সাইকো থেরাপি বা মানসিক চিকিৎসার মূল বক্তব্য হল, আমাদের চিন্তা-ভাবনা বা বিশ্বাস হল সব মানসিক সমস্যার মূল কারণ এবং এটির মূল লক্ষ্যই হল ভ্রান্ত ধারণাগুলো পরিবর্তন করে আমাদের সে সব মানসিক সমস্যা দূর করা।
মানসিক চিকিৎসা বা সাইকো থেরাপির একটি বহুল প্রচলিত রূপ হল কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি বা সিবিটি। এই সিবিটি সাধারণত বিষণ্ণতা, উদ্বিগ্নতা, মন সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যাধি, পীড়া, নিদ্রাহীনতা এবং এরকম আরও মানসিক সমস্যা নিরসনে ব্যবহার করা হয়।
সিবিটি ব্যক্তির চিন্তা-ভাবনা বা বিশ্বাসে পরিবর্তন নিয়ে এসে সেগুলোকে নতুন রূপ প্রদান করে এবং সেই চিন্তা-ভাবনা বা বিশ্বাস থেকে যেসব মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল সেগুলো নিরসন করে। উদাহরণস্বরূপ, যারা বিষণ্ণতায় ভুগছে তারা হয়তো এটা বিশ্বাস করে যে, তাদেরকে কেউই ভালোবাসে না বা পছন্দ করে না। আর সিবিটির লক্ষ্য হল তাদের এ ধরণের বিশ্বাস পরিবর্তন করে বিষণ্ণতার মত মানসিক সমস্যা থেকে তাদের মুক্তি প্রদান করা।
তবে অনেক ক্ষেত্রেই সমাজে একটি বদ্ধমূল ধারণা প্রচলিত আছে যে, মানুষের বিশ্বাস বা ধ্যান ধারণা পরিবর্তন করা যায় না। সত্যিই কি মানসিক চিকিৎসা মানুষের বিশ্বাসকে পরিবর্তন করে তাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে পারে না? এই বিতর্কের সমাধান করতে তিন ধরণের যুক্তি উপস্থাপন করা যায়। যেগুলো বিশ্লেষণ করলে মানসিক চিকিৎসার ধরণ প্রকরণ সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।
যুক্তি ১:
একজন ব্যক্তি যখন তার মানসিক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসার শরণাপন্ন হয়, সিবিটি পদ্ধতির চিকিৎসায় তার সব সমস্যা এবং তার পেছনে কি কি ভ্রান্ত ধারণা কাজ করছে সেগুলোকে কার্জকারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তারপর চিকিৎসক পীড়িত ব্যক্তির ধারণার বিপরীতে প্রমাণ হিসেবে সঠিক ধারণা দাঁড় করান।
যেমন- একজন বিষণ্ণতায় ভোগা ব্যক্তির ধারণা তাকে কেউ ভালোবাসে না। এক্ষেত্রে চিকিৎসক তাকে দেখাবেন কারা তাকে ভালোবাসে। অথবা চিকিৎসক প্রমাণ করবেন পীড়িত ব্যক্তির ধারণা ভুল এবং সেক্ষেত্রে নতুন ধারণা সৃষ্টি হবে যে তাকে অনেকেই ভালোবাসে।
যুক্তি ২:
চিকিৎসক মানসিক সমস্যায় ভোগা ব্যক্তির আচার আচরণের দিকে লক্ষ্য করবেন। এটি হল এই ধরণের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্ল্যান বি। চিকিৎসক ঐ ব্যক্তির আচার আচরণের মধ্য দিয়েই তার ধারণা বদলাবার প্রয়াস করবেন। যেমন- বিষণ্ণতায় ভোগা একজন ব্যক্তি যিনি বিশ্বাস করেন তাকে কেউ ভালোবাসে না।
চিকিৎসক তাকে তার পিতামাতা, বন্ধু বান্ধব ও কাছের মানুষদের জিজ্ঞাসা করতে বলবেন যে তারা তাকে ভালবাসে কি না। এবং ধীরে ধীরে তার বাস্তব চিত্রটি স্পষ্ট হলে তার ধারণা বদলে যাবে। অর্থাৎ, বিষণ্ণতার কারণ দূরীভূত হবে।
যুক্তি ৩:
চিকিৎসক মানসিক সমস্যায় ভোগা ব্যক্তির ভ্রান্ত ধারণা গুলোকে বদলানোর প্রয়াস না করে বরং তার চিন্তা ধারাকে মেনে নেন। তারপর ধীরে ধীরে তার ধারণার মাধ্যমেই বিভিন্ন বাস্তব অভিজ্ঞতাকে সংযুক্ত করে এটা প্রমাণ করেন যে ধারণা গুলো আসলে সঠিক নয়।
এভাবে প্রতিটি কৌশলের শেষে মানসিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ভ্রান্ত ধারণা গুলোর উপর থেকে পর্দা সরিয়ে বাস্তব চিত্রটি স্পষ্ট করে তোলে। ফলে মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে সঠিক বিষয়টি বুঝতে পারে, তার মানসিক সমস্যা দূরীভূত হয় এবং তার চিন্তা ভাবনার বদল ঘটে।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে