করোনাকালে শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ এখন সম্পূর্ণ রূপে অনলাইন নির্ভর। এই দূরশিক্ষণ শিশুদের মানসিক অবস্থার উপর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক-ঠিক কেমন প্রভাব ফেলছে সেটি নিয়ে অভিভাবকদের জানা প্রয়োজন।
করোনা মহামারী শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জীবনেই প্রভাব বিস্তার করেছে। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল যার জীবনে পরিবর্তন আসেনি। আমরা সবাই নিজেদের জীবনের পরিবর্তনকে কিছুটা হলেও মানিয়ে নেবার মতো মানসিক সামর্থ্য ধারণ করলেও করোনা মহামারী কালে শিশুরা সব থেকে বেশী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। শিশুরা তাদের চারপাশের পরিবেশ থেকেই শিখতে শিখতে বড় হয়। আর তাদের শিক্ষা গ্রহণের বড় একটি যায়গা জুড়ে থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্ধুরা এবং খেলাধুলা। করোনা কালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুরা এই সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। করোনা কালে তাদের শিক্ষা গ্রহণ যেন সম্পূর্ণ রূপে ব্যহত না হয় তাই দূরশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। কিন্তু এই ব্যবস্থা কি যথাযথ উপায়ে তাদের উপকার করতে পারছে? তাদের মানসিক বিকাশে এই দূরশিক্ষণ কার্যক্রম কিভাবে ভূমিকা রাখছে? এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে কি? আর থাকলে সেগুলি কিভাবে দূর করা যায়? এই প্রশ্ন গুলি প্রতিনিয়ত অভিভাবকদের চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।
শিশুদের দূরশিক্ষণের ইতিবাচক দিক গুলোর মধ্যে মূল দিকটি হল এটি শিশুদের শিক্ষার মূল ধারার সাথে জুড়ে রাখছে এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে অব্যাহত ও রাখছে। শিশুরা কোন রকম শারীরিক ঝুঁকি ছাড়াই শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকতে পারছে। করোনাকালে যেটি সব থেকে বেশী প্রয়োজন। তাছাড়া করোনাকালে দীর্ঘ দিন শিশুরা তাদের সহপাঠীদের থেকে দূরে রয়েছে। এই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শিশুদেরকে তাদের সহপাঠীদের সাথে পুর্নমিলন সম্ভব করেছে। এটি তাদের মানসিক অবস্থার উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করছে। দীর্ঘদিন বাইরে যেতে না পেরে, খেলাধুলা থেকে বিরত থেকে করোনা যে আতঙ্ক, মানসিক চাপ এবং উদ্বিগ্নতা শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে দূরশিক্ষণ সেটির প্রভাব কিছুটা হলেও কমিয়েছে।
অন্য দিকে দূরশিক্ষণ শিশুদের মানসিক বিকাশে অনেক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ও ফেলছে। এর একটি অন্যতম কারণ হিসেবে মনোবিজ্ঞানীগণ উল্লেখ করেছেন দিনের একটি দীর্ঘ সময়ের স্ক্রিন টাইমকে। দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের জন্য শিশুদেরকে দিনের প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা অনলাইনে থাকতে হয়। শিশুরা কোন প্রকার হাঁটা চলা, দৌঁড়ঝাপ করতে পারেনা। ফোন বা ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকতে হয়। তাছাড়া এই অতিরক্ত স্ক্রিন টাইম শিশুদেরকে অতি মাত্রায় ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রতি আসক্ত করে তুলছে। তাই যখনই অভিভাবকেরা তাদের শিশুদের এই স্ক্রিন টাইম কমানোর প্রয়াস করছেন শিশুরা রেগে যাচ্ছে, জিদ করছে। এতে এটা স্পষ্ট যে শিশুদের মানসিক অবস্থা সামান্য নেই। তাদের মাঝে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এক দিকে এই দূর শিক্ষণ ছাড়া অন্য উপায়ে শিক্ষা গ্রহণ এই মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছেনা, একই ভাবে শিশুদের মানসিক অবস্থার উপর এর ইতিবাচকের তুলনায় বেশ নেতিবাচক প্রভাব ও লক্ষণীয়। তাই অভিভাবকদের বিশেষ ভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
শিশুদের শারীরিক বিকাশের সাথে সাথে তাদের মানসিক বিকাশ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হওয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই করোনাকালে কোন কোন বিষয় তাদের মানসিক অবস্থার উপর কেমন প্রভাবফেলছে সেটি নিয়ে আমাদেরকে আরও সচেতন এবং তৎপর হতে হবে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে