‘শিশু বিকাশ কেন্দ্রের সেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক’

0
61

দেশের ১৫টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন নিউরো ডেভেলপমেন্ট সমস্যাজনিত বিষয়ে সেবা নিচ্ছে অসংখ্য শিশু। বাংলাদেশে শিশুদের নিউরো ডেভেলপমেন্ট রেনেসাঁর প্রচারবিমুখ অগ্রপথিক ও শিশু বিকাশ কেন্দ্র ধারণার প্রবক্তা অধ্যাপক ডা. নায়লা জামান খানের মুখোমুখি হয়েছিলেন মনের খবর প্রতিনিধি মোঃ. মারুফ খলিফা।

কেমন আছেন?

ভালো আছি। আমি সবসময় ভালো থাকি।

শিশু বিকাশ কেন্দ্র শুরুর ভাবনা সম্পর্কে কিছু বলুন।

আমি ১৯৯১ সালে লন্ডন থেকে পড়ালেখা শেষ করে দেশে আসি। এখানে এসে আমার পুরোনো কর্মস্থল শিশু হাসপাতালে যোগদান করে দেখি আমি ছাড়া আর কোনো স্পেশালিস্ট নেই, তখন আমি একজন চাইল্ড সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করাই। তখন অটিজম শব্দটা এদেশে অচেনা, সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কে নেই কোনো ধারণা। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, মেডিক্যাল কমিউনিটিতেও তখন মানসিক রোগের ব্যাপারে ততটা সচেতনতা ছিল না। তাই চাইল্ড সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করাতে একটু বেগ পেতে হয়েছিল। আমি সবাইকে বুঝিয়েছিলাম, একটি বাচ্চার যখন বিকাশ হয় তখন তার ফিজিক্যাল বিকাশ হয়, ইমোশনাল বিকাশ হয়-সাথে বুদ্ধিগত বিকাশ হয়। আপনি যদি শিশুর বুদ্ধিগত বিকাশে সঠিকভাবে সাহায্য করতে চান তাহলে একজন চাইল্ড সাইকোলজিস্ট লাগবে। যা সবার কাছে সমাদৃত হয়েছিল।

এরপর নিউরোলোজিক্যাল ডিজঅর্ডার নিয়ে অনেকে আসতো। এর জন্য আমি থেরাপিস্টের দিকে নজর দেই। আমি অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, ফিজিও থেরাপিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্ট দরকার হয়। এরপর আমি প্রশিক্ষণ দিয়ে থেরাপিস্ট নিয়োগ দেই। আমি ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে এই সেবা চালু করলাম। পরে ২০০৩ সালে একটি জরিপ পরিচালনা করে দেখলাম হতদরিদ্ররা এই সেবা থেকে বনহিত হচ্ছে। তখন এটাকে দেশের বিভিন্ন অনহলে পৌঁছে দিতে সরকারকে প্রস্তাব দিলাম। ২০০৮ সালে সরকার সেটার অনুমতি দিল।

শিশু বিকাশ কেন্দ্র বর্তমানে কী অবস্থায় আছে?

সরকারের সহযোগিতায় এটি এখন ১৫টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলছে। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালেও শিশু বিকাশ কেন্দ্র চলছে। সরকারি হাসপাতালগুলোর কেন্দ্রগুলো এ বছরই রাজস্বভুক্ত হচ্ছে।

শিশু বিকাশ কেন্দ্র নিয়ে এখন কী ভাবছেন?

শিশু বিকাশ কেন্দ্র এখন সুপ্রতিষ্ঠিত। তবে এটা শুধু হাসপাতালকেন্দ্রিক। হাসপাতালে মানুষের আসতে হয়। আমি চাই এই সেবা কমিউনিটিতে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক। যেভাবে প্রাইমারি হেলথ কেয়ার বা ইপিআই কার্যক্রম চলছে। এ বিষয়ে আমাদের কিছু সিম্পল টুলস আছে। আমাদের কাছ থেকে সেটা নিয়ে ভূটান কাজ করছে। আমাদের সরকার চাইলে এটা নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।

আপনার কখনো মন খারাপ হয়?

নিশ্চয়ই হয়। আমি তো মানুষ, প্রত্যেক মানুষেরই মন খারাপ হয়।

মন খারাপ হলে কী করেন?

মন খারাপ হলে নিজে নিজে চিন্তা করি। মন খারাপের কারণটা বোঝার চেষ্টা করি। যেহেতু আমি নিজেও চিকিৎসক, তাই বিষয়টি আমার জন্য সহজ হয়। তারপর আমি বিষয়টি নিয়ে আমার সঙ্গীর সাথে, আমার বন্ধুদের সাথে কিংবা আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে শেয়ার করি। এমনকি আমার সহকর্মীদের সাথেও আমি শেয়ার করি।

মন ভালো রাখার জন্য আমাদের কী করা উচিত?

যেকোনো মানুষের জন্য মনটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকেরই নিজের মন ভালো রাখার জন্য ভাবা উচিত। প্রতিদিনই নিজের জন্য একটু করে সময় বের করে নেওয়া উচিত। সেটা হতে পারে বন্ধুদের সাথে আড্ডা কিংবা পার্কে হাঁটা।

রাগ কী হোন? হলে কী করেন?

রাগ তো হয়ই। কিন্তু রাগ তো কোনো সমাধান নয়। তাই রাগ লাগলেও ইতিবাচক চিন্তা করার চেষ্টা করি। আজকাল যেহেতু বয়স হয়েছে তাই রাগের অনেক বিষয় আমি ছেড়ে দেই। ওটাকে মাথায়ও রাখতে চাই না। বরং আমার চাহিদা এবং প্রাধান্য নিয়ে ভাবি। কোন জিনিসটা করা দরকার, সেটাতে ফোকাস করি।

স্মৃতিকাতরতা আছে আপনার?

স্মৃতিকাতরতা নেই। তবে ১৯৭১ সাল আমার কাছে বিশাল একটা আঘাতের ব্যাপার। আমি অনেক কিছু দেখেছি, তখন আমার আঠারো বছর বয়স ছিল। যেগুলো আমি এখানে বলতে চাই না। ওগুলো বলতে গেলে আমি অনেক ইমোশনাল হয়ে যাই। মুক্তিযুদ্ধে আমি আমার অনেক আপনজনদের হারিয়েছি। এটা আমার কাছে বড়ো একটা ব্যথা।

ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দেওয়ার জন্য মনের খবর’র পক্ষ থেকে আপনাকে জানাচ্ছি ধন্যবাদ।

মনের খবরকেও ধন্যবাদ।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

Previous articleডায়াবেটিস রোগীরা দুই–তিনগুণ বেশি হারে বিষণ্ণতায় ভুগে
Next articleআমি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হতাশাচ্ছন্ন হয়ে আছি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here