অকুপেশনাল থেরাপি হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি স্বীকৃত বিভাগ এবং আধুনিক স্বাস্থ্য সেবামুলক পেশা যেখানে শারীরিক বা মানসিক ভাবে অসুস্থ বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দৈনন্দিন কাজে যথাসম্ভব সর্বাধিক স্বাবলম্বী (স্বনির্ভর) করার উদ্দেশ্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
মানসিক স্বাস্থ্যে অকুপেশনাল থেরাপির ভূমিকাঃ
অকুপেশনাল থেরাপির মূল লক্ষ্য হচ্ছে একজন ব্যক্তির কার্যক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে তাকে দৈনন্দিন কার্যকালাপের সকল দিকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্যকরা। যেমন-
- ব্যক্তিগত কাজে স্বাবলম্বীতা -কর্মক্ষেত্রে স্বাবলম্বীতা
- সামাজিকভাবে স্বাবলম্বীতা -বিনোদন মূলক বা অবসর কার্যকালাপে অংশগ্রহণ
১। অকুপেশনাল থেরাপিস্ট মানসিক রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে অন্যান্য হেলথ প্রফেশনালদের সাথে মাল্টি ডিসিপ্লিনারী টিমে থাকেন ।
২। রোগীদের ঔষধ খাওয়ার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার পাশাপাশি সমাজে পুনরায় ফিরে যাওয়া এবং সঠিক ভাবে পুর্ণবাসনের জন্য কাজ করে থাকেন।
৩। পেশাগত ও বিনোদনমূলক কাজকর্মে রোগীদের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে তাদের মাঝে আক্রমনাত্নক আচরণ দূর করতে সাহায্য করেন ।
৪। একজন মানুষ যখন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন তার স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্ম, যেমনঃ নিজের খাওয়া, গোসল করা,জামা কাপড় পড়া, ফ্রেশ হওয়া, খেলাধুলা ইত্যাদি করার মত সামর্থ/ইচ্ছা/আগ্রহ থাকে না। তখন সেই কাজটিকে অনেক কঠিন মনে হতে পারে কিংবা করতে সে ভয় পেতে পারে তখন একজন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট পারে তার কাজটিকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করার মাধ্যমে এবং কাজটিকে আনন্দময় করে তাকে কাজটিতে অভ্যস্ত করে তোলা।
৫। রোগীর মানসিক সমস্যার কারণে যেমনঃ মনোযোগ, সমস্যার সমাধান, গুছিয়ে কাজ করার দক্ষতা এবং সামাজিক দক্ষতার সমস্যা থাকে তাদের বিভিন্নগ্রুপ এক্টিভিটিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানো।
৬। একজন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট রোগীদের একটি রূটিন তৈরির মাধ্যমে দৈনন্দিন কাজকর্মে অংশগ্রহণ বাড়াতে সাহায্য করে ।
জাতীয় মানসিক হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালে অকুপেশনাল থেরাপির কার্যক্রম সমুহঃ
মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত ব্যক্তির সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ঢাকায় অবস্থিত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১ জন ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিস্ট ও ২ জন ইন্টার্ন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট সিআরপি এর উদ্দ্যোগে ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অত্র হাসপাতালে অকুপেশনাল থেরাপি সেবা চালু হওয়ার পিছনে যাদের অতুলনীয় ভুমিকা রয়েছে তারা হলেন- বিগত সকল পরিচালক মহোদয়, প্রাক্তন পরিচালক প্রফেসর ডা. ফারুক আলম ও প্রফেসর ডা. এম এ মুহিত কামাল এবং বর্তমান পরিচালক প্রফেসর ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
একজন অকুপেশনাল থেরাপিস্টের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত ব্যক্তিকে কাজে অংশগ্রহণ করিয়ে তার রোগের উপসর্গ গুলোকে (যেমন- নিজের যত্নে অনীহা এবং কর্মক্ষম জীবন বা কাজকর্মের প্রতি অনীহা) কমিয়ে এনে সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে দেওয়া।
মৃদু ও গুরুতর মানসিক রোগীর ক্ষেত্রেঃ
একটু খেয়াল করলে দেখবেন, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতাজনিত রোগীদের মূল সমস্যা হল এই রোগীরা নিজের যত্ন নেয় না এবং কোন আয়মূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে চায় না অর্থাৎ কর্মে অনীহা। এছাড়াও আরও অনেক দক্ষতার অসুবিধা রয়েছে। এজন্য অত্র হাসপাতালে অকুপেশনাল থেরাপিস্টগণ রোগীর উপসর্গগুলোকে কমিয়ে আনার জন্য নিম্নোক্ত কার্যাবলী করে থাকেনঃ
১। নিজের যত্ন নেওয়ার প্রশিক্ষণ (self-care group)
২। আয়মূলক কাজের প্রশিক্ষণ: সেলাই প্রশিক্ষণ এবং সেলাই মেশিন প্রদান (রোগী কল্যাণ সমিতি ও সোশ্যাল ওয়ার্ক এর আর্থিক সহযোগিতায়)
৩। সামাজিক দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ
৪। মনোযোগ বাড়ানোর প্রশিক্ষণ
৫। বিনোদনমূলক কাজে অংশগ্রহণ
৬। সেন্সরি ইন্টারভেন্সন ফর মেন্টাল হেলথ
৭। কগনেটিভ বিহ্যাবিওর থেরাপি (CBT)
৮। অন্যান্য গ্রুপ থেরাপি (Physical Exercise group, Nutrition group, Caregiver sharing group,Art &craft group etc)
নিউরো-ডেভোলপমেন্ট ডিসঅর্ডার (ASD, ADHD, ID, Learning Disability) রোগীদের জন্য-
১। সেন্সরি ইন্ট্রিগ্রেশন থেরাপি ২। বুদ্ধিমত্তা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ ৩। অস্থিরতা কমানোর প্রশিক্ষণ ৪। নিজের যত্ন ও কাজের (পড়াশোনা) প্রতি মনোযোগের দক্ষতা বাড়ানো ইত্যাদি।
সর্বোপরি মানসিক স্বাস্থ্যে অকুপেশনাল থেরাপির প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে অকুপেশনাল থেরাপিস্টের ২টি পদ সৃষ্টিহয়েছে এবং একজন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট (সরকারী নিয়োগপ্রাপ্ত) ২০২০ সালে যোগদান করেছেন। আমারা আশা করছি এতে অকুপেশনাল থেরাপির পথ আরো সুগম হয়েছে।
মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় অকুপেশনাল থেরাপিস্টদের বর্তমান অবস্থা:
মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষেত্র পুনর্বাসনের জন্য জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১ জন ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিস্ট ও ২ জন ইন্টার্ন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট সেবাপ্রদানকরছেন। এছাড়াও পাবনা মানসিক হাসপাতাল, রাজশাহী, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মেডিকাল কলেজে ১ জন করে ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিস্ট কাজ করছেন।
অন্যদিকে অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগের তত্তাবধানে সিআরপিতে “মেন্টাল হেলথ ডে-কেয়ার” সেন্টার চালু হয়েছে। এখানে ৩ জন ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিস্ট কাজ করছেন। এই ডে- কেয়ার সেন্টারের মূল উদ্দেশ্য হলো – মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত রোগীদের বিজ্ঞান সম্মত পুনর্বাসন সেবা প্রদান। এখন বাংলাদেশে সর্বমোট ১০ জন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন।
লেখক-
মোঃ সাখাওয়াত হোসেন,ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা। (সিআরপি প্রকল্পের অধীনে)।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে