সব ধরণের সম্পর্কেই শারীরিক স্পর্শের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে এবং গবেষণায় দেখা গেছে, মনস্তত্ত্বের উপর এর সরাসরি প্রভাব বিদ্যমান।
সম্পর্কে শারীরিক স্পর্শ বলতে শুধু দাম্পত্য জীবনে দুজন সঙ্গীর মধ্যাকার যৌন স্পর্শই বোঝায় না। বরং, পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব সব সম্পর্কই এর অন্তর্ভুক্ত। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের মনের উপরই স্পর্শ এক বিশেষ প্রভাব ফেলে। ছোট বাচ্চা এবং শিশুরা বিশেষ করে তাদের যত্নকারীদের কাছ থেকে এ ধরণের স্পর্শের বিশেষ চাহিদা অনুভব করে থাকে। তবে, কম বেশী সব বয়সের মানুষই তাদের কাছের মানুষদের কাছ থেকে এ ধরণের সহানুভূতিশীল স্পর্শ আশা করে। স্পর্শ যে কোন সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি করে। দুজন মানুষের মাঝে মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া আরও ভালো করে। তাছাড়া এ ধরণের সহানুভূতিশীল স্পর্শের হার যত বাড়ে দুজন মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ততোই ত্বরান্বিত হয়। যেসব মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে বিষণ্ণতা, মানসিক অশান্তি, হতাশা ইত্যাদি মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের এসব মানসিক সমস্যা দূর করতেও সহানুভূতিশীল এবং ভালোবাসাপূর্ণ স্পর্শ অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
একটু লক্ষ্য করলে আমরা দেখবো যে, আমাদের চারপাশে দুই ধরণের বা স্বভাবের মানুষ রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ অন্যদের সাথে খুব সহজে মিশতে পারে এবং শারীরিক স্পর্শ যেমন হাত মেলানো, আলিঙ্গন ইত্যাদিতে অস্বস্তি অনুভব করেনা। আবার এমন অনেকেই আছে যারা সহজে কারও সাথে মিশতেও পারেনা এবং যে কোন ধরণের স্পর্শও তারা এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে। আর যারা এভাবে নিজেদের লুকিয়ে রাখার মানসিকতা লালন করে তারাই অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশী মানসিক সমস্যায় ভোগে। গবেষণা বলে, এর কারণ হল অজান্তেই তারা তাদের কাছের মানুষদের স্পর্শ এবং সান্নিধ্য এড়িয়ে চলে যা কিনা মন থেকে সব ধরণের ভার দূর করে মানসিক সুস্থতা বিধান করে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, যখন একজন মানুষ মানসিক চাপের মাঝে থাকে তখন তার কাছের কারও স্পর্শ তার মানসিক চাপ কমিয়ে তাকে মানসিক স্থিতিশীলতা প্রদানে সহায়তা করে। যে কোন ধরণের মৌখিক সমবেদনার থেকে সহানুভূতিশীল একটু স্পর্শ মানসিক চাপ কমাতে অনেক অনেক বেশী কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। স্পর্শ একজন মানুষের মনে বিশ্বাস এবং ভরসার অনুভূতি সৃষ্টি করে যা তার মাঝে আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করে। তাছাড়া স্পর্শ মনস্তাত্ত্বিক ভাব আদান প্রদানে অত্যন্ত সহায়ক এবং কার্যকরী মাধ্যম। সদ্য জাত শিশুরা যারা মুখে কিছু বলতে পারেনা তাদের সাথে মায়েদের যোগাযোগের একটি বিশেষ মাধ্যমই হল স্পর্শ। শিশুরাও তাদের মায়ের স্পর্শেই সব থেকে বেশী সুরক্ষিত এবং প্রশান্তি অনুভব করে। তাছাড়া বিপদে বন্ধুর আলিঙ্গন, কান্নায় চোখের জল মুছিয়ে পাশে থাকা, বিষণ্ণতায় হাতে হাত রাখা সহ এ ধরণের সহানুভূতিশীল স্পর্শ একজনের সাথে অপর জনের ভাবনাকে জুড়ে দেয়, মনকে জুড়ে দেয়। তাই ভাবের আদান প্রদানও হয় দ্রুত এবং কার্যকরী উপায়ে।
আপন জনের সহানুভূতিশীল স্পর্শ একজন মানুষের মানসিক অবস্থার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই স্পর্শকে মনস্তত্ত্ববিদ গণ বিভিন্ন মানসিক সমস্যা চিকিৎসায় থেরাপি হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন। স্পর্শ একজন মানুষকে তার কাছের মানুষের কাছে বিশেষ এবং সহানুভূতিশীলতার অনুভব করায়। তাই বলা যায়, শারীরিক সহানুভূতিশীল স্পর্শের মাঝেই মানসিক প্রশান্তি এবং সুস্থতা লুকিয়ে থাকে।
সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/talking-apes/202101/the-power-touch
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে