বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আত্মহত্যার বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ এবং প্রকাশ করেছে। বিবিএস-এর হিসাব মতে, বর্তমানে দেশে প্রতি লাখে ৮ দশমিক ৫ জন আত্মহত্যা করছেন। দেশে প্রতিবছর প্রায় ১৪ হাজার মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এটাকে ২০৩০ সালের মধ্যে ২ দশমিক ৪ শতাংশে কমিয়ে আনার টার্গেট নির্ধারণ করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে সামাজিকভাবে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছে বিবিএস।
বিবিএস সূত্র জানায়, বর্তমানে (২০২০ সালের জরিপ) প্রতি লাখে ৮ দশমিক ৫ জন আত্মহত্যা করেন। সে সময়ে দেশের মোট জনসংখ্যা ধরা হয় ১৭ কোটি ১৬ লাখ। ২০২০ সালে সারাদেশে মোট ১৩ হাজার ৮১৪ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের গড় প্রায় সমান।
২০১৯ সালে প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। তখন দেশের মোট জনসংখ্যা ধরা হয়েছিল ১৬ কোটি ৫৯ লাখ। সে হিসাবে ওই সময়ে দেশে মোট জনসংখ্যার ১২ হাজার ৯৫৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছিলেন। এতেই স্পষ্ট হয়, দেশে আত্মহত্যার হার বাড়ছে।
২০১৫ সালে দেশে প্রতি লাখে ৭ দশমিক ৬৮, ২০১৬ সালে ৭ দশমিক ৮৪, ২০১৭ সালে ৩ দশমিক ৭৯ ও ২০১৮ সালে ৭ দশমিক ৬৮ জন আত্মহত্যা করেছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত লাখে আত্মহত্যার হার ৭ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এটা এখন ৮ জনের ওপরে চলে এসেছে।
২০২১ সালের প্রথম ১০ মাসে দেশে মোট মৃত্যুর কিছু কারণ খুঁজে বের করে বিবিএস। ১০ মাসে যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ৫ হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তখন ১১ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। মহামারির এ সময়ে দেশে শুধু হার্ট-অ্যাটাক, হার্ট-ফেইলিওর ও হৃদরোগে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে ৮ লাখ লোক আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৬ জন। ২০১৪ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন৷ আর পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে, বছরে গড়ে ১০ হাজার মানুষ ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষপান করে আত্মহত্যা করেন৷ এর বাইরে ঘুমের ওষুধ সেবন, ছাদ কিংবা উঁচু স্থান থেকে লাফিয়ে পড়া কিংবা রেললাইনে ঝাঁপ দেওয়ার মতো ঘটনাগুলোও বিরল নয়।
‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২০’ জরিপে মানুষের মৃত্যুর কারণগুলো খুঁজে বের করেছে বিবিএস।
বয়স্ক মানুষ হার্ট অ্যাটাকে বেশি মারা যাচ্ছে, বাড়ছে আত্মহত্যাও: ৬০ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুহার হিসাব করলে হার্ট অ্যাটাক প্রথমে। মোট মৃত্যুর ২৩ দশমিক ৮ শতাংশই হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। এর পরে রয়েছে ব্রেন স্ট্রোক ১১ দশমিক ৫, শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ১১, হার্ট ডিজিস ৬, অ্যাজমা ৫ দশমিক ২, হাই ব্লাড প্রেশার ৩ দশমিক ৭, ডায়াবেটিস ৩ দশমিক ৩, কিডনি রোগে ২ দশমিক ৯, লিভার ক্যানসার ২ দশমিক ৮, প্যারালাইসিসে ২ দশমিক ২, ব্লাড ক্যান্সারে ১ দশমিক ৯, নিউমোনিয়া ১ দশমিক ৫ ও স্টমাক ক্যান্সারে ১ শতাংশ মানুষ মারা যান। এসব রোগের বাইরে অন্য কারণে দেশের দশমিক ২ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়।
অপরাপর কারণের মধ্যে আত্মহত্যা, খুন, সাপের কামড়, সড়ক দুর্ঘটনা ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু অন্যতম। বিবিএস মানুষের মৃত্যুর ১০০টি কারণ উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম আত্মহত্যা। সামনে বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস জরিপের মাধ্যমে পৃথকভাবে আত্মহত্যা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করবে সংস্থাটি। এখন পুলিশের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বিবিএস এসডিজি ট্র্যাকারে আত্মহত্যার রিপোর্ট ইনপুট দিয়ে থাকে। সামনে এ নিয়ে পৃথকভাবে কাজ করার পরিকল্পনা সংস্থাটির।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এসডিজি ফোকাল পয়েন্ট আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে নানা কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। এ হার প্রতি লাখে ৮ দশমিক ৫ জন। এটি আমরা ২০২৫ সালে ৩ দশমিক ৫ ও ২০৩০ সালে ২ দশমিক ৮ জনে নামিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। তবে এটা কারোর একার পক্ষে সম্ভব নয়, সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জোর দিতে হবে। জনস্বাস্থ্যে মানসিক স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিবিএস ভবিষ্যতে আত্মহত্যা জরিপ প্রকাশ করবে বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের আওতায়’।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে