আপনার মন খুব শক্তিশালী। যদি আপনি বেশিরভাগ মানুষের মতই হন, তবে কিভাবে ভাবেন – তা নিয়ে সম্ভবত খুব কম সময় ব্যয় করেন। আসলে চিন্তা নিয়ে আর কে চিন্তা করে।
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল- আপনি নিজের সম্পর্কে যেভাবে ভাবেন, আপনার নিজের বাস্তবতা সেভাবেই গড়ে ওঠে। যদি নিজের যোগ্যতা বা সক্ষমতা সম্পর্কে অশুদ্ধ ধারণা আঁকেন মনে, তবে আপনি নিজেই আপনার সম্ভাবনাকে সীমিত করে ফেললেন।
চিন্তা, বিশ্বাস ও ব্যবহারের মধ্যে সম্পর্ক
আপনার নিজস্বতার চক্রে আপনার চিন্তাই মূল প্রভাবক। আপনি যা ভাবেন, তা সরাসরি আপনার অনুভূতি এবং ব্যবহারকে প্রভাবিত করে। যেমনঃ আপনি যদি নিজেকে ব্যর্থ ভাবেন, তবে মনে ব্যর্থতার অনুভূতিই জাগবে। এমনকি আপনি একজন ব্যর্থ মানুষের মত আচরণ করবেন। এতে নিজেকে ব্যর্থ ভাবা ভ্রান্ত বিশ্বাসটাই আরও বাড়বে।
দেখা গেছে, কেও হয়ত নিজের পেশাগত দক্ষতা নিয়ে সন্দিহান। হয়ত প্রায়ই একথাও বলেন যে, পেশায় কোনো উন্নতি করতে পারবেন না। কিন্তু নিজের সম্পর্কে এই সিদ্ধান্তই তাকে বেশি পরিশ্রম করা থেকে অনুৎসাহিত করে। পরিশ্রমের অভাবই হয়ত তার চাকরিতে প্রোমোশনে বাঁধা।
আবার হয়ত কেও নিজেকে অসামাজিক ভাবেন। কোনো সামাজিক আড্ডায় গেলে কোনো এক কোনায় গিয়ে বসে থাকেন। ফলে কেও যখন তার সাথে কথা বলে না; তার অসামাজিক ভাবার ভ্রান্ত বিশ্বাস বেড়ে যায়।
আপনার বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হয়
যখন আপনি নিজের সম্পর্কে ধারণা গড়ে তোলেন, আপনি দুটি কাজ করেন। প্রথমত সেই ধারণার পক্ষে প্রমাণ খুঁজতে থাকেন, দ্বিতীয়ত ধারণার বিরুদ্ধের অভিজ্ঞতা, চিন্তা, তথ্য, প্রমাণকে অগ্রাহ্য করেন বা কমাতে থাকেন।
যেমনঃ যিনি নিজেকে ব্যর্থ ভাবেন, প্রতিটি ভুলকে প্রমাণ হিসেবে দেখবেন যে তার ধারণা সত্য। এমনকি যখন কোনো কিছুতে তিনি ভাল করেন, তাকে সৌভাগ্য বলে মনে করেন।
একটু ভালভাবে ভাবলেই বুঝতে পারবেন যে- মূলত আপনার আত্মবিশ্বাসের বা দক্ষতার অভাব আপনাকে পেছনের দিকে টানছে না। প্রকৃতপক্ষে আপনার বিশ্বাস আপনার পূর্ণ সম্ভাবনার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
একটা ইতিবাচক মনোভাব গড়ার অর্থ কাঙ্খিত ফলাফলের আরও বেশি সম্ভাবনা। এর মানে অবশ্য এই না যে, ইতিবাচক চিন্তার কোনো জাদুকরী ক্ষমতা আছে। কিন্তু আশাবাদী মনোভাব আপনার আচরণকে গঠনমূলক করে। আপনার সাফল্যের সম্ভাবনাকে বহুগুন বাড়িয়ে দেয়।
চ্যালেঞ্জ করুন আপনার নেতিবাচক ধারণাকে
নিজের সম্পর্কে আপনার ধারণার দিকে মনোযোগ দিন। হয়ত নিজেকে অদক্ষ, অযোগ্য ভেবে বসে আছেন। অথবা নিজেকে ভাবছেন একজন খারাপ নেতা। নিজেকে মনে করিয়ে দিন, এসব ভ্রান্ত বিশ্বাস দিয়ে নিজের সম্ভাবনাকে সীমিত বা নষ্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই। শুধু কিছু ভাবছেন বলেই তা সত্য হয়ে যাচ্ছে না এমনি এমনি।
সুসংবাদ হচ্ছে- আপনি আপনার চিন্তার ধরন পাল্টাতে পারবেন চাইলে। আপনার দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টাতে পারবেন। পারবেন আপনার জীবনকে পাল্টাতে। আপনার ভ্রান্ত বিশ্বাসকে কাটাতে দুটি উপায় প্রচন্ড কার্যকরী।
বিপরীত প্রমাণ খুঁজুন
আপনার নিজের সম্পর্কে ভ্রান্ত নেতিবাচক বিশ্বাসের সাথে বিপরীত এমন যে কোনো বিষয় যে কোনো সময় লিখে রাখুন বা মনে রাখুন। এই ভিন্নতার প্রতি স্বীকৃতি আপনাকে মনে করিয়ে দেবে যে, আপনার বিশ্বাস সব সময় সত্য নয়।
চ্যালেঞ্জ করুন বিশ্বাসকে
আপনার নিজের প্রতি ধারণা সম্পর্কিত নেতিবাচক বিশ্বাসগুলো কতটা সত্য- তা যাচাই করতে আচরণের পরীক্ষা চালান। যদি নিজেকে যথেষ্ট যোগ্য না মনে হয়, তবে এমন কিছু করুন যাতে নিজেকে মূল্যবান মনে হবে। তা হতে পারে কোনো বিশেষ দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা বা কোনো অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করা। যদি নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের সীমার বাহিরে যাওয়ার ব্যাপারে নিজের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা রেখে থাকেন, তবে ভেঙ্গে ফেলুন। করুন না হয় এমন কিছু যাতে কিছুটা অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ হয়। আপনার সীমা বাড়তেই থাকবে। বাড়তেই থাকবে।
চর্চার মাধ্যমে নিজেকে ভিন্নভাবে চিন্তা করাতে প্রশিক্ষণ অবশ্যই সম্ভব। আপনি আপনাকে সীমিত করে দেয়া সেইসব ফালতু বিশ্বাসকে ঝেড়ে ফেলবেন। পূর্ণ সম্ভাবনাময় গোছানো মানুষে পরিণত হবেন আপনি।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে