লকডাউনে সন্তানদের যা শেখাতে পারেন

0
26
মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সন্তানকে সচেতন করার কৌশল

দেশব্যপি সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়ারও বেশ কিছুদিন আগ থেকেই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে কর্মজীবীদের আগে থেকেই শিক্ষার্থীরা হয়েছে গৃহবন্দী। প্রাথমিক স্কুলের শিশুদের ঘরে পড়তে বসাতে গিয়ে হয়ত অনেক বাবা-মাই হিমশিম খাচ্ছেন।
লকডাউন’য়ের কারণে বাইরে আড্ডা নেই, ঘুরতে যাওয়া নেই, নেই খেলতে যাওয়ার উপায়। তবে এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে বাবা-মায়েরাও পারেন তাদের সন্তানকে ঘরের টুকিটাকি কাজ শেখাতে। ভবিষ্যত জীবনের জন্য তাদের প্রস্তুত করতে।
পরিবার-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে জানানো হল এমন কিছু কাজ সম্পর্কে।
মজা করে বই পড়া:  ক্লাস, কোচিং, প্রাইভেট, হোমওয়ার্ক, অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদির চাপে সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরই ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়। তার মধ্যে স্মার্টফোন, সোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন ডিজিটাল মিডিয়া ক্রমেই মানুষকে বই পড়া থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের খুব কম সংখ্যকই নিজের ভালোলাগা থেকে বই পড়ে, যা পড়ে তা বাধ্য হয়ে।
তবে ‘লকডাউন’য়ের এই অফুরন্ত সময়ে স্মার্টফোনে সোশাল মিডিয়ায় স্ক্রল না করে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে। বাবা-মা কিংবা যে কেউ পরিবারের কিশোর-কিশোরীদের বই পড়তে উৎসাহীত করতে পারেন, জ্ঞান ও বিনোদনের এই বিশাল জগতের সঙ্গে তাদের পরিচয় করান। যেসব বিষয়ে তাদের আগ্রহ, সেবিষয়ক ভালো একটা বই তাদের খুঁজে পেতে সাহায্য করুন।
সময় ব্যবস্থাপনা: শিক্ষার্থীর বেশিরভাগ দিনই কাটে পড়াশোনার ব্যস্ততায়। তবে এখন তাদের সময় যেমন অফুরন্ত তেমনি সময়ানুবর্তীতার যে অভ্যাস হয়েছিল তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও বেশি। তাই চাপে পড়ে নয়, সেচ্ছায় সময়ের মুল্য দেওয়া, সময়ের কাজ সময়ে করা, অলস সময় কাটানোর লোভনীয় হাতছানি ভুলে কাজে মনযোগী হওয়া ইত্যাদির অনুশীলন করার এখনই শ্রেষ্ঠ সুযোগ। বাবা-মা কিংবা নিজের উৎসাহেই কিশোর-কিশোরীদের উচিত দৈনন্দিন জীবনের রুটিন বানানো। ঘুম, খাওয়া, পড়াশোনা, ঘর গোছানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, বিনোদন সবকিছুর জন্য সময় বরাদ্দ থাকবে এই রুটিনে। আর আপাতদৃষ্টিতে সেটা মেনে চলা অপ্রয়োজনীয় মনে হলেও তা মানতে হবে।
গৃহ পরিচালনায় হাতেখড়ি: পরিণত বয়সে আপনার সন্তানকেই একসময় নিজের ঘরের দায়িত্ব নিতে হবে, যার হাতেখড়ি হতে পারে এখনই। রান্না করা, ঘর গোছানো ছাড়াও আর অনেক দায়িত্ব একজন গৃহ পরিচালকের নিতে হয়। সংসারে কোন জিনিষগুলো নিত্য ব্যবহার্য ও আবশ্যক, সেগুলোর খরচ কেমন, সেই খরচ সামলানোর কতটুকু সামর্থ্য তার আছে ইত্যাদি বিষয় জানতে হবে।
শুরুটা হতে পারে এক সপ্তাহের তিন বেলার খাবার পরিচালনার মাধ্যমে। সংসার খরচের বাজেট করতে দিতে পারেন, বাজারের সিদ্ধান্ত তার কাঁধে দিতে পারেন। নতুন এই দায়িত্ব সন্তানের জন্যও একটা আনন্দের বিষয় হতে পারে।
হতাশা সামলানো: জীবনের প্রতিটি পর্যায়েই কমবেশি হতাশা উঁকি দিয়ে যায়। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে হতাশা ছেয়ে আছে প্রতিটি পরিবারকেই। এসব হতাশায় পরিবারের কিশোর-কিশোরীরা হতাশাগ্রস্ত হতেই পারে। আবার বড়দের সাহায্যে এই হতাশাকে হাসিমুখে মোকাবেলা করাও শেখা যেতে পারে এই সময়ে। যে বিষয়টি নিয়ে যারা হতাশ তার বিকল্প খুঁজে বের করতে শেখান, হতাশার মাঝেও আশার আলো দেখতে শেখান।
গাড়ির যত্ন নেওয়া: যাদের ব্যক্তিগত যানবাহন যেমন- গাড়ি, মোটরসাইকেল, সাইকেল ইত্যাদি আছে তাদের জন্য এই সময়টা শিক্ষণীয় এবং আনন্দের হতে পারে। গ্যারেজের ভেতরে থেকেই কিশোরী-কিশোরীদের সেগুলো চালানো শেখানো যেতে পারে। সেই সঙ্গে সেগুলোর কীভাবে যত্ন নিতে হয়, টুকিটাকি মেরামতের কাজ ইত্যাদি নিজে যতটুকু জানেন ততটুকুই পরিবারের কিশোর-কিশোরীদের শেখান। এতে আপনাদের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার হবে, নতুন কিছু শেখাও হবে।
অর্থ ব্যবস্থাপনা: পরিবারিক আর্থিক সাহায্যের ছায়া থেকে বেরিয়ে সব সন্তানকেই একদিন সংগ্রামের পথ বেছে নিতে হবে। তবে সেদিন যেন সে হোঁচট না খায় এবং আপনার কষ্টার্জীত অর্থ যেন অপচয় না হয় সেই লক্ষ্যে তাদের শেখাতে পারেন অর্থের সঠিক ব্যবস্থাপনা।
উপার্জন যত বেশিই হোক, দিনের পর দিন সংসারের খরচ নির্ভেজালে বয়ে নিয়ে বেড়ানো কখনই সহজ কাজ হয় না। আর তার জন্য পরিবারের ছোটদের প্রস্তুত করাটা গুরুত্বপূর্ণ।
ঘর গোছানো: প্রতিটি মায়েরই সন্তানের ওপর থাকা সাধারণ অভিযোগ হল ঘর না গোছানো। আর এখন যখন সবাই ঘরবন্দী, তাদের ঘর গোছানোর অভ্যাসে গড়ে তোলার এর থেকে ভালো সময় আর হয়না। তাদের পুরানো কাপড় আলাদা করাতে পারেন তাদেরকে দিয়েই, যা সুবিধাবঞ্চিতদের দান করা যেতে পারে। নিজের ঘরটা জীবাণু মুক্ত করার দায়িত্ব দিতে পারেন তাদের ঘাড়েই, সম্ভব হলে পুরো বাসা।
জরুরি অবস্থা সামলানো: ঘরের খুঁটিনাটি কাজ জানা উচিত কিশোর-কিশোরীদেরও। যেমন- বিদ্যুতের ‘মেইন সুইট’ বন্ধ ও চালু করা, লাইট বদলানো, সাধারণ ক্ষত ড্রেসিং করা, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় ভারি বৈদ্যুতিক যন্ত্র বন্ধ রাখা, অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র চালানো ইত্যাদি। ডায়বেটিস মাপা, প্রেশার মাপা, নাড়ি মাপা, ‘সিপিআর’ ইত্যাদিও শেখানো যেতে পারে।

Previous articleউদ্বেগ নিরাময়ে আত্মসহায়তার কৌশল
Next articleমোবাইলে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে মাইন্ড-ব্লোয়িং সাইকোলজিক্যাল টিম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here