শিশুদের এডিএইচডি (ADHD) প্রতিরোধে করণীয়

0
65

শিশুদের মানসিক সমস্যা’র মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো এডিএইচডি (ADHD) বা এটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার। এই সমস্যা শিশুদের আচরণে বিরাট পরিবর্তন আনে। তাদেরকে অসামাজিক ও বিশৃঙ্খল করে তোলে।  শিশুদের মানসিক সমস্যা এডিএইচডি (ADHD) প্রতিরোধে কয়েকটি উপায় পাঠকের জন্য তুলে ধরা হল:
শান্ত থাকতে হবে
এডিএইচডি’তে আক্রান্ত শিশুরা প্রায়ই অনেক অগ্রহণযোগ্য আচরণ করে থাকে। শিশুদের এমন আচরণে তার সাথে রাগান্বিত আচরণ করা যাবে না। এতে শিশুর উপর আরও বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আপনার সন্তান যদি হোমওয়ার্ক করতে না চায় তাহলে তার সাথে রাগান্বিত আচরণ না করে তার সমস্যার কারণ জানতে চান। এবং সেভাবে তাকে সময় দিয়ে তার পাশে থাকুন। কখনো কখনো হোমওয়ার্ক ছাড়া তার অন্য কোন কাজ করতে ভালো লাগলে তা করতে দিন।
শিশুকে সমস্যা সম্পর্কে জানান
সন্তান যদি এডিএইচডি’তে আক্রান্ত হয় তাহলে খুবই নরমভাবে বিষয়টা তাকে পুরোপুরি জানান। এও জানান যে আপনারা সবাই মিলে এই সমস্যা দূরীকরণে কাজ করছেন। যদি সন্তান সমস্যা বুঝতে পারে এবং আপনারা যে সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য তাকে সাহায্য করতে চাচ্ছেন এটা বুঝতে পারে তাহলে সে এডিএইচডি প্রতিরোধের যেকোন ধাপে নিজে থেকে সাহায্য করবে। এবং তাকে তার আচরণ সম্পর্কে বোঝানো বেশ সহজ হবে।
সন্তানের শক্তির ও ভালোলাগার জায়গা খুঁজে বের করুন
সন্তান একটু আলাদা হলে বাবা-মা অন্যদের সাথে সন্তানের তুলনা করে থাকেন। এর ফলে সন্তান হীনমন্মন্যতায় ভোগে ও অগ্রহণযোগ্য আচরণের পরিমাণও বাড়ে। এমন না করে বরং সন্তানের শক্তির ও ভালো লাগার জায়গা আবিষ্কার করে তাকে সে কাজ করার ব্যপারে উৎসাহ দিন। এমন শিশুরা তাদের ভালো লাগার জায়গাতে অনেক পারদর্শী ও আগ্রহী হয়ে থাকে। সন্তান যদি গান শুনতে পছন্দ করে তাকে গান শুনতে দিন, সে যদি বিজ্ঞানবাক্সের এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করে তাকে তা করতে দিন।
রুটিন তৈরি করুন
এডিএইচডি’তে আক্রান্ত শিশুদের একটা লক্ষণ হলো তারা রুটিন মাফিক কিছু করতে চায় না। সেজন্য তার প্রতিদিনের কাজগুলোকে রুটিনে আনা যেতে পারে। যেমন ঘুম থেকে উঠা, খাওয়া, খেলাধুলা ও অন্যান্য নিয়মিত কাজের জন্য রুটিন করতে পারেন। প্রতিদিনের করা কাজগুলো যদি রুটিন মাফিক করে তাহলে ধীরে ধীরে সে স্বাভাবিক হতে থাকবে। এই কাজগুলো সে রুটিন মাফিক করতে না চাইলে এটা যে তার চিকিৎসার একটা অংশ তা তাকে বুঝিয়ে বলুন।
শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে
অপর্যাপ্ত ঘুম সকল মানুষের স্বাভাবিক জীবনে প্রভাব রাখে। এডিএইচডি তে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত ঘুমের প্রভাব অনেক বেশি পড়তে পারে। সেজন্য শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। ঘুমের জন্য কঠোরভাবে নিয়ম মানা উচিত। শিশুকে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যেতে বলুন। কফি জাতীয় খাবার খাওয়ানোর থেকে বিরত রাখুন। প্রয়োজনের শিশুর রুমে রিলাক্সিং মিউজিকের ব্যবস্থা করতে পারেন। এতে শিশু তাড়াতাড়ি ঘুমাবে।
খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিন
এডিএইচডি শিশুরা যদিও খেলাধুলায় সবসময় নিজের মত নিয়ম তৈরি করতে চায় তাও তাদেরকে দলগত খেলায় (ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেট বল) অংশগ্রহণ করাতে হবে। এইসব খেলায় নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে এবং তা অনেকে মিলে সিদ্ধান্ত নেয়। সেক্ষেত্রে চাইলেও নিজের নিয়ম মানাতে জোর করতে পারবে না। তবে সাথে পরিবারের বড় কেউ থেকে শিশুর সমস্যাগুলো তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। সন্তানের মনোযোগ ঠিক করার জন্য মেডিটেশন করা যেতে পারে। এতে সে ধীরে ধীরে নিজেকে শান্ত রাখা আয়ত্ত্ব করবে।
শিশুর সাথে সব সময় বড় কেউ থাকুন
এডিএইচডি’তে আক্রান্ত শিশুরা অনেক আবেগপ্রবণ হয়। একই সাথে তারা সামাজিক নিয়মকানুন তোয়াক্কা করে না বা বুঝে উঠতে পারে না। ফলে সব সময় তাদের দ্বারা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু করার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য সব সময় সাথে একজন অভিভাবকের উপস্থিত থাকা উচিত। এমন কি শিশু বন্ধুদের সাথে থাকার সময়তেও। যেন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত কোন আচরণ লক্ষ করে তা শোধরানোর সুযোগ পাওয়া যায়।
শিশুর মতামতকে গুরুত্ব দিন
শিশুকে দিয়ে যখন কোন কাজ করাতে চান তখন শিশুর মতামত জাননে চান ও তাকে গুরুত্ব দিন। শিশুকে বোঝান যে, সে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেমন তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, সে কখন মেডিটেশন করতে চায়। শুনে তার সময়টাকে গুরুত্ব দিন। সে যতবার যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে ততবারই তাকে গুরুত্ব দিন। একটা সময় তার মাঝে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা জন্মাবে। এতে এডিএইচডি প্রতিরোধে তার নিজের সাহায্যও পাবেন।
সবাই মিলে তাকে সাহায্য করুন
এডিএইচডি যেহেতু একটা মানসিক সমস্যা, সেহেতু সবসময় শিশুর মাঝে এটার প্রভাব থাকতে পারে। এডিএইচডি’তে আক্রান্ত শিশুর যত্ন একা নেয়া সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা যে পরামর্শ দিবেন পরিবারের সবাই মিলে সেভাবে তার যত্ন নেয়ার চেষ্টা করুন। স্কুলের শিক্ষকদেরও জানিয়ে রাখতে পারেন শিশুর সমস্যার কথা। এতে শিক্ষকরাও তার সঠিক যত্ন নিতে পারবে।
এডিএইচডি’র মতো শিশুদের মানসিক সমস্যা নিরাময়ে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব নিতে হয় বাবা-মাকেই। শিশুর নিয়মিত যত্ন নিলে এইসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
তথ্যসূত্র- wikipedia , betterhealth

Previous articleনাম ভুলে যাই
Next article২০২০ সালে কর্মক্ষমতা হ্রাসকরণে দ্বিতীয় প্রধান কারণ হবে বিষণ্ণতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here