সম্পর্কে দুজন মানুষ শুধু শারীরিক ভাবেই নয়, মনস্তাত্ত্বিক ভাবেও জড়িয়ে থাকে। দুজনার মাঝে মনের ভাব আদান প্রদান না হলে কখনোই সম্পর্ক অর্থবহ হয় না।
মনস্তাত্ত্বিকভাবে একে অপরের সাথে জুড়ে থাকা অর্থ হল কঠিন সময়ে একে অপরকে মানসিক শক্তি জোগান, উৎসাহ দেওয়া, আত্ম বিশ্বাস বজায় রাখতে সহায়তা করা, সাহস জোগান, এবং নিঃস্বার্থ হয়ে একে অপরের পাশে থাকা। এর ঠিক বিপরিতে যে বিষয়টি রয়েছে সেটি হল সম্পর্কে মনস্তাত্ত্বিকভাবে অসংযুক্ত বা অনুপস্থিত একজন মানুষ। যার মাঝে মনস্তাত্ত্বিক আকর্ষণ বা হৃদয়ের টান কিছুই নেই। অধিকাংশ সময় যদি আপনার সঙ্গী থাকা সত্ত্বেও আপনার একাকী, বিভ্রান্ত, বেপরোয়া কিংবা অবহেলার শিকার বলে মনে হয়, যদি শারীরিক ভাবে উপস্থিত থেকেও মানসিক ভাবে সে অনুপস্থিত থাকে তবে বলা যেতেই পারে আপনার সঙ্গী শারীরিক ভাবে হয়তো সম্পর্কে জুড়ে আছে, তবে মনস্তাত্ত্বিক ভাবে সে অনুপস্থিত। সম্পর্কের প্রতি কারও যদি মনের টান না থাকে তবে মনের মাঝে বিষাদ তৈরি হয়, ধীরে ধীরে তার সাথে মনের দূরত্বও বেড়ে যায়। তারা শুধু তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েই ব্যস্ত থাকে, নিজস্ব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিয়েই তারা চিন্তা করে। তাদের মাঝে সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা, যত্ন, চিন্তাভাবনা কিছুই থাকেনা।
এভাবে সম্পর্কে শারীরিক ভাবে অনুপস্থিত কিন্তু মানসিকভাবে অনুপস্থিত সঙ্গীকে চিহ্নিত করা খুবই প্রয়োজন। কারণ একজন ব্যক্তি যার সাথে মনের ভাবের কোন আদান প্রদান হয়না এমন ব্যক্তি কখনোই তার সঙ্গীকে মানসিকভাবে কোন সহায়তা প্রদান করতে পারেনা, এবং তার সঙ্গীর বিপদে কখনোই পাশে থাকেনা। গবেষণায় দেখা গেছে এ ধরণের মানুষের জীবনেও হয়তো গুরুত্বর মানসিক আঘাতের কোন স্মৃতি থাকে বা তারা বড় হয়ে ওঠে কোন নেতিবাচক পরিবেশে। তাদের মানসিক বিকাশ হয় ত্রুটিপূর্ণ।
কিছু কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায় একজন ব্যক্তি তার সঙ্গীর সাথে শারীরিক ভাবে জুড়ে থাকার পাশাপাশি মানসিক ভাবেও জড়িয়ে আছে কিনা-
১) অত্যন্ত বিশ্লেষণাত্মক মনোভাবঃ যে সব মানুষ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শুধুমাত্র বিশ্লেষণাত্মক মনোভাব পোষণ করে, কখনোই তাদের মনের ভাব, অনুভূতি ব্যক্ত করেনা বা তার সঙ্গীর অনুভূতির খেয়াল রাখেনা তাকে কোন সম্পর্কে মনস্তাত্ত্বিকভাবে অনুপস্থিত বলা যায়।
২) যে কোন আবেগ ঘন পরিবেশ এড়িয়ে চলাঃ যেসব মানুষ তাদের মনের ভাব বা আবেগ কারও সামনে প্রকাশ করতে চায়না তারা যে কোন আবেগ ঘন পরিবেশ এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে। যেমন, কাউকে অভ্যর্থনা জানানো বা কাউকে বিদায় জানানো, কোন আবেগ ঘন আলোচনা বা কোন মানসিক উদ্বেগ জনক অবস্থা সামলে ওঠা থেকে তারা সর্বদাই নিজেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করে। তারা কারও প্রতি তাদের ভালবাসা বা তাদের মনস্থিতি কিছুই প্রকাশ করতে চায়না।
৩) সীমিত সংখ্যক বন্ধু এবং অন্যান্য কাছের মানুষঃ মানসিক ভাবে অন্তর্মুখী মানুষ স্বাভাবিক কাজকর্মে জড়িত থাকলেও যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠান যেখানে অন্যান্যদের সাথে আবেগময় আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে সেসব অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলে।
৪) নিজের মনস্থিতি প্রকাশ করেনা এবং তার সাথে সম্পর্কিত মানুষদের মনস্থিতির বিষয়েও উদাসীন থাকেঃ যারা নিজের মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করেনা বা অন্যের মনের অবস্থা নিয়েও যাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই তারা প্রায়শই অন্যদের আবেগ নিয়ে হাসাহাসি করে। কারণ তারা অন্যদের মনের অবস্থা কি হবে, তাদের কেমন লাগবে এটা নিয়ে কখনোই ভাবেনা বা বোঝেনা।
মানসিকভাবে অন্তর্মুখী মানুষও হয়তো চেষ্টা করলে নিজেকে বদলে ফেলতে পারেন যদি এই সমস্যাকে তারা মন থেকে অনুভব করতে পারেন। নিজেকে একটি সম্পর্কের প্রতি নিবেদিত করতে শারীরিক সম্পর্কের সাথে সাথে অবশ্যই মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্কও স্থাপন করা জরুরী।
সূত্র: সাইকোলজি টু’ডে-https://www.psychologytoday.com/us/blog/addiction-and-recovery/202002/how-spot-emotionally-unavailable-person
অনুবাদ করেছেনে: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে