একাকীত্ব এবং আইসোলেশন বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য মহামারীর অন্য এক নাম

একাকীত্ব এবং আইসোলেশন বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য মহামারীর অন্য এক নাম
একাকীত্ব এবং আইসোলেশন বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য মহামারীর অন্য এক নাম

সারা বিশ্ব আজ করোনা নিয়ে অনেক বেশী আতঙ্কিত এবং ঘরে থেকে সবাই চেষ্টা করছে এই ভাইরাস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে। তবে এই সামাজিক দূরত্ব বয়স্কদের জন্য হয়ে উঠতে পারে আরেক মহামারী।
অন্যান্যদের তুলনায় বয়স্ক ব্যক্তিদের স্বাভাবিকভাবেই অধিক শারীরিক ও মানসিক যত্নের প্রয়োজন হয়। সারা বিশ্বে যখন কোভিড-১৯ এর তাণ্ডবলীলা চলছে, এই সময়ে বয়স্কদের প্রতি আরও বেশী সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং এই পরিবর্তিত সময়ে তারা যেন শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
কোভিড-১৯ সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাস খুব দ্রুত মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের উপর এর প্রভাব সব থেকে বেশী। এ কারণে অন্যান্যদের সাথে বিশেষভাবে বয়স্কদের এই সময়ে অন্যান্যদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে এবং ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে,এই ধরণের  সামাজিক দূরত্ব ওবং আইসোলেশন বয়স্কদের জন্য একটা বড় মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়াও, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ইমিউনিটি বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে কম থাকায় এটি নিয়ে তাদের মাঝে অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকে এবং সব মিলিয়ে এসব কারণে সারা পৃথিবীব্যাপী বয়স্কদের মধ্যে করোনা মৃত্যুর হার সব থেকে বেশী।
একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ২০০৩ সালে সারস সংক্রমণের সময় অনেক বয়স্ক ব্যক্তিরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। এর কারণ হল অতিরিক্ত মানসিক চাপ যা ঐ সময়ে বয়স্কদের উপর ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। করোনা ভাইরাসও একইভাবে সবার মধ্যে ভীতি সঞ্চার করছে এবং বয়স্কদের উপর এর প্রভাব সব থেকে বেশী। আমরা জানি যে, করোনা ভাইরাস মোকাবেলার একমাত্র কার্যকরী উপায় হল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। দীর্ঘ দিন ধরে সমস্ত পৃথিবীতে মানুষ তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম থেকে আলাদা হয়ে গৃহবন্দী জীবন যাপন করছে। স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতি সবার মধ্যে হতাশা, উদ্বিগ্নতা, বিষণ্ণতা, ভয় সহ বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করছে। একজন বয়স্ক মানুষ স্বভাবতই এই অবস্থায় সব থেকে বেশী মানসিক পীড়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে সারাক্ষণ ঘরে বন্দী হয়ে থাকার ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
বয়স্ক মানুষদের মানসিক অবস্থা বুঝে যেমন তাদেরকে এই সময়ে মানসিক শক্তি প্রদান করতে হবে, তেমনি পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিরাই কিন্তু আমাদের মানসিক জোর বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আইসোলেশনের সময়ে আমাদের একে অপরের যত্ন নিতে হবে এবং অবশ্যই এটা মাথায় রাখতে হবে যে, আইসোলেশনের ফলে উদ্ভূত এই একাকীত্ব যেন বয়স্ক ব্যক্তিদের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। তারা যেন কোনভাবেই এই সময়ে একাকী হয়ে না পড়েন এবং তারা যেন সবার কাছ থেকে সেই সহানুভূতি পান যা তাদেরকে স্বাভাবিক সময়ের অনুভূতি প্রদান করবে। সব ধরণের পারিবারিক আড্ডা ও সামাজিক আলাপ আলোচনায় আমরা যেন তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করি। তারা যেন কোন প্রকার শারীরিক ও মানসিক তুচ্ছ তাচ্ছিল্লের শিকার না হন।
শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার দিক দিয়ে আমাদের সমাজের বয়স্করা আমাদের থেকে বেশ দুর্বল। করোনা সংক্রমণের এই সময়ে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও এ কারণে অনেকটা বেশী। তাই করোনার বিষয়ে নিজেদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি এই অস্বাভাবিক ও পরিবর্তিত অবস্থা বয়স্কদেরকে যেন শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে আরও বেশী ঝুঁকির সম্মুখীন না করে সেদিকে যত্নবান হতে হবে।
সূত্র: https://www.psychologytoday.com/us/blog/hope-resilience/202004/loneliness-isolation-are-another-epidemic-older-adults
অনুবাদ: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

Previous articleকোভিড ১৯: মানসিক চাপ মোকাবিলার কৌশল
Next articleযেভাবে শেষ হতে পারে কভিড-১৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here