মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন হলে আত্মহত্যা প্রতিরোধ হবে-মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী

0
13

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমেই আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। তিনি বলেন, দেশ এগোচ্ছে, বদলাচ্ছে সংস্কৃতি ও আমাদের জীবনধারা। আর এই নিয়ে বাড়ছে মানসিক জটিলতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে গণ্য করার আহ্বান জানিয়েছেন। বর্তমান সরকার মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ও মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির অধিকার বা সুযোগের সমতা বিধানে বদ্ধপরিকর।
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে ১০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সিরডাপ মিলনায়তনে ‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও আত্মহত্যা প্রতিরোধ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার। সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক সহিদ আকতার হুসাইন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক ড আবুল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারপার্সন নাজমা খাতুন, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন প্রমুখ।
প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, সরকার মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এছাড়া ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন সংশোধন এবং ২০১৮ সালে মানসিক স্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, যে কোন সমস্যা হলে তা দূর করার চেয়ে আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এ কাজে সবার সহযোগিতা চান প্রতিমন্ত্রী।
সেমিনারে জানানো হয়, বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিবছর ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ ও বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হচ্ছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক সচিব কামরুন নাহার বলেন, কোন দেশের মানুষ কতটা সক্রিয় ও উৎপাদনশীল হবে, তা নির্ভর করে তাদের শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার সুষ্ঠু সমন্বয়ের ওপর। বর্তমান সরকার আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। মানসিক স্বাস্থ্য ও সেবা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা পরিবর্তনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
ড. আবুল হোসেন বলেন, শারীরিক শান্তির মতো মানসিক স্বাস্থ্যেরও পরিচর্যা প্রযোজন। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে, বিশেষ করে নারী-শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয়, বিভাগীয় এমনকি জেলা পর্যায়ে ন্যাশনাল-রিজিওনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার স্থাপন করেছে।
বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বলেন, মানসিক চাপ, প্রতিযোগিতামূলক আচরণ, যথাযথ বিনোদনের অভাব, পারিবারিক অশান্তি ইত্যাদি মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে যেমন বাধা হিসেবে কাজ করছে, ঠিক তেমনি বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সৃষ্টি ও আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
সেমিনারে অন্য বক্তারা বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আত্মহত্যার পেছনে একটি নয় বরং একাধিক কারণ থাকে। তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে সর্বস্তরের উদ্যোগ, সমন্বয় ও সহযোগিতা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য হলো শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক পর্যায়ে সামগ্রিক ও পূর্ণাঙ্গ সুস্থতা। কেবল কোন রোগের অনুপস্থিতি নয় ও মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে একটি সুস্থতার অবস্থা যেখানে কোন ব্যক্তি তার সামর্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকেন, দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক চাপকে মোকাবেলা করতে পারেন, দৈনন্দিন কাজ সফলভাবে করতে এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনে সক্ষম হন। ভিন্নভাবে বলা যায় মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে আবেগীয় এবং মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতা যা কিনা একজন মানুষকে স্বাভাবিকভাবে চিন্তা, অনুভব এবং আচরণ করতে সক্ষম করে।

Previous articleসিলেটে মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত
Next articleকারাগারে মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here