সেডেন্টারি পেশায় হৃদরোগের ঝুঁকি

0
24
সেডেন্টারি পেশায় হৃদরোগের ঝুঁকি

প্রযুক্তির এই যুগে প্রযুক্তি এড়িয়ে চলা অসম্ভব। তাই তো যুগ বদলাচ্ছে আর কাজের পরিধি দখল হয়ে যাচ্ছে কম্পিউটার দিয়ে। মিটিংগুলো এখন আর সরাসরি হয় না, হয় জুম বা গুগল বা অন্য কোনো মিটিং অ্যাপে হয়। আর এখন এই করোনাকালীন সময়ে ‘Work from Home’ এই জনপ্রিয় স্লোগানেই চলছে বিশ্ব। বাসায় বসে অফিস বা অফিসে বসে অফিস-এই বসে থেকেই সারাদিন যে কাজ করা তাকেই সেডেন্টারি (Sedantary) ওয়ার্ক বলে, অর্থাৎ শারিরীক নিষ্ক্রিয়তা বা আসীন কর্মও বলা যায়।

এভাবেও বলা যায়, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা বা বসে থাকা হচ্ছে-শরীরকে দীর্ঘ সময় ধরে নড়াচড়া না করা। এর মধ্যে থাকতে পারে সোফায় বসে বা শুয়ে টিভি দেখা এবং ডেস্ক বা কম্পিউটারে বসে থাকা।

শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার ফলে কী কী হতে পারে

নিষ্ক্রিয় থাকার ফলে আপনার ধমনীতে (রক্তনালী) চর্বিযুক্ত উপাদান তৈরি হতে পারে। যদি আপনার হার্টে রক্ত বহনকারী ধমনীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আটকে যায় তাহলে এটি হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। যদি এটি আপনার মস্তিষ্কে রক্ত বহনকারী ধমনীতে ঘটে তবে এটি স্ট্রোক হতে পারে।

একটানা কাজ করলে শরীরে ওজন বাড়ার প্রবণতা বাড়ে।

যারা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করেন তাদের বেশিরভাগেরই ঘাড়, কাঁধ, কোমর এবং পিঠে ব্যথার সমস্যা সমানুপাতিক হারে বেড়েই চলে।

একটানা বসে কাজ করলে শুধু শারীরিক ক্ষতিই হয় না, মানসিক সমস্যাও দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা বলছেন, দীর্ঘ সময় বসে কাজ করলে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় একভাবে বসে কাজ করলে বা টিভি দেখলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায় ৯০ শতাংশ।

বেশিক্ষণ বসে থাকলে কোমরের নিচের অংশ ও পায়ের পেশি ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায়। ফলে হিপ-জয়েন্টে সমস্যা দেখা দেয়। রক্ত চলাচলেও সমস্যা হয়। পায়ের গোড়ালি ফুলে যায়।

তাছাড়া ঘুম কম হওয়া, অস্থিরতা, পেটের সমস্যা ইত্যাদিরও সম্পর্ক আছে নিষ্ক্রিয়তার সঙ্গে।

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেই বা নিষ্ক্রিয় থাকলেই এই অঙ্গগুলোর সমস্যা হয় কেন?

কারণ

হৃৎপিন্ড- একটি পেশি এবং অন্যান্য পেশির মতো এটির শারীরিক কার্যকলাপ বা ব্যায়াম প্রয়োজন যাতে এটি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। যখন আপনি সক্রিয় থাকেন, আপনার ফুসফুস আপনার রক্তে অক্সিজেন পৌঁছানোয় একটি ভালো কাজ করে যাতে এটি আপনার শরীরের সমস্ত টিস্যু এবং কোষে পাম্প করা যায়।

সক্রিয় বা শারীরিক কার্যকলাপ আপনার হৃদরোগ এবং সংবহন রোগের ঝুঁকি ৩৫% পর্যন্ত কমাতে পারে।

নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ:

আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং এটি স্বাস্থ্যকর মাত্রায় রাখতে সাহায্য করে

তাছাড়া আপনার ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমায়, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।

নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক কার্যকলাপ শুধু আপনার হার্টকেই রক্ষা করে না, এটি আপনার মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে, স্মৃতিশক্তিকে উন্নত করে এবং আপনাকে আরো ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে আপনার সাধারণ সুস্থতাকে সাহায্য করতে পারে।

কেন জানব হৃদরোগ নিয়ে?

বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদরোগ। প্রতিবছর বিশ্বে যত মানুষ মারা যায়, তার ৩১ শতাংশই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। দক্ষিণ এশিয়ার স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে হৃদরোগের কারণে তিন চতুর্থাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে হৃদরোগের কারণে মৃত্যু হয় ১৪.৩১ শতাংশের। সারাবিশ্বে নারী ও পুরুষের মধ্যে বর্তমানে সর্বাধিক মৃত্যুর কারণ এই হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক বলে গবেষণায় দেখা যায়। এবার নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে, করণীয় কী?

খুব সামান্য চেষ্টা আর অভ্যাসের বদৌলতে আমরা সেডেন্টারি কাজ করার পরও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারি। চলুন দেখা যাক সেগুলো কী:

টানা বসে না থেকে কাজের মাঝখানে বিরতি নিয়ে একটু হাঁটুন ও পুরো শরীরকে প্রসারিত করার চেষ্টা করুন। হাত পা নাড়ানো ও একটু নিচু হয়ে এক্সারসাইজ করুন।

নিজের অফিসের ডেস্ক ছেড়ে অন্য কলিগদের ডেস্কে ঘুরে কথা বলুন। কিংবা দাঁড়িয়ে চা বা কফি পান করুন। বসে থাকা অবস্থায় কিছু রিলাক্সেশন এক্সারসাইজ করুন। এতে করে অনেকটা রিলাক্সেশন হবে শরীরের এবং মনেরও। এভাবে প্রতিদিন চেষ্টা করুন আধা ঘণ্টা করে ব্রেক নিতে।

প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি তীব্রতার এক্সারসাইজ করার চেষ্টা করুন যেমন, দ্রুত হাঁটা বা সাইকেল চালানো। তাছাড়া আরেকটু সংক্ষেপে করতে চাইলে আপনার হাতের ওজন ব্যবহার করা, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা, বাগান করা বা সপ্তাহে কমপক্ষে দুই দিন ভারী কেনাকাটা করা বা পেশি শক্তিশালীকরণ কার্যক্রমও করা যেতে পারে।

শারীরিক বা মানসিক সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন।

পরিশেষে এটাই বলব, ব্যস্ততা থাকবেই। কিন্তু ব্যস্ততার অজুহাতে নিজের শরীরকে অবহেলা করলে তার ভার বহন করতে হবে নিজেকে এবং নিজের প্রিয়জনকেই। তাই সুস্থ থাকুন আর মাঝে মাঝে প্রকৃতির কাছে ঘুরে আসুন, বুক ভরে নিন সজীব বাতাস। দেখবেন আপনার হৃদয়টাও ভরে উঠছে আনন্দে।

ডা. রেজওয়ানা হাবীবা

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ।

সূত্রঃ মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন, ৪র্থ বর্ষ, ৯ম সংখ্যায় প্রকাশিত।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে 

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪
Previous articleকোনো কাজ করা অবস্থায় মনে নতুন চিন্তা আসে
Next articleদীর্ঘদিন ধরে হস্তমৈথুন করার ফলে মানসিক চাপের মধ্যে আছি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here