যৌন অক্ষমতা বা ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা লিঙ্গ উত্থান সমস্যার কারণে বৈবাহিক জীবনে অশান্তি নেমে আসে, যার পরিণাম হতে পারে বিবাহবিচ্ছেদ। যেকোনো বয়সে যৌন অক্ষমতার চিকিৎসা করা যায় এবং এ সমস্যায় জর্জরিত অনেক পুরুষ যারা চিকিৎসা গ্রহণ করছে তারা স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ায় ফিরে আসছে।
পুরুষদের অনিয়মিত ইরেক্টাইল ডিসফাংশন হতে পারে। যদি পুরুষেরা আপনাকে সত্য বলে, তাহলে জানবেন যে তারা জীবনে অন্তত একবার হলেও যৌন অক্ষমতায় ভুগেছে। প্রত্যেকটি যৌন সহবাস পারফেক্ট নয়। ইরেক্টাইল ডিসফাংশন হলে যৌনসংগমের সুখ বিনষ্ট হয়।
একটা সময় বিশেষজ্ঞরা ধারণা করতেন যৌন অক্ষমতার মূল কারণ হলো মানসিক অবনতি। কিন্তু বর্তমানে মেডিক্যাল কমিউনিটি স্বীকার করছে যে, ওষুধ, জীবনযাত্রার ধরন অথবা ইনজুরি হচ্ছে বেশিরভাগ ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের কারণ। ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা যৌন অক্ষমতা দূর করতে বিশেষজ্ঞদের দেওয়া পরামর্শ তুলে ধরা হলো।
নিজেকে সময় দিন
১৮ থেকে ২০ বছর বয়সের পুরুষদের লিঙ্গ উত্থিত হতে কয়েক সেকেন্ড সময় নেয় এবং ত্রিশ থেকে চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষদের ক্ষেত্রে এক বা দুই মিনিট সময় নিতে পারে। কিন্তু এক বা দুই মিনিট পরও ষাটোর্ধ্ব কোনো পুরুষের লিঙ্গ উত্থিত না হওয়ার মানে এই নয় যে সে যৌন ক্রিয়ায় অক্ষম। তার দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
বীর্য নির্গত হওয়ার পর আবার লিঙ্গ খাড়া হওয়া সময়ের পরিসর বয়সভেদে ভিন্ন হয়। ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সের পুরুষদের ক্ষেত্রে লিঙ্গ পুনরায় উত্থিত হতে একদিন বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে। এটি হচ্ছে বয়স্কতার স্বাভাবিক প্রভাব।
আপনার ওষুধ বিবেচনা করুন
যৌন অক্ষমতার মূল কারণ হতে পারে প্রেসক্রিপশন ওষুধ অথবা ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ যেমন- অ্যান্টিহিস্টামিন, ডায়ুরেটিক, হৃদরোগের ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ অথবা ঘুমের ওষুধ। সব পুরুষদের ক্ষেত্রে এসব ওষুধের প্রতিক্রিয়া একই রকম নয়। পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষদের ক্ষেত্রে ওষুধ প্ররোচিত ইরেক্টাইল ডিসফাংশন সর্বাধিক কমন।
প্রায় ১০০টি ওষুধ শনাক্ত করা হয়েছে যা যৌন অক্ষমতা ঘটাতে পারে। যদি আপনি সন্দেহ করেন যে আপনার ওষুধের কারণে এ সমস্যা হচ্ছে, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন এবং জেনে নিন যে ওষুধের ডোজ বা ওষুধ পরিবর্তন করতে হবে কিনা।
অ্যালকোহল সীমিত করুন
অ্যালকোহল যৌনসহবাসের আকাঙ্ক্ষা জাগায় কিন্তু পারফরম্যান্স হরণ করে। এর কারণ অ্যালকোহল হচ্ছে নার্ভাস সিস্টেম ডিপ্রেস্যান্ট। এটি উত্তেজনাকর প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ করে এবং উত্তেজনার বিপরীত অবস্থা সৃষ্টি করে। এমনকি ককটেল আওয়ারের সময় দুটি ড্রিংক উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অত্যধিক অ্যালকোহল হরমোন ভারসাম্যহীনতার কারণ হবে। দীর্ঘদিন অ্যালকোহল স্নায়ু ও যকৃত ড্যামেজ হতে পারে। যকৃত ড্যামেজের কারণে পুরুষদের মধ্যে অত্যধিক মাত্রায় নারীর হরমোন নিঃসরণ হয়। সঠিক অনুপাতে টেস্টোস্টেরন ও অন্যান্য হরমোন ছাড়া আপনার লিঙ্গ স্বাভাবিকভাবে উত্থিত হবে না।
ধমনীর দিকে খেয়াল রাখুন
পেনিস হচ্ছে ভাসকিউলার অর্গান বা সংবহনতান্ত্রিক অঙ্গ। যা আপনার ধমনীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তা পেনিসের দিকে রক্তপ্রবাহকেও বিঘ্নিত করতে পারে। আটত্রিশোর্ধ্ব সকল পুরুষের পেনিসের দিকে রক্ত সরবরাহ করা ধমনী কিছুটা সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। তাই আপনি কি খাচ্ছেন তাতে মনোযোগ দিন। যৌন অক্ষমতার প্রধান কারণগুলোর একটি হচ্ছে উচ্চ কোলেস্টেরল। এটি ইরেক্টাইল টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ধূমপান করবেন না
ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের এক গবেষণায় গবেষকরা অধূমপায়ী লোকদের দুটি দলে ভাগ করেন- একদলকে নিকোটিন চুয়িংগাম এবং অন্যদলকে প্ল্যাসেবো চুয়িংগাম চিবাতে বলা হয়। যারা নিকোটিন চুয়িংগাম চিবিয়েছে তাদের যৌন উত্তেজনা প্ল্যাসেবো চুয়িংগাম চিবানো পুরুষদের তুলনায় ২৩ শতাংশ কমে যায়।
ওজন হ্রাস করুন
গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্থুলকায় পুরুষদের যৌন অক্ষমতার সমস্যা বেশি হয়। যদি আপনি আপনার আদর্শ ওজনের চেয়ে ২০ শতাংশ ভারী হন, তাহলে কয়েক পাউন্ড ওজন কমানোর কথা বিবেচনা করুন। ফিট শরীর কেবলমাত্র ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের সমস্যা কমায় না, আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি করে। একজন পুরুষ যতবেশি শারীরিকভাবে ভালো অনুভব করবে, সে ততবেশি নিজেকে যৌনসঙ্গমের জন্য ফিট মনে করবে।
বেশি করে সংগম করুন
গবেষণায় পাওয়া গেছে, যারা একসপ্তাহে একবারও যৌনসহবাস করেনি তাদের মধ্যে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন সমস্যা সপ্তাহে একবার যৌনসহবাস করা পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ ছিল। গবেষকরা সিদ্ধান্তে আসেন যে, নিয়মিত যৌনসঙ্গম পুরুষকে যৌন অক্ষমতা থেকে রক্ষা করে।
রিল্যাক্সে থাকুন
লিঙ্গ উত্থানের জন্য মনকে রিল্যাক্সে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার নার্ভাস সিস্টেম দুই রকম মোডে চালিত হয়: একটি হচ্ছে সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম এবং অন্যটি হচ্ছে প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম। যখন আপনার সিম্প্যাথেটিক নার্ভ নেটওয়ার্ক প্রভাব বিস্তার করে, তখন আপনার শরীর আক্ষরিক অর্থে সতর্ক থাকে। অ্যাড্রিনাল হরমোন আপনাকে ফাইট অথবা ফ্লাইট করার জন্য প্রস্তুত রাখে।
স্নায়বিক দুর্বলতা এবং উদ্বিগ্নতা আপনার ডাইজেস্টিভ সিস্টেম এবং পেনিস থেকে রক্ত পেশীর দিকে টেনে আনে, যার ফলে লিঙ্গ উত্থানে বাধা পড়ে। উদ্বিগ্নতা আপনার সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে উত্তেজিত করে। কিছু পুরুষদের ব্যর্থতার ভয় এতটাই অভিভূত করে রাখে যে তাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে অ্যাড্রিনাল হরমোন নরোপিনেফ্রাইন নিঃসরণ হয়, যা লিঙ্গ খাড়া হওয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
যৌন অক্ষমতা থেকে রক্ষা পেতে রিল্যাক্সে থাকুন এবং আপনার প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পৌঁছানো সিগন্যাল রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করতে পেনিসের আর্টারি ও সাইনাসকে নির্দেশ দেবে।
বডি স্টিমিউল্যান্ট এড়িয়ে চলুন
বডি স্টিমিউল্যান্ট বা শরীর চাঙ্গাকারী খাবার এড়িয়ে চলতে পারেন। যেমন- ক্যাফেইন সমৃদ্ধ কফি। এসব খাবার যৌন অক্ষমতার কারণ হতে পারে। যৌন সহবাসের সময় রিল্যাক্সে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। স্টিমিউল্যান্ট পেশীকে সংকুচিত করে কিন্তু লিঙ্গ উত্থিত হওয়ার পূর্বে পেশীকে অবশ্যই রিল্যাক্সে রাখা উচিত।
ফোরপ্লে খেলুন
রিল্যাক্স হওয়ার একটি উপায় হচ্ছে, সঙ্গীকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে ফোরপ্লে। লিঙ্গ উত্থিত হচ্ছে কিনা এ চিন্তা বাদ দিয়ে একে অপরকে উপভোগ করুন। ত্বক হচ্ছে শরীরের সবচেয়ে বড় সেক্সুয়াল অর্গান, পেনিস নয়।