সমাজ, পিতামাতা এবং শিক্ষকদের মাঝে সচেতনতার অভাবে শিশু-কিশোররা যথাযথ সহানুভূতি পাইনা

একজন শিশু-কিশোর মনোরোগ চিকিৎসক হিসেবে আমার পেশাগত জীবনে প্রতিদিন হাসপাতালে এবং চেম্বারে প্রায় ২৫ শতাংশ শিশুকে তাদের পিতামাতা অতিচঞ্চলতার সমস্যার জন্য নিয়ে আসেন।

একজন অতিচঞ্চল শিশুর মধ্যে সাধারণত যেসব লক্ষণ দেখতে পাইঃ

  • গভীর মনোযোগ না দেওয়ায় প্রায়ই স্কুল কার্যক্রমের সহজ বিষয় পালনে ভুল করে যে কারনে তাদের পরীক্ষার ফলাফলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়।
  • লম্বা সময় কোনো কাজে মনোযোগ দিতে না পারার কারনে স্কুলে ও বাসায় শিশুটি অন্য বাচ্চাদের সাথে তাল মেলাতে পারেনা।
  • ধারাবাহিক নির্দেশনা বা কার্যক্রম অনুসরণ করতে না পারা।
  • গুছিয়ে কাজ করতে না পারা
  • সামান্য শব্দ বা গোলমালেই মনোযোগ ভিন্ন দিকে আকৃষ্ট হওয়া।
  • অধিক মনোযোগ প্রয়োজন এমন কাজ এড়িয়ে যাওয়া।
  • সহজে কোনোকিছ ভুলে যাওয়া।
  • অতিরিক্ত চঞ্চলতা, না ভেবে কাজ করা, অমনোযোগীতার লক্ষণ হিসেবে হাত বা পা দ্বারা অঙ্গভঙ্গি(পা নাড়ানো, নখ খুটা) প্রদর্শন করে।
  • নির্দিষ্ট জায়গায় বেশীক্ষণ বসে থাকতে অস্বস্তিবোধ করার কারনে স্কুলে ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারেনা।
  • নীরবতা বজায় রাখা প্রয়োজন এমন পরিবেশেও প্রচুর চিৎকার-চেঁচামেচি করে সবাইকে বিরক্ত করা।
  • কারোর কথা শেষ করতে না দিয়ে নিজে কথা বলা শুরু করা
  • তার পালা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অসুবিধা হয় যেমন লাইনে অপেক্ষা করা
  • প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই উত্তর দেয়া।
  • ধৈর্য্যের অভাবে তড়িঘড়ি করে কোনো কিছু করতে গিয়ে ভুল করে ফেলা।

 

আসলে সমাজ, পিতামাতা ও শিক্ষকদের মাঝে সচেতনতার অভাবে এই শিশু-কিশোররা যথাযথ সহানুভূতি পাইনা, যে কারনে রোগটি জটিলতার দিকে যায়। এডিএইচডিতে আক্রান্ত বাচ্চাদের যদি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা না হয়, তবে পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্যাগুলো হলো কনডাক্ট ডিসঅর্ডার (আচরণগত সমস্যা), মুড ডিসঅর্ডার (মেজাজ-মর্জিগত সমস্যা), অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার (মানসিক উদ্বিগ্নতা) এবং (লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি) শেখার অক্ষমতা।

এটি অবশ্যই একটি রোগ। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়, কাউন্সেলিং এবং ঔষধ এর মাধ্যমে এর জটিলতাগুলোকে কমিয়ে আনা সম্ভব। আসলে সচেতনতার অভাবে অন্য বাচ্চারা এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে দুষ্টু বা অবাধ্য শিশু হিসেবে আচরন করেন।

ওদের জন্য যেসব সুবিধা বা সহায়তা থাকা দরকার বলে আমি মনে করি। তা হলো- প্রথমত সচেতনতা তৈরি এবং বাড়ীতে ও স্কুলে তাকে সবার অন্তর্ভুক্ত করা, অল্প বয়সেই রোগ নির্ণয়, চিকিৎসার আওতায় আনা, পিতামাতার জন্য বিশেষ কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করা এবং অতিচঞ্চল শিশুদের জন্য কার্যকর ঔষধ সহজলভ্য করা ইত্যাদি। এই সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের সঠিক চিকিৎসা আর সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে পারলে অনেক ভবিষ্যৎ জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ খান

চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট বিশেষজ্ঞ

সহযোগী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি বিভাগ

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতাল।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

Previous articleসাবেক প্রেমিকাকে ফিরে পেতে চাইলে যা করবেন
Next articleমানসিক চাপ কমান ৫টি উপায় মেনে চলে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here