শিশুদের ভয় আর আতঙ্ক
সন্তানের কাছে মা-বাবার ছাড়াছাড়ি মেনে নেয়া অনেক কষ্টকর৷ বিশেষ করে সন্তানের বয়স যদি কম থাকে৷ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, হঠাৎ করে একজনের সাথে, অর্থাৎ মা বা বাবার সাথে থাকতে হয় বলে শতকরা ৩৭ থেকে ৪৮ ভাগ শিশু-কিশোরের মনেই অন্যজনকে হারানোর ভয় থাকে৷
যে কষ্ট তারা বোঝাতে পারে না
যে কোনো সন্তানের কাছে মা-বাবাই তার সবচেয়ে কাছের, ভালোবাসার মানুষ৷ আর তাদের মধ্যেই যখন বোঝাপড়া না হয়, তখন শিশুরা হয়ে পড়ে অসহায়৷ যা থেকে অনেক শিশু বা কিশোর-কিশোরী প্রচণ্ড আঘাত পায় আর সেই আঘাতের ক্ষত হয়তো তাকে সারা জীবনই কষ্ট দেয়৷ এমনটাই মনে করেন মিউনিখের মনোচিকিৎসক বেনেডিক্ট ক্লাউকে৷
‘আমাকে কেউ ভালোবাসে না, আমি মূল্যহীন’
মা-বাবার ছাড়াছাড়ির মনোকষ্টের কথা শিশুরা সহজে বোঝাতে পারে না৷ তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, পড়াশোনায় মনোযোগ না থাকা বা অকারণে হঠাৎ করে রেগে যাওয়া – এ সবের মধ্য দিয়েই শিশুদের কষ্টের প্রকাশ ঘটে৷ ওদের তখন মনে হয়, ‘‘আমার কেউ নেই৷ আমাকে কেউ ভালোবাসে না৷ আমি মূল্যহীন৷’’ ওরা ভাবে, ওদের যদি কেউ ভালোবাসে, তাহলে ভালোবাসার দু’জন মানুষের মধ্যে একজন তাকে ছেড়ে যাবে কেন?
দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্ণতা
ডিভোর্স বা ছাড়াছাড়ি যেমন মা-বাবার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ, তেমনি সন্তানের জন্যও৷ সমীক্ষায় জানা গেছে, পরিবারকে নতুন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে মা এবং বাবাকেই বড় ভূমিকা নিতে হবে৷ সন্তানের সাথে কথা বলার জন্য যে কোনো পরিস্থিতেই পিতা-মাতাকে প্রস্তুত থাকতে হবে৷ তাছাড়া সন্তানের কাছে একে অপরকে দোষারোপ করাও উচিত নয়, কারণ, এই জটিল ব্যাপারে বাবা বা মায়ের পক্ষ নিতে গিয়ে সন্তানকে যেন বিচারকের ভূমিকা না নিতে হয়৷
মা-বাবা যা করবেন
যেসব দম্পতির ছাড়াছাড়ি হয়েছে তাঁদের প্রতি বেনেডিক্ট ক্লাউকের পরামর্শ, ‘‘সন্তান যার কাছেই থাকুক না কেন, ওকে এমন একটা অনুভূতি বা ধারণা দিন যেন ও মনে করে, আপনারা আলাদা থাকলেও ওকে দু’জনই সমান ভালোবাসেন, কারণ, শিশুর জন্য মানবিক সম্পর্কের জায়গাগুলো বেশ জটিল৷ তাই যতটা সম্ভব ওর সাথে সময় কাটান৷ ‘তোমাকে ভালোবাসি’ বলতে ভুলবেন না৷ জানিয়ে দিন, ওর যে কোনো সমস্যায় আপনারা ওর সাথে আছেন এবং থাকবেন৷’’