শিক্ষার জন্য শিশুদের অতিরিক্ত মানসিক চাপ দেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘শিশুদের ওপর অতিরিক্ত চাপ দিলে শিক্ষার প্রতি তাদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হয়। তারা যেন শিক্ষাটাকে আপন করে নিতে পারে, নিজেদের মতো করে পড়তে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে অভিভাবকদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।’
বুধবার (১৩ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় শিশুদের চেয়ে তাদের মা-বাবা ও অভিভাবকদের মধ্যে বেশি প্রতিযোগিতা হয়। এই প্রতিযোগিতা তাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে শিক্ষাটাকে শিশুরা যাতে আপন করে নিতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রি-প্রাইমারি ও প্রাইমারি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। অনেক দেশে সাত বছরের আগে শিশুরা স্কুলে যায় না। কিন্তু আমাদের দেশের শিশুরা অনেক আগে থেকেই স্কুলে যায়। শিশুদের বয়স হওয়ার পর তাদের স্কুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে তার ব্যবস্থা নেবো। এরইমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার চালু করেছি। তিনি বলেন, আমরা ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করে দিয়েছি। প্রায় ১৫ হাজার নতুন প্রাইমারি স্কুল নির্মাণ করেছি। শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বাড়িয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় দেখেছি কোনও কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ওয়ানে ভর্তির জন্য ছাপানো প্রশ্নপত্রে শিশুদের ভর্তি পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। এটা তাদের ওপর মানসিক অত্যাচার। এটা করলে কীভাবে হবে। এটা বন্ধ করতে হবে। যারা বড়লোক তাদের শিশুদের বড় স্কুলে পড়াতে চান। কিন্তু সবার জন্য শিক্ষাকে সাধারণ করতে হবে। শিশুরা যেন হেসে খেলে শিখতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। স্কুলের বাচ্চারা ঝরে পড়ে কেন? তারা যেন ঝরে না পড়ে, সেজন্য নানারকম পদক্ষেপ নিয়েছি। স্কুলে বিস্কুট দেওয়া হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের মায়েদের কাছে বৃত্তির টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। প্রত্যেক মাকে সন্তানদের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। শিক্ষকদেরও উদ্যোগ নিতে হবে। এখন অনেক জায়গায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া বন্ধ হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী স্কুলে যায়। স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে, প্রতিবন্ধীরাও মানুষ। তাদের দায়িত্ব স্বাভাবিক শিক্ষার্থীই নেবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষা-ভীতি দূর করার জন্য আমরা ক্লাস ফাইভ ও এইটে পরীক্ষা নিচ্ছি। হঠাৎ করে এসএসসি পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীরা ভয় পেতো। তাছাড়া ফাইভ ও এইটের পরীক্ষায় পাওয়া সার্টিফিকেট ঘরে টাঙিয়ে রাখলেও তাতে শক্তি আসে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১৮-২৩ সাল পর্যন্ত চতুর্থ শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। শিশুদের কল্যাণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের ইউনিফর্ম, ব্যাগ, পরীক্ষার ফি দিচ্ছি। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে বই তৈরি করে দিচ্ছি। প্রতিবন্ধীদের বই তৈরি করে দিচ্ছি। বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারা দিন শুধু পড় পড় বললে ভালো লাগে না। খেলাধুলারও প্রয়োজন রয়েছে। আমরা প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম করবো, যেন তারা খেলতে পারে। দেশি খেলার যেন চর্চা করতে পারে। প্রত্যেকটি স্কুলে শারীরচর্চা করা সর্বজনীন করে দিচ্ছি। স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে ছেলেমেয়েরা ডিসিপ্লিন শেখে। প্রত্যেকটা বিদ্যালয়ে যেন স্কাউট থাকে তার জন্য আমরা কাজ করছি।’
‘আমাদের সোনামণিরা আমদের ভবিষ্যৎ। তোমরাই (শিশুদের উদ্দেশে) আমাদের ভবিষ্যৎ। সবাইকে আশীর্বাদ করছি।’
শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা মানুষ গড়ার কারিগর। দেশকে যাতে আগামী দিনে আজকের শিশুরা এগিয়ে নিতে পারে, সেভাবে তাদের গড়ে তুলবেন।’ তিনি বলেন, ‘আজকের শিশুরাই দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবে। যাতে কেউ দেশকে অবহেলা করতে না পারে। জাতির পিতা যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন, এই শিশুরাই তা গড়ে তুলবে।