[int-intro]বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা গবেষক অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক। সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ। শিশুশিক্ষা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন সাইফুজ্জামান রানা।[/int-intro]
[int-qs]বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা যেভাবে চলছে, বিশেষ করে যে নানা ধারায় বিভক্ত হয়ে পরিচালিত হচ্ছে, একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে আপনি এটাকে কীভাবে দেখছেন?[/int-qs]
[int-ans name=”অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান”]বাংলাদেশে ১১ রকমের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু ছিল কিন্তু জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা করার কথা বলা আছে। এবং ওখানে স্পষ্ট করে বলা আছে, সাতটা বিষয় যেমন- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, ইতিহাস- এসব বিষয় সব রকমের প্রাথমিক শিক্ষায় পড়াতে হবে। সে মাদ্রাসা হোক আর ইংলিশ মিডিয়াম কিংবা ইংলিশ ভার্সন স্কুল হোক, তাতে কিছু যায়-আসে না। সবাইকে একই শিক্ষাক্রমের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু জায়গায় এটা চালু করা গেছে যেমন- মাদ্রাসায় ও ইংলিশ ভার্সনে। কিন্তু ইংলিশ মিডিয়ামে এখনো চালু করা যায়নি। এর জন্য একটা আইন করা দরকার। আইন করার কথা কিন্তু সর্বশেষ শিক্ষানীতিতে বলা আছে। এই আইন করার জন্য চার বছর আগে কমিটিও করা আছে কিন্তু আইনটি এখনো করা হয়নি। আইন
থাকলে সুবিধা এই যে, কেউ যদি আইন না মানে তাহলে তাকে বাধ্য করা যায় আইন দিয়ে। শাস্তি দেয়া যায়। কিন্তু এখন তো শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করার জন্য দেশে কোনো আইন নেই; ফলে কাউকে এটা মানতে বাধ্য করা যাচ্ছে না। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করার জন্য বেশ কিছু আইন করা
দরকার কিন্তু সেগুলো করা হচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম যা- ই হোক, সে মাদ্রাসা হোক অথবা প্রাইমারি স্কুল কিংবা ইংলিশ মিডিয়াম হলেও কিন্তু কিছু যায়-আসে না; কেননা একই বা কাছাকাছি বয়সের শিশুদের একই বিষয় একই শিক্ষাক্রম ও বই দিয়ে পাঠ পরিচালনা করলে কোনো পার্থক্য থাকার কথা না। এই বিষয়ে আমার একটি বক্তব্য হলো, প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম বাংলা মাধ্যমে হতে হবে। এখানে
কোনো ইংলিশ মিডিয়াম বা ভার্সন থাকতে পারবে না। ইংলিশ মিডিয়াম থাকতে পারে অষ্টম শ্রেণির পরে গিয়ে; তবে প্রথম শ্রেণি থেকেই ইংরেজি ভাষা ভালোভাবে শেখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। ইংরেজি ভাষা আমাদের ভালোভাবে শিখতে হবে যাতে বলা, পড়া ও লেখার ক্ষেত্রে দক্ষতাগুলো অর্জিত হয়। এখন আমাদের দেশে ইংরেজি শেখার নাম করে ইংলিশ মিডিয়াম চালু করে জাতিকে দুটো ভাগে ভাগ করে ফেলেছি। সমাজে একটা রেয়াজ চালু হয়েছে, সন্তান ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়লে অভিভাবক গর্ববোধ করেন। মানে অভিভাবকের মান থাকছে না সন্তানকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে না পড়াতে পারলে। এই যে ইংলিশ মিডিয়াম আর বাংলা মিডিয়াম- এই দুটো নেতিবাচক ধারা বা ভাগ কিন্তু আমরা শিশুদের মাঝে চাই না। এই যে বিভাজন এটা একটা দেশ ও সমাজের জন্য ভালো না।[/int-ans]
[int-qs]আপনি বললেন জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ অনেক ভালোভালো দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে কিন্তু তার অনেক কিছুই এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সাত বছরে কাঙ্খিত মাত্রায় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন হলো না। প্রণয়ন কমিটির একজন সদস্য হিসেবে বিষয়টিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?[/int-qs]
[int-ans name=”অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান”]হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, আমরা শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেকখানি পিছিয়ে আছি। এর প্রধান কারণ হলো এটি বাস্তবায়নের জন্য যে যে পদক্ষেপ নেয়ার কথা ছিল, সেগুলো যথাসময়ে নেয়া হয়নি। দঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এখনো নেয়া হচ্ছে না। ফলে শিক্ষানীতির অনেক কিছু বাস্তবায়িত হচ্ছে না।[/int-ans]
[int-qs]আমাদের শিক্ষা উপকরণ তৈরিতে, শিক্ষক প্রশিক্ষণে, শিক্ষাদান পদ্ধতিতে শিশুর মনস্তত্ত্ব বিষয়টিকে কতটুকু বিবেচনায় নেয়া হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান”]এই বিষয়ে আমাদের অনেক ঘাটতি রয়েছে। শিশু মনোবিজ্ঞান অনুসারে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে যে বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে তা হলো- দক্ষ ও উপযুক্ত শিক্ষকের ব্যবস্থা। আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে দক্ষ ও উপযুক্ত শিক্ষক নেই তা নয়; তবে তা খুবই কম। মাধ্যমিক স্তরে আরো কম। শিশুদের শিক্ষা দেয়ার জন্য শিশুর মন বুঝে শিশুর চিন্তার স্তরে নেমে গিয়ে শিশুদের শিক্ষা দেয়ার মতো শিক্ষক নিয়োগ আমাদের এখানে হয় না। শিশুদের শিক্ষা দেয়া অনেক কঠিন কাজ, অপেক্ষাকৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো অনেক সহজ। কারণ এখানে বিষয়গত জ্ঞান থাকলেই হয়। কিন্তু শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে শিশুর মন ও আচরণ বোঝার ক্ষমতা থাকা জরুরি একজন শিক্ষকের জন্য। বিশ্বে শিশুশিক্ষা নিয়ে যাঁরা কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে এই যে কিন্ডারগার্টেনের জনক ফ্লোয়েবল বা রুশোর কথাই যদি বলি, শিশুশিক্ষার যে পরিবেশের কথা তাঁরা বলেছেন সেগুলোর ছিটেফোঁটাও কি আছে আমাদের এখানে?
সেই যে খেলাধুলা, আঁকাআঁকি ও আনন্দ-বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা, সেটার অনেক অভাব রয়েছে। এখানে আমরা শিশুদের একটা ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য রাত-দিন চেষ্টা করে চলেছি। এই যে আমাদের এখানে পাবলিক পরীক্ষার নাম করে শিশুদের জীবন থেকে খেলাধুলা ও আনন্দ- বিনোদন কেড়ে নেয়া হচ্ছে, এটার কী মানে থাকতে পারে আমার মাথায় আসে না। রাত-দিন ঘরের জানালা-দরজা বন্ধ করে শিশুকে বলা হচ্ছে পড়ো আর পড়ো। তোমাকে জিপিও-৫ পেতে হবে। এর জন্য এক কোচিং থেকে অন্য কোচিংয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শিশুকে। শিশুর মন বা তার ইচ্ছার কোনো মূল্য নেই এখানে। এটা রীতিমতো শিশুর জন্য মানসিক নির্যাতন।[/int-ans]
Home মানসিক স্বাস্থ্য শিশু কিশোর পরীক্ষার নামে শিশুদের আনন্দ কেড়ে নেয়া হচ্ছে-অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান