তখন বুঝতে হবে সেই ব্যক্তি মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ।
মানসিক রোগ অনেক ধরনের হয়ে থাকে। কিছু মানসিক রোগ মৃদু ধরনের এবং শুধুমাত্র দৈনন্দিন জীবনে সামান্য প্রভাব ফেলে; যেমন কিছু ফোবিয়া (অস্বাভাবিক ভয়), মানসিক চাপ বা উদ্বেগ ইত্যাদি।
আবার কিছু মানসিক রোগের ধরন এতটাই গুরুতর যে, একজন ব্যক্তির হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। মানসিক রোগের উপসর্গগুলি রোগ, পরিস্থিতি এবং অন্যান্য কারণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। যেকোনো মানসিক রোগই ব্যক্তির আবেগ, চিন্তাভাবনা এবং আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই মানসিক রোগ চেনার উপায় হিসেবে সাধারণত ব্যক্তির যেসব লক্ষণ বা উপসর্গগুলি চিহ্নিত করা হয় সেগুলো হলো :
● দৈনন্দিন সমস্যা বা মানসিক চাপ মোকাবেলা করতে অক্ষমতা।
● সামান্য বিষয়ে অতিরিক্ত ভয় বা উদ্বেগ প্রকাশ করা।
● মেজাজের পরিবর্তন অর্থাৎ হঠাৎ করে বেশি উত্তেজিত হয়ে ওঠা।
নিজেকে সবার কাছ থেকে সরিয়ে রাখা বা গুটিয়ে রাখা; অর্থাৎ সামাজিক সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়া।
● টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মন খারাপ করে থাকা।
● অন্যদের সঙ্গে একেবারে কথা বলতে না চাওয়া বা সবার সাথে ঝগড়া করা।
বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা (ভ্রম), প্যারানইয়া বা হ্যালুসিনেশন; কোনো গায়েবি আওয়াজ বা কথা শুনতে পাওয়া।
● অকারণে অন্যদের সন্দেহ করতে শুরু করা।
গোসল বা দাঁত মাজার মতো নিয়মিত প্রাত্যহিক কাজ করা বন্ধ করে দেয়া বা নিজের প্রতি যত্ন না নেয়া।
● ঘুমের সমস্যা; অর্থাৎ ঘুম না হওয়া, কমে যাওয়া বা বেড়ে যেতে পারে।
● খাদ্যাভ্যাসে বড়ো পরিবর্তন; অর্থাৎ খাবারে অরুচি তৈরি হওয়া বা রুচি বেড়ে যাওয়া।
● বাসার, অফিসের বা পেশাগত কাজের প্রতি অনীহা তৈরি হওয়া বা আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
● যেসব কাজে আনন্দ পাওয়া যায় সেসব কাজে নিরানন্দ ও আগ্রহ কমে যাওয়া।
● নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করা বা সবকিছুতে নিজেকে দায়ী মনে করা।
● সিদ্ধান্তহীনতা বা মনোযোগ কমে যাওয়া এবং খুব তীব্র হলে আত্মহত্যার চিন্তা, পরিকল্পনা ও চেষ্টা করে।
● অতিরিক্ত শুচিবায়ুগ্রস্ত হয়ে ওঠা।
● কখনো কখনো রোগের লক্ষণগুলি শারীরিক সমস্যা হিসাবে প্রকাশ পায়; যেমন পেটে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, মাথাব্যথা বা শরীরের অন্যান্য অংশে ব্যথা ইত্যাদি।
এছড়াও বুকে চাপ লাগা, শারীরিক দুর্বলতা, মাথা ঘুরানো, শরীর, হাত-পা জ্বালা-পোড়া, শ্বাস-প্রশ^াসে অসুবিধা হওয়া, বুকে ব্যথা অনুভব করা, বমি বমি ভাব হওয়া ইত্যাদি লক্ষণও মানসিক রোগের কারণে হতে পারে।
তবে এই লক্ষণগুলোর মানেই যে কারো মানসিক রোগ হবে, তা নয়। তবে এসব উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা গেলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলা উচিত। একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞই ব্যাক্তির প্রকাশিত লক্ষণগুলি বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারবেন যে, এটি কোনো মানসিক রোগ কিনা এবং এক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেয়া উচিত কিনা।
লিখেছেন,
মাহজাবীন আরা শান্তা
অ্যাসিস্ট্যান্ট কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট
সূত্র : ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সংখ্যা।
লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে ক্লিক করুন এখানে :
- আপনার কপি সংগ্রহের জন্য কল করুন : 01797296216, নিয়মিত পেতে গ্রাহক হতে চাইলে কল করুন : 01865466594 এই নাম্বারে।
/এসএস/মনেরখর/