কোভিড-১৯ মহামারীটি এমন একটি অভিজ্ঞতা যা আমাদের জীবদ্দশায় নজিরবিহীন। এর রহস্যময়তা, সম্ভাব্য বিপদজনকতা এবং টিকে থাকার ক্ষমতার কারণে এটি সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলছে। আমরা জানি না এটি কতটা খারাপ হতে চলেছে বা কত দিন স্থায়ী হতে চলেছে। আমাদের হারিকেন এবং ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ রয়েছে তবে সেগুলি সময় এবং সুযোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে এই বিশ্বব্যাপী মহামারী এমন এক জিনিস যার কারণে আমাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ এবং ভয় দেখা দিচ্ছে। তাই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের এই সময় এগিয়ে আসা দরকার।
এই মহামারী দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা এবং প্রয়োজনের ভিত্তিতে বিভিন্ন দলে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমে যারা অনেক চিন্তায় আছেন তাদের একটি দলের অন্তভূক্ত করতে হবে। এরা হলো প্রাক-মানসিক ব্যাধিগ্রস্থ ব্যক্তিরা যারা এ থেকে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন এবং নিজেকে রক্ষা করতে এবং প্রস্তুত করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এই জাতীয় ব্যক্তির জন্য, মানসিক স্বাস্থ্যের যে প্রাথমিক চিকিৎসাগুলো রয়েছে সেগুলো কার্যকর হওয়া উচিত । সঠিক দিকনির্দেশনা এবং তথ্যের উৎস প্রদানের মাধ্যমে , এই জাতীয় বেশিরভাগ লোকদের এই সঙ্কটজনিত মহামারীর সাথে সম্পর্কিত উদ্বেগ, দুঃশ্চিন্তা এবং ডিস্পোরিয়া কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হওয়া উচিত।
মজার বিষয় হচ্ছে, সিজোফ্রেনিয়া এবং অন্যান্য গুরুতর মানসিক অসুস্থতাজনিত লোকেরা এধরণের বিপর্যয়ের সময় মানসিক চাপ সংক্রান্ত প্রভাবগুলির ক্ষেত্রে কম ঝুঁকিতে আছেন বলে মনে হয়। তারপরে এমন ব্যক্তিরা আছেন যাঁরা মেজাজ, উদ্বেগ, মানসিক চাপ বা আবেগপ্রবণতার সাথে সম্পর্কিত মানসিক সমস্যায় আগে থেকেই ভুগছেন। এসময় তাদের উপসর্গগুলো বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তাদের চিকিৎসা পদ্ধতি ও বর্তমান পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তাবা যেসব ওষুধ ও মেডিটেশনের সাহায্য নিতেন সেগুলো বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে বা তাদের চিকিৎসক বা থেরাপিস্টের সাথে আরও ঘন ঘন যোগাযোগের প্রয়োজন হতে পারে।
যেহেতু এই মুহুর্তে ভ্রমণ এবং সরাসরি পরিদর্শন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, তাই এই রোগীদের সাথে কথা বলার জন্য ভার্চুয়াল যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা উচিত। এই জাতীয় পদ্ধতি দীর্ঘকাল ধরে রয়েছে তবে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয়নি; যা বর্তমান অবস্থায় ব্যবহার করা সময়োপযোগী। টেলিফোন, ফেসটাইম, স্কাইপ, ওয়েবেক্স, জুম এবং ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের অন্যান্য উপায় ব্যবহার করা সম্ভব যেহেতু এই মুহুর্তের জন্য বিল প্রদানের পদ্ধতিগুলি সহজ ও ঘরে বসেই সম্ভব হচ্ছে, তাই কোনও কারণ নেই যে ব্যক্তিরা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারীর সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হবে না।
ওষুধের অপব্যবহারও এই মহামারীর সময়ে মানসিক চাপের উপর ঝুঁকিপূর্ণ প্রভাব ফেলে। যাদের অতীতে দু:শ্চিন্তা ও উদ্বেগ কমানোর জন্য ওষুধের প্রয়োজন ছিল তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের দু:শ্চিন্তা ও উদ্বেগকে কমানোর উপায় হিসাবে পূর্বে ব্যবহৃত হয়ে থাকা ওষুধগুলো ব্যবহার করতে প্ররোচিত বা প্রলোভিত হবে। মজার বিষয় হচ্ছে, সিজোফ্রেনিয়া এবং অন্যান্য গুরুতর মানসিক অসুস্থতাজনিত লোকেরা এধরণের বিপর্যয়ের সময় মানসিক চাপ সংক্রান্ত প্রভাবগুলির ক্ষেত্রে কম ঝুঁকিতে আছেন বলে মনে হয়।তবে মহামারীর জন্য বিভ্রান্তি বা লক্ষণগুলো আরও বেড়ে যেতে পারে।
তবে কিছুটা বিস্ময়করভাবে বলা যায় যে গুরুতর মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই সংকটপূর্ণ সময়ে সাধারণ ব্যক্তিদের চেয়ে বেশি শান্তভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান। ফলস্বরূপ, লক্ষণগুলো বেড়ে যাওয়ার পরেও জরুরী কক্ষে ভর্তিচ্ছু রোগীদের সংখ্যা সম্ভবত স্বাভাবিকের চেয়ে খুব বেশি হবে না।
মূল লেখক: Jeffrey A. Lieberman সূত্র: https://www.medscape.com/viewarticle/927503
What's Hot
Previous Article‘জলপুতুল পাপেটস’ শিশুদের সঙ্গে ফেইসবুক লাইভে
Next Article কোয়ারেন্টাইন সময়ে বাসায় কী করবেন?


1 Comment
অনেক উপকারী তথ্য, ধন্যবাদ।