মহামারী এবং নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য

0
101
মহামারী এবং নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য
মহামারী অন্যান্যদের মত নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যকেও চরমভাবে প্রভাবিত করেছে। সমাজ-সামাজিকতা থেকে দূরে গৃহ বন্দী হয়ে দুশ্চিন্তা, হতাশা এবং বিষণ্ণতায় তাদের জীবনও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

করোনার ফলে আমরা সবাই দীর্ঘ দিন ধরে ঘরের বাইরে যেতে পারছিনা এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন ও করতে পারছিনা। কর্ম ক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকা মানুষ যেমন ঘরে থেকে হাঁসফাঁশ করছেন তেমনি ঘরে থেকে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নারীদেরকেও বাইরের জীবন থেকে এমন দীর্ঘ দিনের এই বিচ্ছিন্নতা এক বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে।। এর ফলে বিভিন্ন ধরণের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন, মানসিকভাবে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি, অবসাদ, হতাশা, একাকীত্ব এবং আরও বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দিয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে নেওয়া সাক্ষাৎকারে অধিকাংশ নারীরা উল্লেখ করেছেন কোয়ারেন্টাইন তাদের মানসিকভাবে আরও দুর্বল, বিষণ্ণ এবং একাকী করে দিয়েছে। সারা দিন ঘরে থেকে থেকে অনেকের ওজন বেড়ে গেছে। এতে মানসিকভাবে অনেকেই ভেঙ্গে পড়েছেন। অনেকের প্রাত্যহিক সকাল-সন্ধ্যা বাইরে হাঁটার অভ্যাস ত্যাগ করতে হয়েছে। কর্মক্ষেত্রের প্রাণ চঞ্চল সময় এবং বন্ধুদের সাথে সেই প্রাণখোলা আড্ডা সব কিছুই জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় মানসিক সন্তুষ্টি বজায় রাখা খুব কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং। এসব কারণে অধিকাংশ নারীদের মাঝে চরম মানসিক অশান্তি কাজ করছে যা বিভিন্ন শারীরিক জটিলতারও সৃষ্টি করছে।

সময় কাটাতে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভরতা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। কম বয়সী মেয়েদের মধ্যে এটি হয়ে উঠেছে অভিভাবকদের আরেক চিন্তার বিষয়। সামাজিক মেলামেশা থেকে দূরে থাকায় এবং ফোন বা টেলিভিশন দেখায় অধিক সময় অতিবাহিত করায় অনেকের মাঝেই বিভিন্ন মানসিক সমস্যা যেমন খিটখিটে মেজাজ, অকারণ রাগ, ক্ষুধা মন্দা, অনিদ্রা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিশোরীদের মানসিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ ও ঝুঁকির মাঝে রয়েছে। অভিভাবকেরা বিভিন্ন ভাবে কিশোরীদের মানসিক বিকাশ যেন বাঁধাগ্রস্ত না হয় সেই প্রয়াস করছে। তাদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনার প্রচেষ্টা করছে। কিন্তু করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে মানসিক চাপ কাটিয়ে কিশোরীদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ  নিশ্চিত করা যেন এক অসম্ভব কঠিন কাজ হয়ে উঠেছে।

স্বাভাবিকভাবেই নারীরা পুরুষের তুলনায় অধিক সামাজিক ও মানসিকভাবে বেশী কোমল ও সহানুভূতিশীল হয়ে থাকে। অন্যান্যদের সাথে তাদের সামাজিক সম্পর্কই তাদের মানসিক ভাবে দৃঢ় থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির এক অন্যতম প্রধান উৎস। আর করোনা কালে এসব সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্নতা তাদের ধৈর্য, মানসিক স্থিতিশীলতা এবং উৎসাহের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলায় এটি সরাসরি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন করছে।

এছাড়াও পরিবারের সাথে অধিক সময় অতিবাহিত করায় অভিভাবকেরা অনেক সময় তাদের নিজস্ব মতামত তাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। তাদের ভালো রাখার প্রচেষ্টায় অনেক সময় তাদের পছন্দের কাজে বাধা দিচ্ছে। এতে করে কিশোর বয়সীদের মধ্যে তাদের অভিভাবকদের প্রতি নেতিবাচক মানসিকতা ধীরে ধীরে আরও বাড়ছে। উভয়ের মাঝে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে এতো দীর্ঘ লকডাউন ঘরে থেকে একসাথে অতিবাহিত করা আরও বেশি কঠিন হয়ে উঠছে। আর অন্য কোন উপায় না থাকায় এই পরিস্থিতি মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে তুলছে।

এসব বিবেচনা করে বলা যায় নারীদের মধ্যে এইযে বাড়তি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এগুলো নিবারণ করোনা মোকাবেলার মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকদের এই সময়ে তাদের কিশোরী মেয়েদের কাছে দিক নির্দেশক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানকারীর ভুমিকা পালন করতে হবে। আর এই কাজের জন্য প্রথমেই অর্জন করতে হবে তাদের সন্তানদের ভরসা এবং মানসিক গ্রহণযোগ্যতা। করোনায় তাদের একাকীত্ব দূর করে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে কোন প্রকার অতিরিক্ত আর কোন মানসিক চাপ প্রয়োগ না করে তাদের সাথে বন্ধু সুলভ আচরণের মাধ্যমে তাদের মানসিক সমস্যাগুলো দূর করার প্রয়াস করতে হবে।

করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক

 

Previous articleআমি কি বিয়ে করতে পারবো?
Next articleনারীর যৌন সমস্যা ও কিছু কথা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here