যেভাবে শেষ হতে পারে কভিড-১৯

করোনার নতুন পাঁচ উপসর্গ
করোনার নতুন পাঁচ উপসর্গ

আমরা জানি কীভাবে কভিড-১৯ মহামারী শুরু হয়েছিল। চীনের উহান অঞ্চলের একটি বাদুড় থেকে শুরু হয়ে এটি মানবদেহে আসে। এরপর ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আমরা জানি না কীভাবে এই মহামারী শেষ হবে। নতুন এই করোনাভাইরাসটি সহজেই ছড়িয়ে পড়া, সাধারণ উপসর্গ দিয়ে শুরু হয়ে মারণঘাতী হয়ে ওঠা এবং বিশ্বকে বিপর্যস্ত করার ঘটনা—সব মিলিয়ে বেশ অভূতপূর্ব।

ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এপিডেমিওলজিস্ট ও ইবোলুশনারি বায়োলজিস্ট সারাহ কোবেই বলেন, এটি খুবই স্বতন্ত্র ও একেবারে নতুন পরিস্থিতি।

কিন্তু অতীতের মহামারী ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। কোবেই ও অন্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে তা নির্ভর করছে জীবাণুর বিকাশ এবং মানুষ কীভাবে তাতে সাড়া দিচ্ছে তার ওপর। এটি বায়োলজিক্যাল ও সামাজিক দুদিক থেকেই।

ছড়িয়ে পড়ার সমস্যা: ভাইরাস সবসময় নিজেকে পরিবর্তন করতে থাকে। যেসব ভাইরাস মহামারীর সূচনা করে তারা এতটাই স্বকীয় যে মানুষের স্বাভাবিক প্রতিরোধক্ষমতা একে দ্রুত চিনতে পারে না। তারা শরীরকে বাধ্য করে নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে। পাশাপাশি নতুন অ্যান্টিবডি এবং অন্য প্রতিরোধ পদ্ধতিসহ যুক্ত হয়, যা প্রতিক্রিয়া তৈরি করে এবং শত্রুকে আঘাত করে। মানুষের বড় একটা অংশ সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। পাশাপাশি সামাজিক কিছু বিষয় যেমন ভিড় ও ওষুধের অভাবে এ সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিরোধক্ষমতা দ্বারা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা কিনা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে এবং ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধ করে। কিন্তু এতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে এবং এটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে।

রোগের সঙ্গে বাস করতে শেখা: আধুনিক সময়ে মহামারীর সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণ হচ্ছে ১৯১৮-১৯১৯ সালের এইচ১এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জা। ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্তাদের হাতে এখনকার সময়ের চেয়ে খুব কমই হাতিয়ার ছিল। যার ফলে মহামারী আক্রান্ত করেছিল ৫০০ মিলিয়ন মানুষকে এবং ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করেছিল। এটা কেবল তখনই থেমেছিল যখন আক্রান্তরা প্রাকৃতিকভাবে প্রতিরোধ সক্ষমতা অর্জিত হয়েছিল। এই রোগটি স্থানীয় আকারে মৌসুমি ভাইরাস হিসেবে আরো ৪০ বছর আমাদের সঙ্গে ছিল।

দমন: ২০০৩ সালের সার্স ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের জন্য হয়নি। এটি হয়েছিল করোনাভাইরাসের কারণে। যা কিনা এবারের ভাইরাসের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। সার্সকে থামানোর চেষ্টায় ধন্যবাদ দিতে হয় আক্রমণাত্মক দমনের মহামারী কৌশলকে। যেমন আক্রান্তদের আইসোলেট করা, সংস্পর্শে আসাদের কোয়ারেন্টিন করা এবং সামাজিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা। এর বাজে প্রাদুর্ভাব সীমাবদ্ধ ছিল হংকং ও টরন্টোর মতো কয়েকটি নির্দিষ্ট জায়গায়। এর দমন সম্ভব হয়েছিল কারণ আক্রান্ত খুব দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ত। প্রায় সব আক্রান্তের মারাত্মক উপসর্গ দেখা দিত। এপিডেমিওলজিস্ট বেঞ্জামিন কাওলিং বলেন, সার্সের ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা যাওয়ার এক সপ্তাহ পর আক্রান্ত খুব বেশি সংক্রামক থাকত না। ফলে তারা চিহ্নিত হওয়ার পর আইসোলেশনে পাঠানো হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত।

ভ্যাকসিনের শক্তি: যখন একটি নতুন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যেমন সোয়াইন ফ্লু এসেছিল তখন সেটি ছিল একটি সতর্কবার্তা। কারণ সেটি একেবারে নতুন এইচ১এন১ এবং এটি ১৯১৮ সালের ভাইরাসের মতো খুনে ছিল। কাউলিং বলেন, সোয়াইন ফ্লু যতটা ভাবা হচ্ছিল তার চেয়ে কম মারাত্মক ছিল। ভাইরোলজিস্ট ফ্লোরিয়ান ক্রামারের মতে, আমরা ভাগ্যবান কারণ এর রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা অতটা উচ্চ ছিল না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ছয় মাস পর এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছিল।

হাম ও বসন্তের ভ্যাকসিনগুলো দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধক্ষমতা দেয়। যেখানে ফ্লুর ভ্যাকসিন কয়েক বছর পর্যন্ত রক্ষা করতে পরে। ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন আবার দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে রক্ষাকবচ ভেঙে ফেলতে পারে। যে কারণে প্রতি বছর ভ্যাকসিন আপডেট করতে হয়। কিন্তু মহামারীর সময় স্বল্পমেয়াদি ভ্যাকসিনও আশীর্বাদ। ২০০৯ সালে ভ্যাকসিন দ্বিতীয় ঝড় সামাল দিতে পেরেছিল।

বর্তমান অবস্থা

কভিড-১৯ কীভাবে এগাবে তা কল্পনা করা যায়। কিন্তু এর শেষ হতে পারে অতীতের সব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার যোগসাজশে। সামাজিক নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রেখে, নতুন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এনে এবং ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে। কতদিন সামাজিক বিধি আরোপ থাকবে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানুষ কীভাবে তা মেনে চলছে সেটি এবং সরকার কীভাবে সাড়া দিচ্ছে তার ওপর। এই ভাইরাস থেকে মুক্ত হতে ৫০ শতাংশ ভূমিকা হবে সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং বাকি ৫০ শতাংশ হবে বৈজ্ঞানিক।

 মূল লেখক: লাইডিয়া ডেনওর্থ। সূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান থেকে আংশিক অনূদিত।

Previous articleএকাকীত্ব এবং আইসোলেশন বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য মহামারীর অন্য এক নাম
Next articleপায়ের আঙুলে র‍্যাশ কি করোনার নতুন উপসর্গ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here