ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা বা যৌন অক্ষমতার কারণে বৈবাহিক জীবনে অশান্তি নেমে আসে- যার পরিণাম হতে পারে বিবাহবিচ্ছেদ।
যেকোনো বয়সে ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের চিকিৎসা করা যায় এবং এ সমস্যায় জর্জরিত অনেক পুরুষ যারা চিকিৎসা গ্রহণ করছে তারা স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ায় ফিরে আসছে। ইরেক্টাইল ডিসফাংশন দূর করতে বিশেষজ্ঞদের দেওয়া পরামর্শ তুলে ধরা হলো।
আপনার ওজন হ্রাস করুন
গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্থুলকায় পুরুষদের ইরেক্টাইল ডিসফাংশন সমস্যা বেশি হয়। যদি আপনি আপনার আদর্শ ওজনের চেয়ে ২০ শতাংশ ভারী হন, তাহলে কয়েক পাউন্ড ওজন কমানোর কথা বিবেচনা করুন।
ফিট শরীর কেবলমাত্র ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের সমস্যা কমায় না, আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি করে। একজন পুরুষ যতবেশি শারীরিকভাবে ভালো অনুভব করবে, সে ততবেশি নিজেকে যৌনসঙ্গমের জন্য ফিট মনে করবে।
ফোরপ্লে খেলুন
রিল্যাক্স হওয়ার একটি উপায় হচ্ছে, সঙ্গীকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে ফোরপ্লে। লিঙ্গ উত্থিত হচ্ছে কিনা এ চিন্তা বাদ দিয়ে একে অপরকে উপভোগ করুন। ত্বক হচ্ছে শরীরের সবচেয়ে বড় সেক্সুয়াল অর্গান, পেনিস নয়।
নিজেকে পর্যাপ্ত সময় দিন
কোনো পুরুষ বয়স্ক হলে তার পক্ষে লিঙ্গ খাড়া হওয়ার মতো উত্তেজিত হতে বেশ সময় লাগতে পারে। ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সের পুরুষদের লিঙ্গ উত্থিত হতে কয়েক সেকেন্ড সময় নেয় এবং ত্রিশ থেকে চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষদের ক্ষেত্রে এক বা দুই মিনিট সময় নিতে পারে।
কিন্তু এক বা দুই মিনিট পরও ষাটোর্ধ্ব কোনো পুরুষের লিঙ্গ উত্থিত না হওয়ার মানে এই নয় যে সে যৌনক্রিয়ায় অক্ষম। তার দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। বীর্য নির্গত হওয়ার পর আবার লিঙ্গ খাড়া হওয়ার সময়ের পরিসর বয়সভেদে ভিন্ন হয়।
নিয়মিত সঙ্গম করুন
গবেষণায় পাওয়া গেছে, যারা সপ্তাহে একবারও যৌনসহবাস করেনি তাদের মধ্যে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন সমস্যা সপ্তাহে একবার যৌনসহবাস করা পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ ছিল। গবেষকরা সিদ্ধান্তে আসেন যে, নিয়মিত যৌনসঙ্গম পুরুষকে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন থেকে রক্ষা করে।
সীমিত করুন অ্যালকোহল
অ্যালকোহল যৌনসহবাসের আকাঙ্ক্ষা জাগায় কিন্তু পারফরম্যান্স হরণ করে। কারণ অ্যালকোহল হচ্ছে নার্ভাস সিস্টেম ডিপ্রেস্যান্ট। এটি উত্তেজনাকর প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ করে এবং উত্তেজনার বিপরীত অবস্থা সৃষ্টি করে।
এমনকি ককটেল আওয়ারের সময় দুটি ড্রিংক উদ্বেগের কারণ হতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অত্যধিক অ্যালকোহল হরমোন ভারসাম্যহীনতার কারণ হবে। দীর্ঘদিন অ্যালকোহল স্নায়ু ও যকৃত ড্যামেজ হতে পারে।
তরমুজ খান
লাল ও রসালো তরমুজ হতে পারে নতুন রোমান্টিক ফুড। তরমুজের ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ভায়াগ্রার মতো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এ রসালো ফলে সাইট্রুলাইন থাকে যা শরীরের রক্তনালীকে রিল্যাক্সে রাখে। এর ফলে আপনার হার্ট, সারকুলেটরি সিস্টেম এবং ইমিউন সিস্টেম উপকার পেয়ে থাকে।
ওষুধ নির্বাচন করুন
ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের মূল কারণ হতে পারে প্রেসক্রিপশন ওষুধ অথবা ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ যেমন- অ্যান্টিহিস্টামিন, ডায়ুরেটিক, হৃদরোগের ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ অথবা ঘুমের ওষুধ। সব পুরুষদের ক্ষেত্রে এসব ওষুধের প্রতিক্রিয়া একই রকম নয়।
পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষদের ক্ষেত্রে ওষুধ প্ররোচিত ইরেক্টাইল ডিসফাংশন সর্বাধিক কমন। প্রায় ১০০টি ওষুধ শনাক্ত করা হয়েছে যা ইরেক্টাইল ডিসফাংশন ঘটাতে পারে। যদি আপনি সন্দেহ করেন যে আপনার ওষুধের কারণে এ সমস্যা হচ্ছে, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন এবং জেনে নিন যে ওষুধের ডোজ বা ওষুধ পরিবর্তন করতে হবে কিনা।
খেয়াল রাখুন ধমনীর দিকে
পেনিস হচ্ছে ভাসকিউলার অর্গান বা সংবহনতান্ত্রিক অঙ্গ। যা আপনার ধমনীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তা পেনিসের দিকে রক্তপ্রবাহকেও বিঘ্নিত করতে পারে। আটত্রিশোর্ধ্ব সকল পুরুষের পেনিসের দিকে রক্ত সরবরাহ করা ধমনী কিছুটা সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। তাই আপনি কি খাচ্ছেন তাতে মনোযোগ দিন।
ধূমপান থেকে মুক্ত থাকুন
ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের এক গবেষণায় গবেষকরা অধূমপায়ী লোকদের দুটি দলে ভাগ করেন- একদলকে নিকোটিন চুয়িংগাম এবং অন্যদলকে প্ল্যাসেবো চুয়িংগাম চিবাতে বলা হয়। যারা নিকোটিন চুয়িংগাম চিবিয়েছে তাদের যৌন উত্তেজনা প্ল্যাসেবো চুয়িংগাম চিবানো পুরুষদের তুলনায় ২৩ শতাংশ কমে যায়।
রিল্যাক্সে থাকুন
লিঙ্গ উত্থানের জন্য মনকে রিল্যাক্সে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার নার্ভাস সিস্টেম দুই রকম মোডে চালিত হয়। একটি হচ্ছে সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম এবং অন্যটি হচ্ছে প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম।
যখন আপনার সিম্প্যাথেটিক নার্ভ নেটওয়ার্ক প্রভাব বিস্তার করে, তখন আপনার শরীর আক্ষরিক অর্থে সতর্ক থাকে। অ্যাড্রিনাল হরমোন আপনাকে ফাইট অথবা ফ্লাইট করার জন্য প্রস্তুত রাখে। স্নায়বিক দুর্বলতা এবং উদ্বিগ্নতা আপনার ডাইজেস্টিভ সিস্টেম এবং পেনিস থেকে রক্ত পেশীর দিকে টেনে আনে, যার ফলে লিঙ্গ উত্থানে বাধা পড়ে।
উদ্বিগ্নতা আপনার সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে উত্তেজিত করে। কিছু পুরুষদের ব্যর্থতার ভয় এতটাই অভিভূত করে রাখে যে তাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে অ্যাড্রিনাল হরমোন নরোপিনেফ্রাইন নিঃসরণ হয়, যা লিঙ্গ খাড়া হওয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
ইরেক্টাইল ডিসফাংশন থেকে রক্ষা পেতে রিল্যাক্সে থাকুন এবং আপনার প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পৌঁছানো সিগন্যাল রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করতে পেনিসের আর্টারি ও সাইনাসকে নির্দেশ দেবে।
তথ্যসূত্র: ম্যানস হেলথ
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে