বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে স্নেহপূর্ণ আলিঙ্গন সহ অন্যান্য সহানুভূতিশীল অযৌন শারীরিক স্পর্শ আমাদের মানসিক ও শারীরিক অত্যধিক মাত্রার উত্তেজনা, উদ্বেগ, ভীতি, অবসন্নতা ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে।
যখন কারও মন খারাপ থাকে, কেউ কোন মানসিক পীড়ার মাঝে থাকে, তখন তার একটু বেশী সহানুভূতি ও ভালবাসার প্রয়োজন হয়। আর সহানুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা আলিঙ্গন করে থাকি যা বেশ সবার মাঝেই বেশ প্রচলিত। অনেক সময় খুব সাধারণ একটি আলিঙ্গন বহু দিনের পুরনো মনঃকষ্ট এবং হতাশা দূর করে দেয়। সত্যি কি আলিঙ্গনের এমন প্রভাব রয়েছে যা একজন ব্যক্তির মানসিক অবস্থায় এভাবে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে? আলিঙ্গন কি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে? আলিঙ্গন কি হতাশা এবং মনঃকষ্ট ভুলিয়ে মনকে শান্ত করে দিতে পারে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে মনস্তত্ত্বে আলিঙ্গনের প্রভাব নিয়ে আজ আলোচনা করব।
আলিঙ্গন একজন মানসিকভাবে বিচলিত মানুষের নার্ভাস সিস্টেমকে ধীরে ধীরে শান্ত হতে সহায়তা করে। মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, আলিঙ্গন এক ধরণের সাইকো থেরাপির মত কাজ করে যা আমাদের পূর্ণতা এবং সন্তুষ্টির অনুভূতি প্রদান করে। অনেক থেরাপিস্ট তাদের প্রশিক্ষণে আলিঙ্গনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে থাকেন। তাদের মতে, আলিঙ্গন একজন মানুষকে যে কোন ধরণের মানসিক ও শারীরিক পীড়ায় সান্ত্বনা প্রদান করে যত্নশীলতার অনুভব করায়। ছোট থেকে বড় সব বয়সী মানুষের মনের উপর এই প্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায় অভিভাবকেরা সন্তাদের যে কোন কথা বোঝানো বা শারীরিক বা মানসিক কষ্ট ভোলানোর লক্ষ্যে শিশুকে আলিঙ্গন করেন। আবার বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও ভালবাসা পূর্ণ আলিঙ্গন তাদের ভরসা যোগায়, হতাশা দূর করে। অনেক চিকিৎসকেরাই তাদের রোগীদের চিকিৎসা ভীতি ও হতাশা দূর করতে এবং দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য তাদের আত্মীয় স্বজন এবং কাছের লোকদের এ ধরণের সহানুভূতিশীল স্পর্শের পরামর্শ প্রদান করেন। তবে এ ধরণের আলিঙ্গনের জন্য মনস্তত্ত্ববিদ গণ কিছু নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন। একটি আলিঙ্গন তখনই একজন মানুষের চিত্তকে শান্ত করতে পারে এবং মানসিক ভাবে সব চাপ মুক্ত করতে পারে যখন সেটি পরিপূর্ণ রূপে স্নেহশীল এবং সহানুভূতিশীল হয়। আলিঙ্গন প্রদান করা ব্যক্তির সম্পূর্ণ মনোযোগ আলিঙ্গন কৃত ব্যক্তির মানসিক পীড়ার দিকে থাকতে হবে। এটি সম্পূর্ণ রূপে একটি আত্মিক যোগাযোগ যা দুজন মানুষের মধ্যে মানসিক ভাবের আদান প্রদানের কাজ করবে। তাকে বোঝাতে হবে যে তার মানসিক সুস্থতা সব থেকে বেশী জরুরী এবং কাম্য।
আলিঙ্গন একটি শারীরিক প্রক্রিয়া হলেও এর প্রভাব সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক। এটি একজন ব্যক্তির মাঝে পুনরায় আস্থা, বিশ্বাস এবং নির্ভরতা ফিরিয়ে আনতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই একটি আলিঙ্গন ব্যক্তির একাকীত্ব দূর করতেও সক্ষম। তার চিন্তাশক্তি এবং আচার আচরণ ও এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। আমাদের মস্তিষ্ক সব সময় বাস্তবের প্রতিই সাড়া দেয় এমন নয়। বরং যখন একজন মানুষ কল্পনা করে যে তিনি মোটেও একা নন এবং তার মাঝে সব কিছু পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি আছে, তখন তার মস্তিষ্ক সেটিকে বাস্তব হিসেবে পরিগণিত করে শরীরে সেভাবে প্রতিক্রিয়া প্রেরণ করে। এতে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়া ব্যক্তি পুনরায় মানসিক শক্তি ফিরে পায় এবং তার আচার আচরণে পরিবর্তন আসে। আর আলিঙ্গন ঠিক এভাবেই একজন মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সাপোর্ট প্রদান করে ও বদলে দেয়।
একজন মানুষের সব থেকে বেশী যেটি প্রয়োজন সেটি হল তার কাছের মানুষদের সাহচর্য, ভালবাসা এবং সহানুভূতি। যে কোন সমস্যায় একজন মানুষ যদি তার মনের জোর ধরে রাখতে পারে তাহলে তার পক্ষে সমস্যা মোকাবেলা করা খুব কঠিন কাজ হয়না। আর আলিঙ্গন মানুষের মনস্তত্ত্বে ঠিক এই ইতিবাচক পরিবর্তনই নিয়ে আসে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে