বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য এখনো অবহেলিত এক বিষয়। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো সমস্যা নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা করলে তাকে মানসিক রোগী হিসেবে চিহ্নিত করে বসে থাকেন অনেকে। যার ফলে ঘরে আটকে রেখে সমাধানের উপায় খোঁজেন। আবার অনেকে মনোরোগ চিকিৎসক এর দ্বারস্থ না হয়ে শুরুতে রিহ্যাব সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন।
কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকের রিহ্যাবের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রিহ্যাবে মানসিক সমস্যা নিয়ে গেলে তারা দুর্ব্যবহার, মারপিট এবং শারীরিক নির্যাতন করাটা স্বাভাবিক বলেই ধরে নিয়েছে। কিন্তু আসলে কী এমন ঘটে। মনোরোগ বিদ্যার চিকিৎসক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব বললেন ভিন্ন কথা। তার মতে, তথাকথিত রিহ্যাব সেন্টারগুলোতে ব্যবসার কথা ভেবে গড়া। প্রকৃতপক্ষে এসব সঠিক মনোরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র নয়। যেগুলো স্বীকৃত, সেসবে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সঠিক চিকিৎসাই করা হয়।
মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে ট্রিটমেন্ট নেওয়া নাম প্রকাশে এক অনিচ্ছুক রোগী তার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমার দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেয়ার পর আমি প্রচণ্ড পরিমাণে মানসিক সঙ্কটে পড়ি। আমার পরিবার ভালোর জন্য আমাকে একটা রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওরা মানসিক অবস্থার উন্নতির চেয়েও আঘাতের মাধ্যমে সুস্থ করাটা উপায় হিসেবে দেখে। যা মানসিকভাবে আমাকে আরও ভেঙ্গে দিয়েছিল। আমি সেখানে যে কয়দিন ছিলাম রাতে আমার ঘুম হতো না। কোথায় আছি, কেন আছি কিছু বুঝতে পারতাম না। ধরেই নেয়া হয় যে মানসিক রোগী হলে গায়ে হাত তোলা যায়।’
গত বছর এমনই এক মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রের একটি ভিডিও সামনে চলে আসে। যেখানে দেখা যায়, এক পুলিশ কর্মকর্তাকে চেপে ধরে এবং মারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছিল। শেষ পর্যন্ত সেই ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করেন। এরপর আবার আলোচনায় আসে মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে আঘাতের ঘটনা। যার ফলে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসা নিয়ে একও প্রকার আতঙ্ক কাজ করছে রোগীদের মধ্যে।
এক ভুক্তভোগী রোগী মনের খবরকে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে জানিয়েছেন, ‘আমাদের দেশে সিডেটিভ দিয়ে অথবা হিপনোটাইজিং কোনো একটা ড্রাগ দিয়ে রোগীকে সারাদিন বিছানায় ফেলে রাখাটাই হচ্ছে চিকিৎসা। আমিও সেই সময় পার করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে আমি দেশের বাইরে গিয়ে নিজের চিকিৎসা করি। তারা কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমেই আমাকে অর্ধেকটা সারিয়ে তুলেছিল।’
বাংলাদেশে বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মনোরোগবিদরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন। মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব ‘মনের খবর’ নামক ম্যাগাজিন নিয়ে এসেছেন সচেতনতা বৃদ্ধিতে। এছাড়াও সার্ভিস সেন্টার খুলতে যাচ্ছেন তিনি। এই চিকিৎসকের মতে আমাদের দেশে রিহ্যাব সেন্টারের নামে যেগুলোতে কাউকে আঘাত করা হয় এসব নিয়মের বাহিরে চলছে। প্রকৃতপক্ষে কোনো মনোরোগ চিকিৎসা কেন্দ্রে কাউকে আঘাত করা হয়ে থাকে না।
ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, ‘মানুষজনের প্রচলিত এই ধারণা সত্য নয়। কিছু কিছু জায়গায় হচ্ছে না সেটা আমি বলবো না। তবে সেগুলো সরকার কর্তৃক স্বীকৃত নয়। বরং অবৈধ ভাবে চলছে সেগুলো। প্রকৃত মনোরোগ চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক থাকার ফলে এমন কোনো ঘটনা ঘটার সুযোগই থাকে না। আমাদের বরং সেসব তথাকথিত রিহ্যাব সেন্টারের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। তাদের এমন অযাচিত কার্যক্রম বন্ধ করে প্রকৃত মনোরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র এবং মনোরোগ চিকিৎসকদের কাছে রোগীরা যাতে চিকিৎসা নিতে পারে সেই বিষয়ে সচেতন করতে হবে।’
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে