মাদক মানেই কেমিকেল

0
66

মাদক মানেই  কেমিকেল। আর সেই কেমিকেল শরীরে ঢুকার পর শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব ফেলে। নাক, মুখ, চামড়া বা ইনজেকশন যেকোনোভাবে শরীরে ঢুকার পর সেটি রক্তে মিশে যায়। সেই রক্ত শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রবাহিত হয়।

পাকস্থলি, লিভার, কিডনি, ফুসফুস, হার্টসহ শরীরের সব কটি প্রয়োজনীয় ও অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গের সাথে মাদক কার্যক্রম সরাসরি জড়িত। কিন্তু মাদক তার মাদকতা তৈরির আসল কাজটি করে, সব জায়গায় ঘুরেফিরে শেষ পর্যন্ত যখন মস্তিস্কে গিয়ে হাজির হয়। অর্থাৎ মস্তিষ্কের এর ভেতর রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হবার ফলেই মাদকতা তৈরি হয়। মস্তিষ্ক আবার তার নিজস্ব কেমিকেল নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মাধ্যমে কিংবা হরমোন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে এর প্রতিক্রিয়া পাঠায়।

দীর্ঘদিন যাবৎ এভাবে, বাইরে থেকে কোনো একটি মাদক বস্তু শরীরে ঢুকে যখন মস্তিষ্কের নিজস্ব ও প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে কব্জা করে নেয়। তখন মস্তিষ্ক তার নিজস্ব বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির ব্যাপারে একটু শিথিল হয়ে আসে। মস্তিষ্ক নিজস্ব পদ্ধতিতে কাজ করার বিষয়ে অনেকটা অলস হয়ে যায়। সে বাইরের থেকে পাওয়া কেমিকেলের উপরই বেশি ভরসা করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। মস্তিষ্কের স্বয়ংক্রিয় অংশগুলোও নির্জীব হতে থাকে।

মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরনের স্থায়ী ও অস্থায়ী বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে যায়। শুধ আনন্দ নয়, শেষ পর্যন্ত সবধরনের ক্ষতিরও কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বা দাঁড়ায়। মস্তিষ্কের যে অংশ (প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স) যুক্তি বা বিভিন্ন হিসেব নিকেশের কাজে ব্যবহৃত হয়, কম বয়সীদের সে অংশ পূর্ণভাবে পরিণত হয় না। বরং তাদের আবেগ নির্ভর অংশই (ব্রেইনের এমাগডেলা) বেশি একটিভ থাকে। সুতরাং যুক্তি দিয়ে তারা হয়তো সব সময় বিচার করতে পারে না।

মাদকাসক্তি শুধু মস্তিষ্কই নয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত আরো অনেক ক্ষতিই করতে পারে।

একজন মানুষ যখন নেশা করতে করতে তার নিজের বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে শুধু নেশার টানের পিছনেই ছুটতে হয়, তখন তার পরিণতি কী হতে পারে বর্ণনার প্রয়োজন নেই। ব্যক্তি হিসেবে মানুষটির যত ধরনের সম্পৃক্ততা বা সংশ্লিষ্টতা আছে সব জায়গাই দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভয়াবহ বিষয় হলো, সেসবের বেশিরভাগ সম্পর্কে সে লোকটির কোনো অনুভূতি কাজ করে না। বরং সবকিছুকেই গ্রাস করে নেয় নেশার প্রয়োজনীয়তা।

ছাত্র হিসেবে, সন্তান হিসেবে, ভাইবোন হিসেবে, স্বামী হিসেবে, বাবা কিংবা মা হিসেবে, অফিস কিংবা ব্যবসার কর্মী হিসেবে, সামাজিক মানুষ হিসেবে কোথাও মানুষটির তার অবস্থান ধরে রাখতে পারেনা।

নেশার উপাদান জোগাড় করতে গিয়ে মিথ্যা কথা বলা, টাকা সরানো বা চুরি করা, জিনিসপত্র বিক্রি করে দেয়া, মানুষের সাথে বিভিন্ন প্রতারণা করা, ছিনতাই থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ে। অনেকে এমনকি ঘর-বাড়ি ছেড়ে দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। কোথায় ঘুম কোথায় খাওয়া তার পর্যন্ত সঠিক কোনো ঠিক-ঠিকানা থাকেনা।

ঘরে বাইরে সবখানে এমন হাজার ধরনের বিশৃঙ্খলা, যখন তখন ক্ষেপে যাওয়া, ঘুম কমে যাওয়া বা অসময়ে ঘুমিয়ে থাকা, যৌন সমস্যা, মানুষের সাথে সবধরনের সম্পর্কের অবনতি নেশার খুব সাধারণ পরিণতি। মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের চামড়া পর্যন্ত সবখানেই নেশা ছোবল দিতে পারে। স্ট্রোক, হার্ট-অ্যাটাক, লিভার, কিডনি, ফুসফুস সব অঙ্গ ফেইল পর্যন্ত করতে পারে।

নেশার সাথে মানসিক স্বাস্থ্য সরাসরি জড়িত, সুতুরাং মানসিক বিষয়ক যেকোনো ধরনের ক্ষতিই নেশার কারণে হতে পারে। চাকরি বা কর্মহীনতা, নেশার পিছনে অর্থ জোগাড়, শারিরীক চিকিৎসা বা বারবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়াসহ প্রত্যেকটি পদে পদে মানুষকে অর্থনৈতিক পঙ্গুত্বও বরণ করতে হয়।

-মনের খবর ডেস্ক

Previous articleমানসিক রোগের বয়স লাগে না
Next articleমাদকাসক্তি ও আসক্তি – অভ্যাস নাকি প্রবল ইচ্ছা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here