আমি বিগত ৩ বছর ধরে মানসিক রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এখন অনেকটাই ঔষধ নির্ভর হয়ে গেছি। ঔষধ বন্ধ করে দিলে রোগ আবার ফিরে আসে। সবসময় মনে একটা আতঙ্ক থাকে- এই বুঝি প্যানিক অ্যাটাক হবে, আমি মারা যাব, হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে। সমাধান দেবেন আশা করি। -নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
অধ্যাপক ডা. হেদায়েতুল ইসলাম: প্রিয় প্রশ্নকারী, আপনি লিখেছেন গত তিন বছর ধরে ঔষধ খাচ্ছেন। ঔষধ খাওয়া ছেড়ে দিলেই আপনি উৎকণ্ঠা, আতঙ্ক এবং প্যানিক অ্যাটাকে ভুগছেন, মনে করেন মারা যাবেন। আপনি আপনার সম্পর্কে যতটুকু লিখেছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে না- আপনার বয়স কত, পুরুষ না নারী, আপনি কী কাজ করেন, আপনার ব্যক্তিগত জীবনে, কর্মক্ষেত্রে অথবা সামাজিক জীবনে কোনো মানসিক চাপ আছে কিনা। আপনার সমস্যার সঠিক মূল্যায়নের জন্য এসব তথ্য জানা প্রয়োজন ছিল। ভালো হবে যদি আপনি কোনো ভালো সেন্টারে কিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগ অথবা জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউট-শ্যামলীতে যোগযোগ করে পরামর্শ নেয়ার ব্যবস্থা করেন। ইনডেপথ সাইকোথেরাপি করা সম্ভব হলে চেষ্টা করেন। সম্ভব না হলে কমপক্ষে রিলাকজেশান থেরাপি নেয়ার চেষ্টা করেন।
আপনাকে মোটামুটিভাবে এটুকু পরামর্শ দেওয়া যায় যে, মানুষকে ব্যক্তিত্বের ধরন অনুযায়ী কয়েকভাবে ভাগ করা যেতে পারে, যেমন- কিছু মানুষ আছে যারা বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের অধিকারী। যাদের আত্মবিশ্বাস বেশি এবং সমস্যার মোকাবেলা সহজে দৃঢ়তার সাথে করতে পারে। আবার কিছু মানুষ আছে যারা অন্তর্মুখী চরিত্রের অধিকারী। তারা সামাজিক মেলামেশায় ততটা দক্ষ না হলেও সৃজনশীল ও গবেষণামূলক কাজে অবদান রাখতে পারে। আবার কিছু কিছু লোক আছে যারা নিউরোটিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী। যারা যে-কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে এবং মানসিক চাপের সম্মুখীন হলে নানাবিধ শারীরিক উপসর্গের মাধ্যমে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আমি অনুমান করছি অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেও আপনার তেমন কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। ঔষধ ছাড়তে হলে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে, আপনি শারীরিকভাবে যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তা সাইকোলোজিকাল সমাধানের অর্থাৎ সাইকোথেরাপি অথবা রিলাকজেশান থেরাপির সাহায্য নিতে পারেন। এতে যদি সমাধান না হয় তা হলে এখনি মারা যাবেন এই দুশ্চিন্তার কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সীমিত পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ঔষধ খেলে হয়তো ভালো থাকবেন।
আশা করি এই পরামর্শ আপনাকে সাহায্য করবে। আপনার মঙ্গল কামনা করছি।