নিডেল ফোবিয়া (সুই ভয়) একটি রক্ত-ইনজেকশন-আঘাতের ধরণের ফোবিয়া। ফোবিয়াস এক ধরণের উদ্বেগজনিত রোগ।
সুই আতংক অনেকের মধ্যে খুব মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে। অনেকেই আছেন সুইয়ের ভয়ে জীবন রক্ষার জন্য রক্ত দেয়াতে ভয় পান এমনকি নিজের প্রয়োজনীয় কোনরকম চিকিৎসা নিতেও ভয় পান । এই ভয় যে শুধু তাদের মধ্যেই থাকে ব্যাপারটাও এমন না। কোন ব্যক্তির এই সুই আতংক থাকলে দেখা যায় এটা তাদের সন্তানের উপরও প্রভাব ফেলে। দেখা যায় যে ব্যক্তির সুইয়ের আতংক থাকে সেটা তাঁর সন্তানের মধ্যেও থাকে। কিন্তু পিতা-মাতা হিসেবে যখন বুঝেন টিকা বা অন্য যেকোন চিকিৎসাতে সুইয়ের ব্যভার দরকার তখন তাঁরা এক মানসিক দোটানায় ভোগেন। যার জন্য তাদের নতুন করে বাস্তবতা মানতে শিখতে হয়। অনেকেই তাদের সন্তানের সাথে সাথে এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে চলেন অথবা মানতে পারেন না।
প্রাচীনে যখন আকুপাংচার পদ্ধতিতে চিকিৎসা হতো তখন এই আতংক আরও ভয়াবহ ছিলো। যুগের সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবুও কিছু মানুষের এই আতংক কাটে নি।
এমন এক ফোবিয়াক্রান্ত বলেছেন যে ফোবিয়াসও শর্তযুক্ত হতে পারে এবং উল্লেখ করা হয়েছে যে আমি বাচ্চাদের টিকা দেওয়ার সময় আমার নিজের বাচ্চাদের কান্না শুনে আমি সূঁচের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারতাম। আমার জন্য, ফোবিয়া আরও আগে শুরু হয়েছিল – আমার নিজের শৈশবে – কিন্তু আমার বাচ্চাদের তাদের টিকা, রক্ত নেয়া এবং চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে সমর্থন করার চেষ্টা আমার উদ্বেগকে আরও খারাপ করেছে।
মনোবিদ কোহেন বলেন সুই ফোবিয়াযুক্ত ব্যক্তিদের ভিসারাল প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তারা হঠাৎ গরম বা ঘাম অনুভব করতে পারে, তাদের হৃদপিন্ড দ্রুত স্পন্দিত হতে পারে এবং সেই অংশ থেকে রক্ত সরে যাওয়ার সাথে সাথে তাদের চরম শিহরণ হতে পারে। অস্থির বোধ হয় এবং মনোনিবেশ করতে সমস্যা হয়। পা লাফিয়ে উঠে, হালকা মাথা এবং শরীর মাঝে মাঝে কাঁপছে। এবং বমি হয়।
তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, ভয়টা আমাদের মনের মধ্যে ঢুকে আছে। আমাদের পুরোপুরি আতঙ্কিত আক্রমণ নাও হতে পারে কিন্তু আমাদের সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্র আমাদের বিপদকে চিনতে সাহায্য করার প্রচেষ্টায় বেড়ে যায়। কিন্তু যেহেতু হুমকিটি সত্যিকারের বিপদ নয়, এই ক্ষেত্রে, সেই সমস্ত শক্তি ব্যবহারের কোন উপায় নেই।
তিন জনের মধ্যে দুজন সূঁচকে ভয় পায়, কিন্তু টিকা এড়ানোর ক্ষেত্রে তাদের ভয় নাও হতে পারে। অনুমান করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬৬ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক এবং বিশ্বের জনসংখ্যার ২০% এই ফোবিয়ার পর্যায়ে এই ভয় ভাগ করে নিতে পারে। এই ভীতির কারণে প্রতি ছয়জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন ফ্লু ভ্যাকসিন এড়িয়ে গেছেন। কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন পাওয়ার আগে, অনেক বছর ধরে ফ্লু শট পাইনি এবং এমনকি একটি গুরুতর অসুস্থতা সম্পর্কিত রক্তের কাজও বন্ধ করে দিয়েছি।
কোহেন আরও বলেন, যখনই আমরা কোন বিরক্তিকর বা ভীতিকর অভিজ্ঞতা পেয়েছি, এটি সেই উদ্দীপনাকে এনকোড করে – এই ক্ষেত্রে সুই – আমাদের মস্তিষ্কে ভীতিকর হিসাবে রয়ে গেছে। ভয় এবং ট্রমা মস্তিষ্কে আরও গভীরভাবে এনকোড করা হয়, তাই আমি মনে করি এটি একটি শিক্ষিত প্রতিক্রিয়া।
সুই ফোবিয়ায় আক্রান্ত কিছু মানুষ তাদের উদ্বেগকে ভয় হিসেবে চিনতে পারে না, কিন্তু চিকিৎসা সেবা বা ইনজেকশন এড়ানো একটি চিহ্ন। “যদি তারা এখনও [ভ্যাকসিন] এড়িয়ে যাচ্ছেন যদিও তাদের কারণগুলি শেষ হয়ে গেছে, এটি প্রায়শই উদ্বেগের বিষয় হয়,” তিনি যোগ করেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ভ্যাকসিন এড়ানো কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনের জন্য দেশের ক্ষমতাকে বিলম্বিত করতে পারে এবং অন্যদের যারা টিকা দিতে পারে না তাদের সংক্রমণের অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। সুই ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সম্পূর্ণভাবে চিকিৎসা সেবা খোঁজা এড়িয়ে যান, যা তাদের কোভিড -১৯ সংক্রমিত হলে জটিলতার সম্মুখীন হলে তাদের খারাপ ফলাফলের ঝুঁকি বাড়ায়।
এই প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে , অনেকেই ভ্যাক্সিন নেয়া থেকে বিরত থাকতে চান। সুইয়ের ভয় পাওয়ার কারনে তাঁরা নিজেরাও টিকা নিতে যান না। অন্যের মাঝে সেই ভয় ও ঢুকে যায় তাদের আতংক দেখে।
অনেক দেশেই তাদের সরকারকে মানুষকে টিকা দিতে আহ্বান করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ তাদের দেশের জনগণকে বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনা দিচ্ছে যাতে তাঁরা কোভিডের টিকা নেন।
তাঁর মধ্যে অনেকের মধ্যে এই সুই আতংক চিন্তার ভাজ গাড়ো করছে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে