আমি আইবিএস এর সমস্যায় ভুগতাম

আমি আইবিএস এর সমস্যায় ভুগতাম

আমি ছোট বেলা থেকে খুব লাজুক প্রকৃতির ছিলাম আর আইবিএস এর সমস্যায় ভুগতাম। মেয়েদের সামনে গেলে আমার হাত-পা সব কাঁপত। ১৯৯৭-এর দিকে আমি লক্ষ করলাম কারো সামনে গেলে আমার বুক ধড়ফড় করত, পেটেও কী যেন একটা বুকের মতো ধড়ফড় করত, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসত। আমি পালাতাম। এগুলো নিয়ে আমি চূড়ান্ত দুশ্চিন্তায় ভুগতাম।

১৯৯৭ শেষের দিকে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি সব বুঝতে পারছি কিন্তু কোনো অনুভূতি কাজ করছে না। আমি আমাদের এক পরিচিত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেলাম। উনার চিকিৎসায় ৬ মাস কাটালাম কোনো ফল পেলাম না। অসম্ভব অস্থিরতা, মাথা ভারবোধ নিয়ে দিন কাটাচ্ছিলাম।

এর মধ্যে এলাকার একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয়। পরিচয় হওয়ার ৭/৮ মাসের মধ্যে একদিন ছেলেটা আমার বাসায় আসে। আর বলতে থাকে কেউ ওকে তাবিজ করেছে, ওর অস্থির লাগছে, শরীরের রক্ত চলাচল বাড়ছে। ঐ ছেলে চিৎকার করতে শুরু করল। ওর এভাবে অস্বাভাবিক হওয়া দেখে আমার ভীতি সৃষ্টি হলো, ওর থেকে আমি পালিয়ে থাকতাম।

অপর দিকে আমার আবেগ খুব বেশি, আমি ওর এভাবে জীবনটা শেষ হওয়াও মেনে নিতে পারছিলাম না। যাক ওকে দেখে আমি বুঝতে পারলাম যে আমিও আসলে মানসিক রোগে ভুগছি। ওর অস্থিরতা আর অন্যান্য উপসর্গ আমার সাথে মিলে যায়। এবার আমিও মনোরোগ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলাম।

এভাবে আমি আজ ২৩ বছর যাবত বিভিন্ন মনোচিকিৎসকের চিকিৎসা নিয়ে আসছি। মাঝখানে Rivortil 2 mg খেয়ে মোটামোটি ভালো ছিলাম। ১ বছর আগে দুশ্চিন্তা করলে অস্থির লাগত। আবার ডাক্তারের কাছে গেলাম। কিন্তু আমার মাথায় সারাদিন ঘোরে আমি মানসিক রোগী, আমি পাগল হয়ে যাব।

মন যদি কখনো কোনো কাজে ডাইভার্ট হয় তখন সে কাজ নিয়ে দুশ্চিন্তা এবং উদ্বেগ শুরু হয়। কিছু ভালো লাগে না। খুব বেশি অস্থির লাগে। কী করব যদি দয়া করে পরামর্শ দেন চির কৃতজ্ঞ থাকব। সাইফুল ইসলাম।

পরামর্শ:  আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনি ২৩ বছর ধরে বিভিন্ন মনোচিকিৎসকের চিকিৎসা নিয়েছেন যা একটা লম্বা সময়। তবে আপনার লাজুক প্রকৃতির স্বভাব ও অন্যান্য উপসর্গ থেকে বোঝা যায় আপনি একজন Anxiety Prone ব্যক্তিত্বের লোক এবং সমস্ত উপসর্গ (অস্থিরতা, দম নিতে অসুবিধা, বুক ধড়ফড়, মাথা ভার, ঘুমে সমস্যা ইত্যাদি) পর্যালোচনা করলে দেখা যায় আপনি Mixed anxiety and Depression-এ ভুগছেন।

তবে একটি কথা মনে রাখবেন চিকিৎসা চালিয়ে গেলে আপনি ভালো থাকবেন। চিকিৎসা পদ্ধতি হবে দুভাবেÑসাইকোলজিক্যাল ও মেডিকেশনের মাধ্যমে। সাইকোলজিক্যালের মধ্যে আছে Cognitive Behaviour Therapy, Deep Breathing Exercise and Meditation এবং মেডিকেশনের মধ্যে আছে Anti-anxiety Drug, Anti depressants, Sedateius এবং Low Dose Anti-psychoties।

এই চিকিৎসার জন্য আপনাকে যেকোনো ভালো এবং অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্টের এবং সাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে। তা হলেই আপনি আপনার সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারবেন আশা করি। মনে সাহস রাখবেন, ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন থেরাপির সাহায্য নিতে পারেন। চিকিৎসা লক্ষণ অনুযায়ী এবং follow Up এর মাধ্যমে চিকিৎসা চালাতে হবে। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং মনের খবরের সাথেই থাকুন।

পরামর্শ দিয়েছেন: অধ্যাপক ডা. মহাদেব চন্দ্র মন্ডল

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ,

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

শের-ই-বাংলা নগর, ঢাকা।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleউদ্বিগ্নতা যখন যোগ্যতা প্রমানের মূল বাধা
Next articleমজবুত সম্পর্ক গড়তে পরস্পর যা করতে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here