শিশুদের মানসিক বিকাশে পিতা মাতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে শিশুদের প্রতি পিতা মাতার ভূমিকা শিশুদের বয়স, এবং মানসিক বিকাশের সাথে সাথে পরিবর্তিত ও বিকশিত হয়।
সময়ের সাথে সাথে যেমন শিশুদের মাঝে পরিবর্তন আসে, তেমনি পিতা মাতার মাঝেও পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তন যদি সামাঞ্জস্যপূর্ণ এবং ইতিবাচক হয় তাহলে সেটি শিশুর মানসিক অবস্থার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে আর যদি উভয় দিকে সামাঞ্জস্য বিধান না হয় তাহলে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হয় এবং ফলাফল হয় নেতিবাচক।
পিতা মাতার প্রতিটি সিদ্ধান্ত এবং কাজ শিশুদের দৈনন্দিন জীবন এবং মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে। তাছাড়া, একটি শিশুর চাহিদা অনুসারেও পিতা মাতার সিদ্ধান্ত এবং কার্যাবলী পরিবর্তিত বা আবর্তিত হয়। একটি শিশুর ছোট বেলায় যখন কথা বলার মতো অবস্থাও থাকেনা তখন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পিতা মাতা তার চাহিদা বুঝে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এ সময়ে পিতা মাতার অবহেলা বা কর্তব্যে গাফিলতি শিশুর জন্য শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সময়ের সাথে সাথে যখন শিশুর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ত্বরান্বিত হয়, পিতা মাতার সন্তানের প্রতি করনীয় এবং লালন পালনের ধরণের মাঝেও পরিবর্তন আসে, বা পরিবর্তন নিয়ে আসতে হয়।
শিশুদের মানসিক বিকাশে পিতামাতার আদর ভালোবাসা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি তাদের নিয়ন্ত্রণ ও গুরুত্বপূর্ণ। আদর, ভালোবাসা যেমন তাদের মাঝে মানসিক শক্তি যোগায়, তেমনি তাদের নিয়ন্ত্রণ শিশুদের আরও সামাজিক এবং পরিপক্ব করে তোলে। তাদের মাঝে ভালো মন্দের জ্ঞান প্রদান করে এবং বয়সের সাথে সাথে তাদের আত্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাও সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে যদি পিতা মাতা শুধু আদর ভালোবাসাই প্রদান করে, কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে শিশু হয়ে উঠতে পারে স্বেচ্ছাচারী, এক রোখা এবং হিতাহিত জ্ঞান শূন্য। আবার যদি শিশুর বয়স এবং বিকাশ বৃদ্ধি স্বত্বেও পিতামাতা তাদের উপর একই ভাবে নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখে তাহলে এর ফলাফল বিপরীত হতে পারে।
আবার, ছোট্ট শিশুকে তার পিতামাতা যেভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, পরিচালনা করতে পারে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে একই ভাবে একই কাজগুলি করতে পারেন না বা করা উচিৎও নয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে ধীরে ধীরে একটি শিশু একটি স্বাধীন স্বত্বায় পরিণত হয় যখন তার নিজস্ব মতামত এবং বিচার ধারা গড়ে ওঠে। এসময় যদি পিতামাতা তাদের নিয়ন্ত্রণ বা পর্যবেক্ষণ শিথিল না করেন তাহলেও এর নেতিবাচক প্রভাব তাদের মনস্তত্ত্ব এবং অনুভূতির উপর পড়ে।
পিতামাতা তাদের সন্তানকে সব সময়ই শিশুর মতো করে দেখেন যাদের ভালো মন্দ সব থেকে বেশী পিতামাতাই বোঝেন। কিন্তু সময়ের সাথে এই ছোট্ট শিশুরা যে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে এবং নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেবার মতো মানসিক অবস্থায় পৌঁছে যায় এটা অধিকাংশ পিতামাতাই মেনে নিতে বা বুঝতে পারেন না। তাদের মাঝে সেই একই আবেগ কাজ করে এবং এর ফলেই মূল বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয়। তাই এটা ভুলে গেলে চলবে না যে সময়ের সাথে সাথে যেমন শিশুদের শারীরিক বিকাশ ত্বরান্বিত হচ্ছে, মানসিক বিকাশ ও ত্বরান্বিত হচ্ছে। তাই এর সাথে সাথে পিতা মাতার আচরণ এবং ভাবনায়ও পরিবর্তন নিয়ে আসা আবশ্যক।
তাই বলা যায়, শিশুদের বিকাশ পিতামাতার দায়িত্ব কর্তব্যে পরিবর্তন নিয়ে আসে, আবার পিতামাতার আচরণ শিশুদের মানসিক বিকাশকে প্রভাবিত করে। উভয়ের মাঝেই সামাঞ্জস্য প্রয়োজন।
সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/parenting-and-culture/202105/changes-in-parenting-children-develop
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে