রাগ এবং আক্রমনাত্মক মনোভাবের মাঝে পার্থক্য রয়েছে

0
325
রাগ এবং আক্রমনাত্মক মনোভাবের মাঝে পার্থক্য রয়েছে
রাগ শুধুমাত্র একটি অনুভূতি কিন্তু আক্রমণাত্মক মনোভাব সেই অনুভূতির একটি চরম নেতিবাচক বহিঃপ্রকাশ।

আমরা প্রায়শই রাগ এবং আক্রমণাত্মক মনোভাবকে এক করে ফেলি। কিন্তু আদতে এই দুটি বিষয় মোটেও এক নয়। আমাদের অন্যান্য মানসিক প্রতিক্রিয়ার মতো রাগও একটি প্রতিক্রিয়া। সাধারণত কারও সাথে মতের অমিল হলে বা কোন কিছু অনিচ্ছা স্বত্বেও আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হলে আমাদের মাঝে রাগের মতো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এটি ভালোবাসা, আনন্দ কিংবা দুঃখের মতোই একটি সাধারণ মানসিক প্রতিক্রিয়া বা অনুভূতি। তবে এই অনুভূতিকে বেশ সহজেই মানসিক চাপ এবং ধৈর্য হীনতার চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়। আর এই অবাধ্য রাগের ধ্বংসাত্মক এবং হিংস্র রুপ হচ্ছে আক্রমণাত্মক মনোভাব। আক্রমণাত্মক মনোভাবের ফলে একজন মানুষ তার রাগের চরম সীমায় পৌঁছে গিয়ে যে কোন নেতিবাচক অবস্থা সৃষ্টি করতে সক্ষম। এমন কি মৃত্যুর মতো নেতিবাচক ঘটনাও এর ফলে ঘটতে পারে। কিন্তু সাধারণ অনুভূতি হিসেবে রাগ হলেও সেটিকে অনেকেই প্রকাশ না করেও থাকে বা প্রকাশ করলেও সেটি ধ্বংসাত্মক রুপ নেয় না।

একজন মানুষের বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময়ে যে কারও উপর রাগ হতেই পারে। অনেকে সেটিকে প্রকাশ করে আবার অনেকে করেনা। যারা প্রকাশ করে তাদের আচরণ অনেক সময়ই স্বাভাবিক থাকেনা এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে কিংবা অনিচ্ছাকৃত ভাবে তারা অনেকের মনে কষ্ট দিয়ে ফেলে। এজন্য অনেকের পরে অনুশোচনা বোধ ও হয়। তাই বলা যায় রাগ কোন পূর্ব পরিকল্পিত অনুভূতি নয় বরং কোন পরিস্থিতির প্রতি তার আকস্মিক প্রতিক্রিয়া। আবার অনেকে রাগকে মনের মাঝে গোপন করে রাখেন। এসব মানুষের পরবর্তীতে বিষণ্ণতার মতো মানসিক পীড়ার সম্মুখীন হবার আশংকাও থাকে। তবে এক জন বিবেক সম্পন্ন মানুষ কখনোই রাগের মতো অনুভূতিকে আক্রমণাত্মক কোন মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে ব্যবহার করবে না।

অপর দিকে একজন মানুষ যখন অন্যদের মতামত বা চিন্তাভাবনাকে সম্মান প্রদানে ব্যর্থ হয় এবং স্বেচ্ছাচারিতার চরম সীমায় পৌঁছে যায় তখন তার রাগ বিরোধপূর্ণ আচরণকে আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশের মাধ্যমে এক ধ্বংসাত্মক রুপ প্রদান করে। আক্রমণাত্মক মনোভাব সব সময় যে অনুভূতির মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে তা নয়। বরং এটি মৌখিক বা শারীরিক কাজের রুপ ও নিতে পারে। একজন আক্রমণাত্মক ব্যক্তির আচরণ একটি হিংস্র পশুর মতো হয়। সে তার ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ না করে বরং সেটিকে কারও সম্মান হানী বা ক্ষতি সাধনে ব্যবহার করে। এ ধরণের মনোভাব বা আচরণ প্রায়শই বিভিন্ন বিরোধ পূর্ণ পরিস্থিতি বা লড়াইয়ে রুপ নেয়। আক্রমণাত্মক মনোভাব ব্যক্তিকে তার হিতাহিত জ্ঞান শূন্য করে দেয় এবং এটি এর সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণেও সক্ষম হয়। এর প্রভাব অত্যন্ত নেতিবাচক এবং ভীষণ ধ্বংসাত্মক।

একজন মানুষের মাঝে তার অনুভূতি গুলো প্রকাশের নিয়ন্ত্রণ শক্তি অর্থাৎ সংযম থাকা উচিৎ। মানুষ যখন রাগের বশবর্তী হয়ে কিছু করে তখন তার কৃত কার্জের উপর তার নিয়ন্ত্রণ থাকেনা এবং সেটি আক্রমণাত্মক রুপ নেয়। আর এটি কখনোই কাম্য নয়। রাগ কিংবা অন্য যে কোন অনুভূতি কিভাবে প্রকাশ করবেন বা এর নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই থাকা উচিৎ। আপনিই সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনার প্রতিটি কাজকে নিয়ন্ত্রণ করবেন। আর এটি হলে কখনোই আপনার রাগ আক্রমণাত্মক মনোভাবের মতো কোন  ধ্বংসাত্মক রুপ নেবেনা।

যখন আমরা এটা বুঝতে পারি যে রাগের মতো অনুভূতি গুলি আমাদের নিয়ন্ত্রণ না করার ফলেই আক্রমণাত্মক মনোভাব বা আচরণে রূপে নেয়, তখনই রাগকে সাধারণ অনুভূতির মতো প্রকাশে সক্ষম হই। যখন রাগ স্বাভাবিক অনুভূতির মতো প্রকাশিত হয় তখন সেটি আর ধ্বংসাত্মক কোন ফল বয়ে নিয়ে আসেনা বরং সেটি জীবনকে আরও উন্নত করে, লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হয় এবং মানুষের আচরণকে ইতিবাচক দিকে ধাবিত করে। তাই বলা যায়, রাগ অন্যান্য স্বাভাবিক অনুভূতির মতোই একটি অনুভূতি। আর আমরাই নির্ধারণ করি যে সেটি আমাদের জন্য ইতিবাচক হবে না নেতিবাচক।

সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/the-i-m-approach/202102/anger-is-only-emotion

অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন ক্রয়ের বিশেষ অফার

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleসম্পর্কে মানসিক চাপের প্রভাব এবং জীবন সঙ্গীর করণীয়
Next articleসন্তানের সাথে সুন্দর সম্পর্ক রাখার কিছু উপায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here