মানসিক উদ্বিগ্নতা সারিয়ে তুলতে দাদা-দাদীর ভূমিকা

0
70
মানসিক উদ্বিগ্নতা সারিয়ে তুলতে দাদা-দাদীর ভূমিকা

শিশু-কিশোর বা তরুণ তরুণীর মধ্যে মানসিক অসুস্থতা বা উদ্বিগ্নতা দেখা দিলে, সেটা কাটিয়ে উঠতে বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে দাদা-দাদী বা নানা-নানী। এ কারণে শিশু বা অল্পবয়সীদের মধ্যে এমন সমস্যা দেখা দিলে তাদের দাদা-দাদীর সংস্পর্শে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

টেলিফোন হেল্প-লাইন পরিষেবা চাইল্ড-লাইনের প্রতিষ্ঠাতা ডেইম এস্থার রান্টজেন বলেছেন, “যৌথ পরিবারের ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে এবং নিকটবর্তী আত্মীয় স্বজনের সাহচর্যের অভাবে কারণে শিশুদের বেড়ে ওঠা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

তার মতে, শিশুদের, তাদের পিতামহ ও মাতামহদের সঙ্গে দেখা করার আইনগত অধিকার দেয়া উচিত। যেটা কি-না ফ্রান্সে আছে। তিনি বলেন, অনেক বাবা-মা এতোটাই ব্যস্ত থাকেন যে তারা শিশুদের মানসিক চাহিদা পূরণ করতে পারেন না।

চাইল্ড-লাইন পরিচালনাকারী দাতব্য সংস্থা এনএসপিসিসির হিসাব অনুযায়ী, গত দুই বছরে শিশুদের উদ্বেগ কাটাতে সহযোগিতার চাহিদা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি মানসিক উদ্বিগ্নতায় ভূগছে এমন তরুণদের জন্য গত দুই বছরে ২১ হাজারেরও বেশি সেবা দিয়েছে।তারা মূলত টেলিফোনের মাধ্যমে আক্রান্তের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা করে যা প্রাথমিক অবস্থায় অনেককেই আত্মহত্যা থেকেও ফিরিয়ে আনতে পেরেছে।

এ থেকে আন্দাজ করা যায় যে, একজন অপরিচিত মানুষের সঙ্গেও মন খুলে কথা বলতে পারার সুযোগ কতোটা সহায়ক হতে পারে। আর সেই মানুষটা যদি পরিবারের কাছের মানুষ হয়, তাহলে তো কথাই নেই। প্রতিনিয়ত মানসিক উদ্বিগ্নতায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে সেক্ষেত্রে এ ধরণের হেল্প-লাইন পরিসেবা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন ডেম এস্থার। এক্ষেত্রে তিনি পরিবারের ভূমিকাকে সবচেয়ে বড় করে দেখছেন।
ডেম এস্থার বলেছেন, “যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন আমি যৌথ পরিবারে বেড়ে উঠেছিলাম। আমি যে বিষয়গুলো নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম না, সেটা নিয়ে হয়তো পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কথা বলতাম। সেই সুযোগটা আমার ছিল।”

তাই পরিবারগুলোর আসলে বোঝা উচিত যে পরিবারের শিশু বা তরুণ সদস্যদের যথেষ্ট মানসিক সহায়তা দেয়ার মতো অবস্থা তাদের রয়েছে কিনা। যদি না থাকে তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

“মানুষ সারা দিন ব্যস্ত থাকে – অনেকেই দুই থেকে তিনটা চাকরি করে থাকেন, অথবা তারা যেখানে কাজ করছেন সেখানে হয়তো তার পরিবার থাকে না। আবার অনেককেই চাকরির কারণে পরিবারের থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। এমন নানা কারণে দিন দিন পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আবার ছোট পরিবারগুলোর সদস্যরাও সময় দিতে না পারার কারণে এক ধরণের বিচ্ছিন্নতায় ভুগছে।

ডেইম এস্থারের মতে, আজকাল বড় পরিবারগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে এবং পরিবার একীভূত রাখাটাকে এখন আর কেউ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেনা। অথচ এটা সত্যি যে, শিশুদের মানসিক বিকাশে বা উদ্বিগ্নতা কাটাতে এই বড় পরিবারের কোন বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, “যে পরিবারের শিশুরা দাদা- দাদী বা নানা-নানীর সংস্পর্শে বেড়ে ওঠে তারা বুঝতে শেখে যে জীবনকে তারা যতোটা জটিল ভাবে, জীবন এতোটা খারাপ না।”

বর্তমান পরিস্থিতিতে নবীনদের মানসিক সুস্থতার জন্য দাদা- দাদী বা নানা-নানীর সঙ্গে দেখা করাটাকে অধিকার হিসেবে দেখতে চাইছেন ডেম এস্থার। তিনি বলেন, “আমাদের এখন প্রত্যেক শিশুকে তাদের পিতামহ বা মাতামহের সাথে যোগাযোগ রাখার অধিকার দিতে হবে, যেটা কিনা ফ্রান্সে আছে।” ডেম এস্থার এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে দিন দিন বাড়তে থাকা পারিবারিক বিচ্ছিন্নতার বিষয়টি উল্লেখ করেন।

পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে ওই শিশুদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাদের পিতা-মাতামহের অনেক সময় আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। তবে ফ্রান্সের মতো দেশে, সবারই তাদের মাতামহ- পিতামহের সঙ্গে দেখা করার অধিকার রয়েছে। এবং এই নিয়ম যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন ডেম এস্থার।

তিনি বলেন, “ডিউক অব ক্যামব্রিজ এবং ডিউক অফ সাসেক্সসহ উচ্চ মার্গীয় ব্যক্তিরাও এই সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করছেন। পরিবারের বিচ্ছিন্নতা রোধ, সেইসঙ্গে নবীনদের মানসিক উদ্বিগ্নতা কাটিয়ে উঠতে খোলামেলা কথাবার্তার ওপরও জোর দিচ্ছেন তারা।”

ডেইম এস্থারের মতে পরিবারের কেউ যদি মানসিক উদ্বিগ্নতায় ভোগে, এবং দ্রুত যদি এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে যে কারও মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার দেখা দিতে পারে।
সূত্র: বিবিসি

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleমানসিক স্বাস্থ্যের উপর যানজটের কি ধরনের প্রভাব পড়ে?
Next articleবন্ধুহীনরা বেশি বিষণ্ণতায় ভোগে: গবেষণা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here