লার্নিং ডিসেবিলিটি কী?
লার্নিং ডিসেবিলিটি মানে শিক্ষাগ্রহণ সংক্রান্ত বিকার। নাম থেকেই অনুমেয় এই সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের পক্ষে কোন কিছু শিখতে সমস্যা হয়। সেটা পড়ালেখা থেকে শুরু করে শারীরিক ও মানসিক যেকোন ক্ষেত্রে হতে পারে। গুছিয়ে বলতে গেলে, যে সমস্যার কারণে শিশুদের লিখতে, পড়তে, কথা বলতে, কথার মানে বুঝতে, গণিতের সমীকরণ বুঝতে, বোধশক্তি অর্জন করতে ও মোটর স্কিল অর্জনে অসুবিধার মধ্যে পড়ে তাকেই লার্নিং ডিসেবিলিটি বলে।
লার্নিং ডিসেবিলিটির ধরণ
সমস্যার ধরণ ও প্রকারের উপর ভিত্তি করে লার্নিং ডিসেবিলিটি কয়েক প্রকারের হতে পারে। কারো মোটর স্কিলে সমস্যা হয়, কারও লিখতে ও পড়তে সমস্যা হয়, কেউ কেউ গণিতের সমীকরণ বুঝতে পারে না। এই সমস্যাগুলো যেমন একসাথে একজনের মাঝে দেখা যেতে পারে আবার কারও মধ্যে দু-একটি সমস্যা থাকতে পারে সেজন্যই লার্নিং ডিসেবিলিটির শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে। সাধারণত চার ধরণের লার্নিং ডিসেবিলিটি রয়েছে-
ডিসপ্রেক্সিয়া
ডিসপ্রেক্সিয়া শিশুদের মটর স্কিল অর্জনকে বাধাগ্রস্থ করে। মটর স্কিল আমাদের শরীরের অঙ্গের সক্ষমতা অর্জনে ও তার সমন্বয়ে সাহায্য করে। ডিসপ্রেক্সিয়ায় আক্রান্ত শিশুর লিখতে সমস্যা হয়, কোন কিছু ঠিকমতো ধরতে পারে না যেমন-কলম, চামুচ ইত্যাদি। এদের জন্য কথা বলা কঠিন হয়ে পড়ে। চোখের নাড়াচাড়ায়ও সমস্যা হয় তাদের।
ডিসলেক্সিয়া
ডিসলেক্সিয়া মূলত শিশুদের ভাষাগত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। এর ফলে শিশুদের পড়তে বা গুছিয়ে কথা বলতে সমস্যা হয়। শিশুরা নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না ও মুখোমুখি কথার সময় চুপ থাকে।
ডিসগ্রাফিয়া
ডিসগ্রাফিয়া মূলত লেখার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে। এতে শিশুদের হাতের লেখা অনেক বাজে হয়। বর্ণ চিনতে ও সঠিকভাবে লিখতে ভুল করে।
ডিসক্যালকুলিয়া
ডিসক্ল্যালকুলিয়া শিশুদের গণিতে দূর্বল করে দেয়। শিশুরা মূলত কোন কিছু গণনা করতে ও সংখ্যা চিনতে ভুল করে। আর একটু বড় হলে এরা সাধারণ গাণিতিক সমস্যা সমাধানে সমস্যার মুখোমুখি হয়।
লার্নিং ডিসেবিলিটির লক্ষণ
শিশুদের ১৩ বছর পর্যন্ত লার্নিং ডিসেবিলিটি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তারও বেশি বয়স পর্যন্তও থাকতে পারে। বয়সের সাথে সাথে লার্নিং ডিসেবিলিটির লক্ষণও কিছু পরিবর্তন হয়। কিন্তু লার্নিং ডিসেবিলিটি যেহেতু শিশুদের বিভিন্ন স্কিল উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে, সেহেতু এই সমস্যার ফল একজন মানুষকে দীর্ঘসময় বহন করতে হতে পারে।
প্রাক-প্রাথমিক বয়স (৩-৫ বছর)
• সহজ শব্দ উচ্চারণে সমস্যা হয়।
• নিজে নিজে জামা পরা, জিপার লাগানো, জুতার ফিতা বাঁধা ইত্যাদিতে সমস্যা হয়।
• আকৃতির ধরণ, বর্ণ ও সংখ্যা চেনা, সপ্তাহ ও বার চিনতে সমস্যার মুখোমুখি হয়।
• নিয়ম ও নির্দেশ বুঝে সে অনুযায়ী কাজ করতে পারে না।
• কথা বলতে দেরি হয়। কখনো কখনো দু-বছরেও শিশু কথা বলতে পারে না।
৫-৯ বছর
• ডান ও বামের তফাৎ বুঝতে পারে না। যেমন ২৫ কে ৫২ লেখা, b কে d লেখা।
• অংক করার সময় গুণ, ভাগ, যোগ, বিয়োগের তফাৎ বুঝতে সমস্যা হয়।
• বানান করে সঠিক উচ্চারণ করতে পারে না, পারলেও অনেক সমস্যা হয়।
• সময়ের হিসেব বুঝতে পারে না। অনেক বার বুঝিয়ে দেয়ার পরও কাটা দেখে সময় বুঝতে সমস্যা হয়।
৯-১৫ বছর
• শুনতে একই ধরণের শব্দের বানান গুলিয়ে ফেলে। যেমন-চাল কে ছাল, দ্বার কে ধার লেখা।
• স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে থাকে, তথ্য মনে রাখতে পারে না ও নিজে থেকে কোন কিছু বলতে পারে না।
• একই শব্দকে আলাদা আলাদা বানানে লেখে। নিজ হাতে লিখতে কষ্ট হয়। (এক্ষেত্রে শিশুরা অনেক শক্ত করে পেন্সিল ধরে)
• শারীরিক অভিব্যক্তি ও মুখের অভিব্যক্তি বোঝে না।
• পরীক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে ভয় কাজ করা, অনীহা প্রকাশ করা।
শিশুদের মাঝে এইসব লক্ষণ দেখা গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াটা জরুরী। যত দ্রুত এই সমস্যার লক্ষণ নির্ণয় করে তা সমাধান করা যাবে শিশু তত দ্রুত সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে।
লার্নিং ডিসেবিলিটি হওয়ার কারণ
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা লার্নিং ডিসেবিলিটির সুস্পষ্ট কারণ এখনো খুঁজে পান নি। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন জন্মের সময় কিছু জটিলতার কারণে লার্নিং ডিসেবিলিটিই হতে পারে।
• পরিবারের কারও আগে থেকেই এমন কোন সমস্যা থাকলে শিশুরও এই সমস্যা হতে পারে।
• শিশুকালে বড় কোন অসুখ যেমন-ভয়াবহ জ্বর, মাথায় বড় আঘাত পাওয়া ও অপুষ্টিতে ভুগলে।
• গর্ভাবস্থায় মা মাদক সেবন করলে।
• এডিএইচডিতে ভোগা প্রায় ১৫-৩০ শতাংশ শিশু লার্নিং ডিসেবিলিটিতেও ভুগতে পারে।
• জন্মকালে ওজন অনেক কম থাকলে লার্নিং ডিসেবিলিটি হতে পারে।
আর্থিক কারণ বা সামাজিক পটভূমি কিংবা সঠিক মনোযোগের কারণে কোন শিশুর পড়ালেখা সমস্যা হলে তা লার্নিং ডিসেবিলিটিতে পড়ে না। এডিএইচডির কারণেও কিছু শিশুর পড়ালেখায় সমস্যা হতে পারে সেটাও লার্নিং ডিসেবিলিটি না। কারণ এডিএইচডি আক্রান্ত শিশুরা পড়ালেখায় মনোযোগ দেয় না। কিন্তু লার্নিং ডিসেবিলিটিতে আক্রান্ত শিশুরা পড়ালেখায় মনোযোগ দেয়।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে