শিশুদের আচরণজনিত সমস্যা (এডিএইচডি) বিষয়ে বিএসএমএমইউ’তে বৈজ্ঞানিক সভা

0
47

শিশু মানেই উৎসাহ, উদ্দীপনা ও চঞ্চলতার প্রতীক। তবে সব শিশুই মাঝে মধ্যে কম বেশি বিব্রতকর ও পীড়াদায়ক আচরণ করতে পারে, যেমন- যা করতে বলা তা না করা, বিরক্ত বা উৎপাত করা, হঠাৎ হঠাৎ রাগী আচরণ করা ইত্যাদি। এই বিব্রতকর আচরণগুলো যখন অনেক বেশি তীব্র হয় এবং অনেক সময় ধরে থাকে তখন তাদের এই সমস্যাগুলোকে আচরণজনিত সমস্যা বা বিব্রতকর আচরণ বলে।
শিশুদের আচরণজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে এটেনশন ডেফিসিট হাইপারএক্টিভিটি ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি) অন্যতম। এডিএইচডি আক্রান্ত শিশুদের মনোযোগের অভাব থাকে, তারা অতি চঞ্চল প্রকৃতির হয় এবং এসব শিশুদের মধ্যে হুট করে কিছু বলে ফেলার প্রবণতা কাজ করে বলে জানিয়েছেন দেশের খ্যাতনামা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞগণ।
আজ সোমবার (২৮ অক্টোবর) ‘এডিএইচডি সচেতনতা’ মাস উদযাপনের অংশ হিসেবে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের ‘এডিএইচডি ক্লিনিক’ আয়োজিত ` Shades of ADHD: The Aspects’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা জানান, এডিএইচডি রোগের হার শতকরা ১ থেকে ৩ ভাগ। এই হার মেয়েদের তুলনায় ছেলে শিশুদের বেলায় ২.৫ থেকে ৩ গুণ বেশি। যদিও এডিএইচডি মস্তিষ্কের বিকাশজনিত রোগ তবে এর সাথে আচরণগত সমস্যা খুব বেশী পাওয়া যায়। এডিএইচডি এর সাথে আচরণগত সমস্যা থাকলে আক্রান্তরা ঝোঁকের বসে অনেক সময় অন্যকে ধাক্কা দেয়, ঢিল মারে, চিমটি কাটে, নিজেকে আঘাত করে, নেশা করে, এমনিক অনেক সময় তারা আত্মহত্যাও করে ফেলে।
সঠিক চিকিৎসায় এডিএইচডি সমস্যা নিরাময়যোগ্য। তবে এক্ষেত্রে তবে পিতা-মাতার দায়িত্ব সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বলে মত দেন আলোচকরা। তারা জানান, এডিএইচডি যত দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় যাবে, ততই ভালো।  এডিএইচডি আক্রান্ত শিশুকে অপরাধীর চোখে না দেখে তার আচরণ পরিবর্তনের জন্য সুযোগ দিতে হবে, সামাজিক দক্ষতা শেখার জন্য তাকে ছোট ছোট সামাজিক আচরণ শেখাতে হবে, ভালো কাজের জন্য প্রশংসা ও মন্দ কাজের জন্য সুবিধা প্রত্যাহার করতে হবে।

সভায় চেয়ারপার্সন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ্‌উদ্দিন কাউসার বিপ্লব।  প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. আব্দুস সোবহান, অধ্যাপক ডা. ফারুক আলম, অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন্নাহার, অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল ইসলাম, ডা. মহসিন আলী শাহ্। সভায় কনভেনর এর দায়িত্ব পালন করেন বিএসএমএমইউ এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট অধ্যাপক ডা. এম এস আই মল্লিক এবং কো-অর্ডিনেটর হিসেবে ছিলেন এডিএইচডি ক্লিনিকের চিফ অ্যান্ড কো-অর্ডিনেটর চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন র্মোশেদ।
ডা. নাহিদ মাহজাবিন র্মোশেদ বলেন, শিশুদের আচরণগত সমস্যা দূরীকরণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে এডিএইচডি ক্লিনিক। প্রতি রবিবার সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের ই-ব্লকের ৬ষ্ঠ তলায় ৬০৮ নম্বর রুমে এডিএইচডি ক্লিনিক পরিচালিত হয়।
সভায় Uncovered Aspects of ADHD: Depression and Suicide র্শীষক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেসিডেন্ট ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা জ্যোতি, ADHD and Disruptive Behaviors র্শীষক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেসিডেন্ট ডা. শারমিন আক্তার পলি এবং Parenting & Role Play র্শীষক সেশন পরিচালনা করেন মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহীদ। এই সেশন নাটিকার মাধ্যমে শিশুদের এডিএইচডি সমস্যা উপস্থাপন করা হয়।
পুরো সেমিনারের ইউটিউব লাইভে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রর্দশিত হয়। সেমিনারটি আয়োজনে সহযোগিতা করে হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটিডে।

Previous articleঢাবিতে ‘ডাউন সিনড্রোম সচেতনতা মাস’ উদযাপিত
Next articleহতাশা কাটাতে করণীয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here