স্কুল-কলেজ অফিস বন্ধ, জনজীবন পুরোপুরি স্তব্ধ না হলেও রীতিমতো বিপর্যস্ত। কোথাও বেড়াতে যাওয়ার উপায় নেই, গৃহবন্দি হয়েই কাটাতে হচ্ছে সময়! করোনার থাবায় আক্রান্ত গোটা দেশের স্থিরচিত্রটা এই মুহূর্তে এরকমই! বাদ নেই কলকাতাও। এই পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে প্রাপ্তবয়স্করাই অসুবিধেয় পড়েন, সেখানে ছোটদের তো কথাই নেই! করোনার ভয়ে তাদের স্কুল যেমন বন্ধ, তেমনি বাইরে খেলতে যাওয়া, বেড়াতে যাওয়াও বন্ধ! কাজেই বাড়িতে ছোট বাচ্চা থাকলে তার খিটখিটে হয়ে পড়া, ঘ্যানঘ্যান করা খুব স্বাভাবিক!
কীভাবে সামলাবেন বাচ্চাদের? কীভাবে সহজ ভাষায় ওদের বোঝাবেন করোনা ভাইরাস কী এবং তা থেকে বাঁচা কতটা জরুরি? সাহায্য করার চেষ্টা করছি আমরা!
আগে নিজের হোমওয়ার্ক করুন
আপনি নিজে কি করোনার প্রকোপ এবং আক্রান্ত ও নিহতের সঠিক সংখ্যাটা জানেন? পৃথিবী জুড়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যা যা পরামর্শ দিচ্ছেন, যে সব নিয়ম মানতে বলছেন, সে সম্পর্কে কি আপনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল? বাচ্চার সঙ্গে কথা বলার আগে কিন্তু নিজেকে সে সব সঠিক তথ্য জানতে হবে। করোনা নিয়ে প্রচুর ভুল ধারণা ঘুরছে বাজারে, কাজেই কোনটা সত্যি আর কোনটা ভুল সেটা আগে আপনাকেই জানতে হবে। ঠিকঠাক তথ্য হাতে থাকলে তবেই বাচ্চার সমস্ত প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারবেন আপনি।
বাচ্চার বয়সের কথা মাথায় রাখুন
বাচ্চাকে বোঝাতে হবে একদম ওদের মতো করে। আপনার সন্তানের বয়স যদি পাঁচ বছর হয়, তবে একগাদা ভারী ভারী বৈজ্ঞানিক শব্দ ব্যবহার করে তাকে বিভ্রান্ত করবেন না। গল্পের ছলে তাকে বোঝান পরিস্থিতি এখন কতটা গুরুতর। তবে বাচ্চা যেন অহেতুক ভয় না পেয়ে যায় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। অন্যদিকে আপনার সন্তান যদি একটু বড়ো হয়, তা হলে হয়তো নিজের বন্ধুবান্ধবের সুবাদে সে খানিকটা আগে থেকেই জানে। তেমন হলে তার সঙ্গে আরও বিশদে ব্যাপারটা আলোচনা করতে পারেন। বাচ্চাকে উৎসাহ দিন বইপত্র পড়তে, তবে কোনওভাবেই যেন তার কাছে ভুল তথ্য না পৌঁছয় সেটাও নিশ্চিত করুন।
খুব গম্ভীর হয়ে থাকবেন না
আপনি গম্ভীর হয়ে থাকলে সেই স্ট্রেস আপনার সন্তানের উপরেও কাজ করবে। বাচ্চা নিজে থেকে করোনা ভাইরাস নিয়ে কথা বলতে চাইলে কখনওই এড়িয়ে যাবেন না। বাচ্চার সঙ্গে কথা বলুন, পৃথিবীর কোন দেশে কী পরিস্থিতি তার সঙ্গে শেয়ার করুন। তবে এমন কোনও ছবি দেখাবেন না যাতে তার মনে ছাপ পড়ে।
সতর্ক থাকুন অনলাইনে
হাতে অখণ্ড সময় মানেই আপনার সন্তান দিনের অনেকটা সময় ইন্টারনেটে কাটাবে। খেয়াল রাখুন ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্যের শিকার যেন সে না হয়। হোয়াটসঅ্যাপ বা অনলাইনে পাওয়া করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত যে কোনও তথ্য অন্য কোনও বন্ধুকে ফরওয়ার্ড করার আগে যেন সে আপনাকে জানায়, সেটা সন্তানকে বলুন। ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়লে কীভাবে আরও অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, কেন ফেক খবর ছড়ানো উচিত নয়, এ ব্যাপারে তাকে বুঝিয়ে দিন। কোন কোন সূত্র থেকে সে আসল খবরগুলো পাবে, তাও জানিয়ে দিতে পারেন।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
নিজে সন্তানকে বোঝাতে না পারলে চিকিৎসকের সাহায্য নিন, যিনি আপনাদের কোভিড-19-এর বিপদ সম্পর্কে বোঝাতে পারবেন এবং কীভাবে সেই বিপদ প্রতিহত করা যায়, সে সম্পর্কেও সচেতন করতে পারবেন। সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে কথা বলুন। বাচ্চা যদি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে তবে সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলরের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেও দ্বিধা করবেন না!
আশাবাদী থাকুন
শুধু নিজের জন্যই নয়, সন্তানের জন্যও! আপনার আচরণে নিরাশা ধরা পড়লে তা কিন্তু আপনার সন্তানকেও প্রভাবিত করবে। সারাক্ষণ অসুখবিসুখ আর মৃত্যুর খবর আলোচনা করবেন না। বরং ক’জন মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছেন, সে নিয়ে কথা বলুন। নিজে স্বাস্থ্য ও আচরণবিধি মেনে চলুন, সন্তানকেও উৎসাহিত করুন। খুব শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে!