হতাশায় আশার বাণী

হতাশায় আশার বাণী
জীবনে সুখ দুঃখ উভয়ই থাকবে। তাই হতাশাকে জীবনের একটি অংশ হিসেবে মেনে নিয়ে একে মোকাবেলা করার পন্থা খুঁজতে হবে। পুনরায় আশায় বুক বাঁধতে হবে।

প্রত্যেকের জীবনেই কঠিন সময় আসে। কেউই এমন জীবন যাপন করতে পারেনা যে জীবনে কষ্ট বা দুঃখ নেই; প্রিয় জন হারানোর বেদনা নেই। হতাশা দূর করে জীবনে আশার আলো ফোটাতে তাই একে মনের মাঝে চেপে রেখে বা লুকিয়ে রেখে নয়, বরং একে মেনে নিয়ে, নেতিবাচক চিন্তাভাবনাকে দূর করে মানসিক চাপ কমানোর প্রয়াস করতে হবে। এভাবে ইতিবাচক মানসিকতার বিকাশ ঘটাতে পারলেই হতাশা মুক্তির পথ প্রশস্ত হবে।

হতাশা নিয়ে বেঁচে থাকা বা দৈনন্দিন জীবন যাপন করা প্রতিটি মানুষের জন্যই অত্যন্ত পীড়া দায়ক। একজন হতাশাগ্রস্ত মানুষের প্রতিটি সকাল শুরু হয় বুকের মাঝে চাপা কষ্ট নিয়ে। তার জন্য অতি সহজ এবং স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজও অত্যন্ত কঠিন এবং নিরর্থক বলে মনে হয়। জীবনের অর্থই যেন দিন দিন বদলে যেতে থাকে। শরীর হয়ে পড়ে নিস্তেজ এবং ভবিষ্যৎ দিক দিশা হীন। তাই এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসা প্রতিটি হতাশা গ্রস্ত মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। কারণ সুন্দর জীবনের অধিকার আমাদের সবার আছে এবং একটু প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজের মাঝে কিছু বদল নিয়ে আসতে পারলে জীবন থেকে হতাশা নামক এই মানসিক পীড়া দূর করে দেওয়া সম্ভব।

১) নিজেকে প্রাণবন্ত রাখার প্রচেষ্টা করা
সব সময় নিজেকে প্রাণবন্ত রাখার প্রয়াস করুন। সব সময় নিজের মাঝে কুঁকড়ে না থেকে সবার সাথে কথা বলুন, মিশুন। পরিবার ও বন্ধুদের সাথে একসাথে সময় কাটান। আলো বাতসা পূর্ণ স্থানে অবস্থান করুন। আপনি যদি নিজের মাঝে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা বাড়তে না দিয়ে নিজের মনোযোগ অন্যত্র সরিয়ে রাখতে পারেন তাহলে ধীরে ধীরে হতাশাজনক মানসিক অবস্থা থেকে আপনি বেরিয়ে আসতে সমর্থ হবেন। তাছাড়া প্রাণবন্ত জীবন যাপন এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাস আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার সাথে সাথে শারীরিক সুস্থতাও নিশ্চিত করবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।

২) দুশ্চিন্তা চেপে না রেখে সবার সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন
দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপকে চেপে না রেখে বরং ভাষা প্রদান করুন। যখন আমরা কোন কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করি এবং সেটি থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে খুঁজে হয়রাণ হয়ে যাই, তখন যদি এই মানসিক অস্থিরতাকে আমরা নিজের মাঝে চেপে রাখি তখন সেটি বহুগুণ নেতিবাচক হয়ে আমাদের শরীর ও মনের উপর প্রভাব বিস্তার করে। তাই মনস্তত্ত্ববিদগণ সর্বদা এসব ভাবনাগুলিকে নিয়ে কাছের মানুষদের সাথে খোলা মেলা আলোচনার পরামর্শ প্রদান করেন। এতে যেমন সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন উপায় অনুসন্ধান সহজ হয় তেমনি মানসিক চাপ ও লাঘব হয়, হতাশা কমে এবং মানসিক সুস্থতা ত্বরান্বিত হয়।

৩) পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে স্বীকার করে নিন এবং সম্মান করুন
সামাজিক এবং আর্থিক অবস্থা অনেকের ক্ষেত্রেই হতাশার প্রধান কারণ। অনেকেই মন মতো অবস্থা ধরে রাখতে না পেরে বা অর্জন করতে না পেরে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে যান। কিন্তু এটা কখনোই সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারেনা। হ্যা, আমাদের পরিকল্পনা এবং বাস্তবিক অবস্থার মাঝে মিল না হলে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই হতাশাকে যদি সামনে এগিয়ে যাবার পথে অন্তরায় করে ফেলি, তখনই মূল সমস্যাটি সৃষ্টি হয়। আমরা যদি আমাদের সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করে সম্মানের সাথে জীবন যাপন করি এবং পরিকল্পনা অনুসারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি তাহলে সামনে এগিয়া যাবার পথ কখনোই অবরুদ্ধ হবেনা। এবং হতাশাময় জীবন থেকেও আমরা মুক্তি পাবো।

পরিশেষে বলা যায়, জীবনে সুখ দুঃখ ভালো মন্দ সব কিছু সাথে নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। হতে পারে প্রতিকূলতার দমকা বাতাস জীবনকে এলোমেলো করে দিয়ে যেতে পারে, এতে হতাশ হয়ে থেমে গেলে চলবে না। মনে সাহস রেখে অদম্য স্পৃহা নিয়ে সব কিছু জয় করার মানসিকতা ধরে রাখতে হবে।

অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/designed-happiness/202105/is-your-environment-making-you-lonely

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

Previous articleকরোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই সন্তানধারণ: উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে যা করতে পারেন
Next articleকোভিডে মানসিক অবসাদ এবং আবেগ অনুভূতির উপর প্রভাব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here