সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে বাড়ছে শিশুদের মানসিক সমস্যা

0
33
সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারে শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই শিশু-কিশোরদের এই যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কুফল নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বেশ কিছু চিকিৎসক ও শিশু কল্যাণ বিশেষজ্ঞ। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে শিশু-কিশোরদের মানসিকতায় অস্বাভাবিক সব পরিবর্তন হচ্ছে বলে তারা তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন। তাদের মতে ১৩ বছরের কম বয়েসীদের এই যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে উৎসাহিত করারটা দায়িত্বজ্ঞানহীন। খবর বিবিসির।
ব্রিটেনের চিকিৎসক রঙ্গন চ্যাটার্জী বলছেন, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা এবং তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের মধ্যে যে একটা সম্পর্ক আছে তার অনেক প্রমাণ তিনি পেয়েছেন। এজন্য সম্প্রতি একদল মার্কিন শিশু কল্যাণ বিশেষজ্ঞ ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের কাছে একটি চিঠি লেখেন। এতে তারা ‘মেসেঞ্জার কিডস’ নামে বাচ্চাদের মেসেজিং অ্যাপটি বন্ধ করে দেবার আহ্বান জানান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কারণে কিশোর-কিশোরীদের মানসিকতায় অস্বাভাবিক পরিবর্তন হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন। এজন্য ১০ বছরের মেয়েও তার দৈহিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগছে।
রঙ্গন চ্যাটার্জী বলেন, তিনি একবার ১৬ বছরের একটি কিশোরকে রোগী হিসেবে পেয়েছিলেন- যে তার নিজের হাত-পা কাটার পর তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমে ভেবেছিলাম তাকে বিষণ্ণতারোধী ওষুধ দেবো। কিন্তু আমি তার সঙ্গে কথা বলার পর মনে হলো, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করায় তার স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’
২০১৭ সালে ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সী দেড় হাজার কিশোর-কিশোরীর ওপর জরিপ চালায় রয়াল সোসাইটি অব পাবলিক হেলথ। এতে দেখা যায় স্ন্যাপচ্যাট এবং ইনস্টাগ্রাম তাদের মনে সবচেয়ে বেশি হীনমন্যতা এবং দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করে। ১০ জনের মধ্যে সাত জন বলেছে ইনস্টাগ্রামের কারণে তাদের নিজেদের দেহ নিয়ে মন খারাপ হয়েছে। ১৪ থেকে ১৪ বছর বয়সের তরুণ-তরুণীদের অর্ধেকই বলেছে ফেসবুকের কারণে তাদের মানসিক দুশ্চিন্তা ও অশান্তি বেড়ে গেছে।
ড. চ্যাটার্জী তার কাছে আসা ছেলেটিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে রাতে ঘুমানোর আগে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি জানান, ছয় মাস পর তার অবস্থা লক্ষণীয়ভাবে ভালো হতে শুরু করলো। আমি তার মার কাছ থেকে চিঠি পেলাম যে সে স্কুলে গিয়ে অনেক আনন্দ পাচ্ছে, এবং স্থানীয় লোকজনের সাথেও মিশছে।
সাইকিয়াট্রিস্ট লুই থিওডোসিও বলছেন, ‘দু-তিন বছর আগেও তার সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্টের মাঝখানে কোন বাচ্চা তাদের ফোন ব্যবহার করছে, বা টেক্সট করছে – এমন ঘটনা ছিল খুবই অস্বাভাবিক। কিন্তু এখন এটা খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে।’
তিনি জানান, ‘বাচ্চারা তাদের ফোন নিয়ে খুব বেশি সময় কাটাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে টিনএজাররা বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা বা অন্য মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে – এমন কেসের সংখ্যা বেড়ে গেছে।’ তিনি বলেন, এসব বাচ্চারা এক কল্পনার জগতে বাস করছে, এতে তাদের শারীরিক স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা অভিভাবকদের নানা উপায়ে বাচ্চাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর নজর রাখতে ও তা সীমিত করতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
Previous articleশিশু ও বয়ঃসন্ধিদের অবসাদ এবং উদ্বেগঃ পর্ব-১
Next articleমানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় অন্তর্ভুক্ত হলো ‘গেমিং ডিজঅর্ডার’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here