‘আরে বইলো না, আমি সেদিন গাঁজা খেয়ে পড়ালেখা করছি, এত ভালো পড়াশোনা হইছে।’
‘ইয়াবা খেয়ে যদি সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স করো, অনেক সময় ধরে করতে পারবে, অসাধারণ অনুভূতি।’
‘এখনকার সময় গাঁজা, অ্যালকোহল না খেলে কেউ পাত্তাই দেয় না।’
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এখনকার সময় মাদকাসক্তি যেন ট্রেন্ড হয়ে গেছে। বর্তমান তরুণ সমাজের কাছে গাঁজা, ইয়াবা বা অ্যালকোহল যেন যেন উৎসব পালনের উপলক্ষ। কিন্তু এই মাদকগুলো আমাদের শারীরিক এবং মানসিক জীবনে অনেক ক্ষতি করে থাকে। এটাই আমরা বুঝতে চাই না। আমরা বরং এর সাময়িক ভালোলাগা নিয়েই পুলকিত থাকি।
এই বিষয় নিয়ে ‘মনের খবর’ কথা বলেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব এর সঙ্গে। তাঁর কাছে জানতে চাই, মাদক নিতে তরুণরা কেন এত আগ্রহী।
এই মনোরোগ চিকিৎসকের মতে, ‘কফি, গাঁজা, অ্যালকোহল এসব খেয়ে যদি কেউ পড়াশোনা করে তাহলে সে সাময়িক সময়ের জন্য মনোযোগ পাবে। অর্থাৎ, যতক্ষণ সে ওই নেশার মধ্যে আচ্ছন্ন থাকবে ততক্ষণ সে পড়াশোনার মধ্যে ডুবে থাকবে। কিন্তু যখনই নেশা কাটবে তখনই বিষয়টা আর নিজের মধ্যে থাকবে না।’
কেবল তরুণরা নয় আমরা দেখেছি শিল্পীসমাজের অনেকেও গাঁজা খেয়ে থাকে। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই মনোরোগ চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা দেখি শিল্পীরা গাঁজায় আসক্ত হয়। কারণ তারা যখন এটি গ্রহণ করে, তখন তারা হাই থাকে। আর ওই সময় তারা নিজেদের চিন্তাগুলোকে ক্রিয়েটিভ মুডে নিতে চায়। যার ফলে ওই সময় তাদের মস্তিষ্ক সেভাবেই কাজ করে। যার কারণে তাদের লেখালেখি বা ক্রিয়েটিভ কাজগুলো গাঁজা খেয়ে করে থাকে। তবে এটি নিঃসন্দেহে খারাপ অভ্যাস।’
কিন্তু কেন মানুষের মধ্যে গাঁজা বা অন্য মাদকগুলো এমন অনুভূতির সৃষ্টি করে? এই বিষয়ে অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, ‘গাঁজা মানুষের মধ্যে প্রি মরফিড মুড ক্রিয়েট করে। এর ফলে কেউ যে মুড পেতে চায়, সেটা পেতে পারে। আবার ইয়াবা আমাদের শরীরের স্নায়ু উত্তেজিত করে থাকে। ফলে মন খারাপ থাকলেও ইয়াবা খেলে মন ভালো হয়।’
এদিকে যারা অ্যালকোহল আসক্ত তাদের মানসিক অবস্থা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই মনোরোগ চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা দেখি যারা পারফর্মার অর্থাৎ, আর্টিস্ট তারা অ্যালকোহল গ্রহণ করে। সেটার পেছনেও নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। আসলে অ্যালকোহল পান করে পারফরম্যান্স উদ্বিগ্নতা কাটানোর জন্য। অনেকে আছে পারফর্মের আগে মানসিকভাবে দ্বিধাদ্বন্দে ভোগে। এই দ্বিধাদ্বন্দে কাটানোর জন্য তারা অ্যালকোহল গ্রহণ করে। আসলে পারফর্মের ঠিক আগের মুহূর্তে অনেকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। সেটা কাটিয়ে সঠিকভাবে পারফর্ম করার জন্য তারা অ্যালকোহল নেয়। যা তাদের এই উদ্বিগ্নতা সরিয়ে পারফর্মে মনোযোগ করার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু এরফলে তারা নিজেদের শরীরের সর্বোচ্চ ক্ষতি করে ফেলে।’
আমরা অনেকে গবেষণায় দেখি গাঁজা শরীরের কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু মানসিকভাবে গাঁজা অনেক অপকারী। আবার ইয়াবা, অ্যালকোহল এসব শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক ক্ষতি করে থাকে। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘গাঁজা মানসিকভাবে যে কারো বিরাট ক্ষতি করে। এটা আমরা অনেকেই বুঝি না। গাঁজা খেলে অনেকের পাগলামি বেড়ে যায়, সন্দেহপ্রবণতা বাড়ে, দৃষ্টি ভ্রম হয়, মানসিক ভ্রম হয়। অনেকে তো মানুষের ক্ষতি করে ফেলে। এছাড়াও প্যানিক ডিজঅর্ডার অর্থাৎ বুক ধড়ফড় করা এসব বাড়তে পারে। সবচেয়ে বড় যে সমস্যা হয়, সেক্সুয়াল ডিজফাংশন ঘটে। তাদের যৌন ক্ষমতা খুব দ্রুত হ্রাস পায়। এছাড়াও গাঁজা খেলে মানুষ স্বাভাবিক অনেক বিষয় সহ্য করতে পারে না। তাদের অন্তর্বতীকালীন সময়ে কিছু ভালো লাগে না। আবার অ্যালকোহল ও ইয়াবা খেলে খুব দ্রুতই শরীর ভেঙ্গে যায়।’
লিখেছেন- কামরুল ইসলাম ইমন
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে