পঞ্চাশ বয়সের একজন ভদ্রলোক হাসপাতালে ভর্তি হন কভিড ১৯ পজিটিভ নিয়ে। ভর্তির সময় থেকেই কাশি এবং জ্বর ছিলো। তার এক্সরে করে দেখা গেলো দুই ফুসফুসই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।
রোগীকে অক্সিজেন দেয়া হলো। সাথে এন্টিবায়োটিক এবং এন্টিভাইরাল মেডিসিন। ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছিলো রোগীটির। জ্বর কাশি কমতে শুরু করলো। হঠাৎ করেই একদিন রোগীটির প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। নার্স দ্রুত অক্সিজেন বাড়িয়ে দিলেন এবং কর্তব্যরত চিকিৎসকে খবর পাঠালেন।
চিকিৎসক এসে দেখলেন রোগীর অনেক শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। জিহবা নীল হয়ে গেছে। অক্সিজেন সেচুরেশন ৪৮% এ নেমে এসেছে। তিনিও অক্সিজেনের পরিমান বাড়িয়ে দিলেন। আর কিছু করার আগেই লক্ষ্য করলেন রোগীটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন।
চিকিৎসকের একটিই চিন্তা মাথায় ঘুরছিলো রোগীটির হঠাৎ এত শ্বাসকষ্ট এর কারন কি ছিলো? মৃত ব্যাক্তির পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট এলো। যাতে পাওয়া গেলো ফুসফুসের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে রোগীটির মৃত্যু হয়েছে। মেডিকেলের ভাষায় Massive Pulmonary Embolism।
কভিড ১৯ আক্রান্ত অনেক রোগীদের রক্ত জমাট বাঁধা জটিলতা দেখা যাচ্ছে। ইউরোপীয় গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জটিল কভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ রোগী রক্ত জমাট বাঁধা জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছেন। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে দেখা গেছে এদের ফুসফুসে অনেক ছোট ছোট রক্তের জমাট বাধা।
কভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ হলো Pulmonary Embolism। কভিড-১৯ রোগীদের রক্ত নালীর প্রদাহের ফলে রক্তের কনিকা এবং কিছু কেমিক্যাল মিলে তৈরি হয় Blood clot। এই জমাট বাঁধা রক্ত, রক্তনালির মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পৌঁছিয়ে থাকে এবং সেখানকার রক্ত চলাচলের বাধার সৃষ্টি করে থাকে। ফুসফুসের রক্ত চলাচলের বাধার সৃষ্টি করলে আমরা এটাকে বলি Pulmonary embolism। এতে করে ফুসফুসের অক্সিজেন চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। এর ফলে রোগীদের প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। যে পাশে রক্ত চলাচলের বাঁধা পায় সে পাশে তীব্র বুকের ব্যাথা হয়ে থাকে।
আমরা CT Pulmonary angiogram করে এই রোগ নির্নয় করতে পারি। তাছাড়া D-dimer, ECG, CXR পরীক্ষার মাধ্যমেও ধারনা পেতে পারি। এই জমাট বাধা রক্তের পরিমান যদি অনেক বড় হয় তবে রোগীর হঠাৎ করেই মৃত্যু হতে পারে। কভিড ১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের এই রক্ত জমাট বাধার জটিলতার ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্টোকের ঝুঁকিও বাড়াতে দেখা গিয়েছে। তাই করোনা চিকিৎসায় এন্টি কগোলেন্ট একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বিভিন্ন দেশের গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসকল রোগীদের এন্টি কগোলেন্ট দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে তাদের মৃত্যুর হার, যাদের এই মেডিসিন দেওয়া হয়নি তাদের থেকে কম। অর্থাৎ এন্টি কগোলেন্ট মেডিসিন প্রয়োগের মাধ্যমে রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে করোনা রোগীদের মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব। এন্টি কগোলেন্ট মেডিসিন অনেক ধরনের হয়ে থাকে। এদের মধ্যে Low Molecular weight Heparin (LMWH) এর ব্যাবহার করা হয়েছে বিভিন্ন দেশের গবেষণায়।
আমাদের দেশের গাইড লাইনেও এই মেডিসিনের ব্যাবহার সংযুক্ত করা হয়েছে। করোনা বিরোধী যুদ্ধে এই মেডিসিন আমাদের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করছি। সবশেষে বলবো করোনা মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। করোনা সংক্রমণ রোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধই হলো এই মহামারি থেকে মুক্তির একমাত্র রাস্তা।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা বা অন্য যেকোন ধরনের দায় সর্ম্পূণই লেখকের।