মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
মাদকাসক্তি একটি দীর্ঘমেয়াদী মানসিক রোগ। বৈজ্ঞানিক ভাবে বলতে গেলে এটি একটি “ক্রনিক রিলাপ্সিং ব্রেইন ডিসঅর্ডার”। সাধারণত কিশোর ও তরুণদের মধ্যে মাদকাসক্তি বেশি দেখা যায়, তবে বয়সকরাও যে মাদকাসক্তিতে আসক্ত হন না এমন নয়। অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যাক্তিকে মাদকে আসক্ত হতে দেখা যায় আবার অনেকে তরুণ বয়সে আসক্ত হয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে যান।
তরুণদের ওপর মাদকাসক্তির যেমন খারাপ প্রভাব রয়েছে বয়স্কদের ওপরেও এর প্রভাব ঠিক ততখানি নয় বরং কিছু বেশিই রয়েছে। মাদকাসক্তি বয়স্ক ব্যক্তিদের কিভাবে ক্ষতি করে সে বিষয়ে একটু জেনে নেয়া যাক।
পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিরা তরুণ প্রজন্মের জন্য আদর্শ হয়ে থাকেন। এই বয়সে যদি কোনো ব্যক্তি মাদকে আসক্ত হন তবে তার খুব বিরূপ প্রভাব পরিবারের তরুণ সদস্যদের উপরে পড়ে এমনকি পরিবারের তরুণ সদস্যরা আসক্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের দেখে কৌতুহলী বা উৎসাহিত হয়ে মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়তে পারে।
বয়স্ক ব্যক্তির মাদকাসক্তির কারণে পারিবারিক কাঠামোতেও ভাঙন ধরতে পারে অথবা পারিবারিক সৌহার্দ্য নষ্ট হতে পারে।
আসক্তির কারণে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি তার পরিবারের সদস্যদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা হারাতে পারেন এমনকি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারেন।
আসক্তির কারণে বয়স্ক ব্যক্তি তার কর্ম ক্ষমতা দ্রুত হারাতে পারেন ফলে অবসরের সময়ের অনেক আগেই তাকে তার পেশাগত এবং পারিবারিক দায়িত্ব হতে অব্যাহতি নিতে হতে পারে। ফলশ্রুতিতে পরিণত বয়সে আর্থিক সংকটের সম্ভাবনা জোরালো হতে পারে।
আসক্তির কারণে সারা জীবনের সঞ্চয় বা জমানো অর্থ বিনষ্ট হতে পারে।
বয়স্ক ব্যক্তিরা সাধারণত নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থতায় ভুগে থাকেন। যেমনঃ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের প্রদাহ মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল কমে যাওয়া, রক্তের চর্বি বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। মাদকাসক্তির কারণে এ ধরনের অসুস্থতা আরো তীব্র হতে পারে। ফলে চিকিৎসা ব্যয় যেমন বাড়তে পারে তেমনি বাড়তে পারে ভোগান্তি।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে বয়স্ক ব্যক্তিদের নানা ধরনের ঔষধ সেবন করতে হয়। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অষ্টিও আর্থাইটিস, হৃদরোগ ইত্যাদি নানা ধরনের রোগের ঔষধ তাদের নিয়মিত খেতে হয়। মাদকাসক্তির কারণে এসব ঔষধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে আবার নানা ধরনের অস্বাভাবিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।
মাদকাসক্তির কারণে বয়স্ক ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা খুব দ্রুত কমে যেতে পারে। ফলে পরিণত বয়সে পরিবারের অন্য সদস্যদের উপর বোঝা হয়ে পড়তে পারেন। আর এতে করে তিনি নিজেও যেমন ভোগান্তির সম্মুখীন হবেন ঠিক তেমনিভাবে তার পরিবারও ভোগান্তির মুখে পড়তে পারে।
সবশেষে বলা যায় যে, মাদকাসক্তি একজন বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যুকে ত্বড়ান্বিত করতে পারে। একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন, আর তা হলো, মাদকাসক্তি একটি জটিল মানসিক ব্যাধি। এর চিকিৎসা পদ্ধতি জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদি। চিকিৎসার সন্তোষজনক ফলাফলও খুব বেশি নয়।
পশ্চিমা কিছু গবেষণায় দেখা যায়, মাদকাসক্তির চিকিৎসার পরে মাত্র এক বছরের মাথায় শতকরা ৮৫ জন ব্যক্তি পুনরায় মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন।
সুতরাং, আসক্ত হয়ে পড়ার পর কোনো ব্যক্তির চিকিৎসা করার চেয়ে মাদকাসক্তি প্রতিরোধ করাই উত্তম। আসুন, আমরা সবাই মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই এবং একটি মাদক মুক্ত দেশ গঠনে অঙ্গীকারাবদ্ধ হই।
লেখক : ডা. শাহরিয়ার ফারুক অনিক
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
রেজিষ্ট্রার, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া।
সূত্র : মাসিক মনের খবর মার্চ ২০২২ সংখ্যা।
- মাসিক মনের খবর প্রিন্ট ম্যাগাজিন সংগ্রহ করতে চাইলে কল করুন : 01797296216 এই নাম্বারে। অথবা মেসেজ করুন পেজের ইনবক্সে। লেখা পাঠাতে পারেন monerkhaboronline@gmail.com বা এই 01844618497 হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে।
/এসএস/মনেরখবর/